কিশোর বয়সে মাকসুদা নামে এক কিশোরীর প্রেমে পড়েছিলেন কৃষক কাদের...

যাবি তুই ভাই, যাবি মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়
ঘন কালো বন – মায়া মমতায় বেঁধেছে বনের বায়
গাছের ছায়ায় বনের লতায়
মোর শিশুকাল লুকায়েছে হায়
আজি সে-সব সরায়ে সরায়ে খুঁজিয়া লইবো তায়
যাবি তুই ভাই, যাবি মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়

পল্লীকবির এই লাইনগুলো বলে দেয় আব্দুল কাদেরের গল্প। কে এই আব্দুল কাদের? তিনি পেশায় একজন কৃষক। বয়স চল্লিশের কোঠায়। বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়ানের পাড়াখলাবলা গ্রামে। ৩৫ শতক জমিতে হাল চাষ করে এঁকেছেন অনন্য এক চিত্রকলা। তার শৈল্পিক বুননে ফসলের মাঠকে করে তুলেছেন দৃষ্টিনন্দন নকশী কাঁথার মাঠ। জমির দুই পাশে নৌকা ও জাতীয় ফুল শাপলা, চার কোণে হার্ট সাইন, এবং মধ্যখানে বিশাল ভালোবাসা চিহ্ন এঁকেছেন। অতঃপর সেই জমিতে সরিষা বীজ বপন করেন। সেই বীজ গজানোর পর পুরো ক্ষেত যেন পরিণত হয় ভিঞ্চির মোনালিসায়। হার্ট সাইন আঁকার পেছনে যে গল্পটি বলেছেন কাদের, তা রীতিমত সম্রাট শাহজাহানের তাজমহলের কথা মনে করিয়ে দেয়।

কিশোর বয়সে মাকসুদা নামে এক কিশোরীর প্রেমে পড়েছিলেন কৃষক কাদের। সেই প্রেম হয়েছিলো চিঠির মাধ্যমে। তার প্রেমিকা যখন তাকে চিঠি লিখতো, ঠিক একইভাবে চারপাশে চারটা হার্ট সাইন এবং মাঝখানে বড় একটা হার্ট এঁকে দিতো। ঠিক একইভাবে জমির বুকে সেই ভালোবাসা ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। পরবর্তীতে সেই প্রেমিকাকে বিয়ে করে সুখের ঘর বেঁধেছেন তিনি। সে সংসারে তিন ছেলেমেয়েও আছে। তার কাছে মাকসুদা কোনো অংশেই মমতাজের থেকে কম নয়। তিনি সম্রাট না হতে পারেন, তবে তার জীবনসঙ্গিনীকে রাণীর মতোই ভালোবাসেন। সামর্থ্য না থাকতে পারে, তবে সাধের কোনো কমতি নেই। তার ফসলের এই কারুকার্য দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছে শত শত মানুষ। এই ব্যাতিক্রমী উদ্যোগে প্রশংসা পাচ্ছেন সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে।

প্রিয়জনের মমতা ও ভালোবাসায় জীবনের প্রাপ্তি লুকিয়ে থাকে। অর্থবিত্ত, খ্যাতি যশ, ক্ষমতার প্রভাব মানুষকে সাময়িক তৃপ্তি দেয় ঠিকই, কিন্তু মনকে শান্ত করতে পারে না। সকল হতাশা, অপ্রাপ্তিকে পাশ কাঁটিয়ে মানুষ বেঁচে থাকতে শেখে এই অবাক ভালোবাসায়। মানুষ আর হিংস্র পশুর মধ্যে পার্থক্যটা এখানেই। একজন আব্দুল কাদের তার মননে সেটিই মনে করিয়ে দিলেন আবার। বেঁচে থাকুক এমন ভালোবাসার কৃষকেরা, বুনে চলুক ভালোবাসার বীজ এই নিষ্ঠুর ভুবনে।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা