বাবা দিবসের যে বিজ্ঞাপন হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছে...
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
বিজ্ঞাপনটার মধ্যে আলাদা করে যেটা চোখে পড়েছে, সেটা হচ্ছে সিম্পলিসিটি। বাবা দিবসের ট্রেডিশনাল বিজ্ঞাপনের মতো এখানে উপহারের বালাই নেই, চমকে দেয়ার চেষ্টা নেই। বাড়তি কোন উপাদান যুক্ত করতে চাননি নির্মাতারা, বাহুল্য আর চাকচিক্য এড়িয়ে গেছেন সন্তর্পণে...
বাবা দিবস উপলক্ষ্যে প্রতি বছরই ব্র্যান্ডগুলো নানা রকমের বিজ্ঞাপন বানায়, তবে সেসবের ভীড়ে মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো কাজ থাকে হাতে গোনা। এবার করোনার প্রকোপের কারণে বাবা দিবস নিয়ে অন্যবারের মতো বিজ্ঞাপনের হিড়িকও চোখে পড়েনি। তবে এর মধ্যেও টেলিকম অপারেটর রবির বানানো বাবা দিবসের একটা বিজ্ঞাপন দারুণ ভালো লাগার অনুভূতি এনে দিয়েছে, তৃপ্ত করেছে অনেকাংশে।
বাবা আর ছেলের ছোট্ট সংসার, মা দূর আকাশের তারা হয়ে হারিয়ে গেছেন অনেক আগেই। পড়াশোনার কারণে ছেলে থাকে ভার্সিটির হলে, বাবা বাসায় একা। ছেলের কাছে বাবা সবচেয়ে কাছের বন্ধু, বাবার কাছে তার ছেলেটা নির্ভরতার নাম। দুজনের যোগাযোগের মাধ্যম ফোনের ভিডিওকল। তাতে খুনসুটি লেগে থাকে নিয়মিত, কখনও রান্না নিয়ে, কখনও বাজার করা বা ঔষধ কেনা নিয়ে। হাতের কাছে থাকতে না পারলে কি হয়েছে, ভার্চুয়ালি সারাক্ষণই পাশাপাশি থাকা হয় দুজন দুজনের।
পৌনে তিন মিনিটে চমৎকার একটা গল্প বলার প্রচেষ্টা ছিল। দুই জেনারেশনের দুটো মানুষের মধ্যে চমৎকার একটা বন্ধুত্ব তৈরী হয়েছে সেখানে, তারা একে অপরের সুখ-দুঃখের সঙ্গী, নিত্য সহচর। বাবা রান্না করছেন, ফোনে ছেলে এটাসেটা নিয়ম বলে দিচ্ছে। বাবা ঘুড়ি ওড়াচ্ছেন ছাদে, একইসঙ্গে ছেলেকে ভিডিওকলেই নিজের ছোটবেলার গল্প বলছেন, সেই গল্পে সুতো কাটা ঘুড়ির সঙ্গে আসছে মায়ের হারিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গটাও। খানিকটা শূন্যতা আর বেদনার সুর কোথায় যেন বেজে ওঠে আচমকা, সেটা কেটে যেতেও সময় লাগে না।
এই বিজ্ঞাপনটার মধ্যে আলাদা করে যেটা চোখে পড়েছে, সেটা হচ্ছে সিম্পলিসিটি। বাবা দিবসের ট্রেডিশনাল বিজ্ঞাপনের মতো এখানে উপহারের বালাই নেই, চমকে দেয়ার চেষ্টা নেই। একদম সাধারণ আটপৌরে একটা গল্প বলা হয়েছে, আমাদের শহুরে সমাজে পিতা-পুত্রের সম্পর্কগুলো যেমন হয়, কিংবা যেমন হওয়া উচিত, ঠিক সেরকম। বাড়তি কোন উপাদান যুক্ত করতে চাননি নির্মাতারা, বাহুল্য আর চাকচিক্য এড়িয়ে গেছেন সন্তর্পণে।
করোনার এই দুঃসময়কে চমৎকারভাবে ব্লেন্ড করা হয়েছে গল্পে, সেখানে ঔষধ বা বাজারের হোম ডেলিভারির সঙ্গে, সতর্ক থাকার বার্তাটা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে পুরো বিজ্ঞাপনজুড়েই। করোনার ছুটিতে ছেলে ঘরে ফিরে এসেছে, দরজা খুলে দিয়েছেন বাবা, ছেলে তার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ছে না, বাবাকে জড়িয়ে ধরার পরিবর্তে সন্তান ঢুকে পড়ছে নিজের রুমে, ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইনে থাকবে বলে। আবেগী একটা গল্পের সঙ্গে যেভাবে সচেতনতার মেসেজটা সংযোগ করা হয়েছে, সেটা কোথাও অতিরঞ্জিত মনে হয়নি। বরং সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে, সুসময় হোক কিংবা দুঃসময়- বাবারা সন্তানকে আগলে রাখেন সারাটা জীবনই।
দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ডিজিটাল এজেন্সিগুলোর একটি হচ্ছে অ্যাডা এশিয়া (ADA), রবির এই বিজ্ঞাপনটি তারাই নির্মাণ করেছে। 'ADA' বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আশরাফুল হক এই এজেন্সির পুরো টিমটির নেতৃত্ব দিয়েছেন। ডাটার সাথে জীবনের গল্পের মেলবন্ধনের কাজ করে এই এজেন্সি। বাবা দিবসের কাজটি নিয়ে এজেন্সির ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর কিঙ্কর আহ্সান বলছিলেন, ‘এই লকডাউন অনেকের কাছে ছুটি মনে হলেও বাবাদের কাছে এটা ভয়ংকর টেনশনের। তাদের সংগ্রাম, সংসার নিয়ে লড়াইটা সততার সাথে তুলে আনতে চেয়েছি গল্পে। এই কাজটি ভালো হবার একমাত্র কারণ টীম এফোর্ট। টীমের সাদিব ভাই, নাভিদ সবার অবদান আছে এখানে।’
বিজ্ঞাপনটি নিয়ে পরিচালক তানভীর আহসান শোনালেন সহজ সরল জীবনের গল্প, বললেন, ‘আমি সবসময়ে ভালো গল্প নিয়ে কাজ করতে চাই। এই বিজ্ঞাপনের গল্পটি আমাদের খুব আপন। সহজ সরল জীবনের গল্পগুলো ক্যামেরায় বন্দী করতে চেয়েছি আমি। দিনশেষে সবাই বিজ্ঞাপনটির সততার জায়গা নিয়ে প্রশংসা করছে।’
বিজ্ঞাপনের শেষ প্রান্তে ছেলে বাবার কাছে জানতে চাইলো, বাবা দিবসে কি উপহার চান তিনি। বাবা বললেন, 'তুই পাশে থাকিস, সেটাই একমাত্র চাওয়া আমার। বাবাদের এর চেয়ে বেশি কিছু লাগে না রে!' আসলেই বাবাদের তেমন কিছু লাগে না, সন্তানটা পাশে থাকলেই তো তাদের পুরো পৃথিবী পাওয়া হয়ে যায়। বাবা দিবসে বাবাদের শুভেচ্ছা জানানোর জন্য এই সময়ে এরচেয়ে ভালো কিছু আর হতে পারতো না বোধহয়!