মানুষ কত ভয়াবহ! রাষ্ট্র কত ভয়ংকর। ধর্ম কত বড় কার্ড!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
এই উপমহাদেশের সবচেয়ে এরোগেন্ট শাসক নরেন্দ্র মোদির জন্য ঘৃণা। এভাবেও মানুষ মারার আয়োজন করা যায় একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে এটার চেয়েও অমানুষের মত কোন কাজ আর হয় না।
দিল্লির ঘটনা যতটা সাম্প্রদায়িক তার চেয়ে বেশি রাষ্ট্রীয়। একটা সরকার প্রতিনিয়ত বিদ্বেষ ছড়িয়ে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে এভাবে একটা নির্দিষ্ট ধর্মের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যাওয়াটা খুব ভয়ংকর। এমন সিচুয়েশনে মাইনোরিটির জায়গায় নিজেকে চিন্তা করলে গলা দিয়ে এক ঢোক পানিও নামবে না।
আপনাকে কোনো পশু মারতে আসবে না। জলপাই রঙের গাড়িতে করে কেউ এসে মারবে না। কিংবা রাষ্ট্রীয় বুলেট এসে আপনাকে বিদ্ধ করে দিয়ে যাবে না। আপনাকে মারবে সাধারণেরা। আপনার মত মানুষেরা যাদের সাথে বসে দুদিন আগেও একসাথে আলুপুরি খেয়েছেন। সেসব মানুষদের মধ্যে ধর্মীয় গরম ছড়িয়ে দিয়ে তাদের আগুন বানিয়ে দেয়া হবে। সেই আগুনে তারা একই রক্ত মাংসের, পাশের বাড়ির মানুষদের পুড়িয়ে ছাই করে দেবে।
মানুষ কত ভয়াবহ! রাষ্ট্র কত ভয়ংকর। ধর্ম কত বড় কার্ড! কতভাবে প্লে করা যায় এটা নিয়ে।
ভারতবর্ষ পড়তে গিয়ে আমরা রাষ্ট্রীয় নেতাদের দাঙ্গা থামানোর গল্প পড়েছি। বঙ্গবন্ধু পড়তে গিয়ে এইতো সেদিনও আমরা ছেচল্লিশের দাঙ্গা পড়েছি। চোখের সামনে সোহরাওয়ার্দী, মহাত্মা গান্ধী ভেসে উঠেছেন। আজ সেই চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছে মোদি আর অমিত শাহ।
এই যে হাজার মাইল দূর থেকে আমরা মন খারাপ করে বসে আছি। ভেতরে ঘৃণার মত লজ্জা হচ্ছে, এই শুভবুদ্ধিটা চাইলেই ছড়িয়ে দেয়া যেতো সেই অবিভক্ত উপমহাদেশ থেকে। কিন্তু প্রতিনিয়ত আমরা ব্যবহৃত হয়েছি। এখনও হচ্ছি। ধর্মীয় এজেন্টদের কাছে মাথা বিক্রি করে দিচ্ছি। ভাবতে ভুলে যাচ্ছি।
শুধু ভারতের দিকে না। এমন সব কারণে আমাদের দিকেও তাকানো যায়। একই রক্তের একই গরমের মানুষ আমরাও। খুব সহজেই আমরাও ব্যবহৃত হই। আমাদের নিয়েও প্রচুর খেলা হয়েছে। আমরা এখনও খেলে যাচ্ছি তাদের প্ল্যানে।
এই উপমহাদেশের সবচেয়ে এরোগেন্ট শাসক নরেন্দ্র মোদির জন্য ঘৃণা। এভাবেও মানুষ মারার আয়োজন করা যায় একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে এটার চেয়েও অমানুষের মত কোন কাজ আর হয় না।
আপনি গেরুয়া পরে আসেন কিংবা সাদা কালো আচকান। একদলকে পুড়িয়ে উড়িয়ে দিতে চান আপনার পতাকা। মানুষ হয়ে আপনি মারছেন মানুষকে। কোনো অপরাধ, কোন ভুল, কোন পাপ ছাড়া।
আহত মানুষগুলোর দিকে তাকানো যায় না। মৃত্যু সবসময় ভয়ংকর। এভাবে নিষ্পাপের মত মরাটা আরও ভয়ংকর। মরার সময় ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে এই পৃথিবীকে আপনি শুধু বুঝিয়ে যেতে পারলেন না, "মানুষ কত অবুঝ"।
প্রতিটা এমন ঘটনায় আমার প্রচুর ট্রমার মত হয়। বারবার শুধু মনে হয় মানুষ কেন এত অবুঝ হবে? মানুষ কীভাবে এত অমানুষ হবে? সবাই তো আমরাই। আমাদের মতই তো সবাই। কোথায় তাহলে আমাদের মনুষ্যত্ব!
পুরা পৃথিবী হয়ত একসময় বদলাবে। কিন্তু এই উপমহাদেশ বদলাবে না। এখানকার ধর্ম ব্যবসায়ীরা বদলাবে না। সাধারণ মানুষের মাথা বদলাবে না। গত ৯৩ বছরেও বদলায়নি কিছু।
১৯২৭ সালে কাজী নজরুল লিখে গিয়েছিলেন-
"দেখিলাম, আল্লার মসজিদ আল্লা আসিয়া রক্ষা করিলেন না, মা-কালীর মন্দির কালী আসিয়া আগলাইলেন না! মন্দিরের চূড়া ভাঙিল, মসজিদের গম্বুজ টুটিল!
আল্লাহর এবং কালীর কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না। আকাশ হইতে বজ্রাঘাত হইল না মুসলমানদের শিরে, ‘আবাবিলের’ প্রস্তর-বৃষ্টি হইল না হিন্দুদের মাথার উপর।
এই গোলমালের মধ্যে কতকগুলি হিন্দু ছেলে আসিয়া গোঁফ-দাড়ি-কামানো দাঙ্গায় হত খায়রু মিয়াঁকে হিন্দু মনে করিয়া ‘বলো হরি হরিবোল’ বলিয়া শ্মশানে পুড়াইতে লইয়া গেল, এবং কতকগুলি মুসলমান ছেলে গুলি খাইয়া হত দাড়িওয়ালা সদানন্দ বাবুকে মুসলমান ভাবিয়া ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ পড়িতে পড়িতে কবর দিতে লইয়া গেল।
মন্দির এবং মসজিদ চিড় খাইয়া উঠিল, মনে হইল যেন উহারা পরস্পরের দিকে চাহিয়া হাসিতেছে!"...
ফিচার্ড ইমেজ- দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা