যে দুই বাংলাদেশী জায়গা করে নিয়েছেন বিবিসির একশো অনুপ্রেরণাদায়ী নারীর তালিকায়
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

রিনা আক্তার প্রাক্তন যৌনকর্মী, রিমা সুলতানা শিক্ষক। দুজনেই নিজেদের কর্মগুণে জায়গা করে নিয়েছেন বিবিসির এই তালিকায়, যে তালিকা তৈরি হয় সারাবিশ্ব থেকে আসা অজস্র অনুপ্রেরণাদায়ী নারীর মধ্যে থেকে...
যদি কোনো আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশী কারো নাম দেখা যায়, তাহলে সত্যিই গর্ব হয়। আবার, এই নাম যদি কোনো ভালো কাজের ফলশ্রুতিতে আসে, তাহলে তো কথাই নেই। সেরকমই এক খবর এলো সম্প্রতি। 'বিবিসি' ২০২০ সালের একশো জন অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী নারীর তালিকা তৈরী করেছে। যে তালিকায় আছেন বাংলাদেশেরও দুইজন নারী; রিনা আক্তার ও রিমা সুলতানা রিমু। রিনা আক্তার প্রাক্তন যৌনকর্মী এবং রিমা সুলতানা রিমু একজন শিক্ষিকা। আজ জানবো এই দুইজন মানুষের গল্প। কীভাবে তারা এলেন এই তালিকায় জানবো সেটি নিয়েও।
এদেশে করোনাভাইরাস প্রকোপ বসিয়েছে মার্চ মাসের শুরু থেকেই। বিভিন্ন পেশার মানুষজনের পাশাপাশি বন্ধ হয়েছে যৌনকর্মীদের রুটিরুজি উপার্জনও। তাদের মধ্যে অনেকেরই দিন কাটছিলো মানবেতরের চেয়েও মানবেতরভাবে৷ এরকমই এক সময়ে আবির্ভাব রিনা আক্তারের। মহামারী যেমন আমাদের মানুষ ও অমানুষ চিনিয়েছে, সেরকম চিনিয়েছে রিনা আক্তারকেও। এই করোনাভাইরাসের কারনে রুটি-রুজিহীন যৌনকর্মীদের জন্যে সপ্তাহে চারশো প্যাকেট খাবারের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। ভাত, সবজি, ডিম, মাংসের প্যাকেজ খাবারের চারশো প্যাকেট নিয়ে তিনি লড়েছেন কিছু মানুষকে বাঁচানোর জন্যে। যে লড়াইয়ে তিনি সফলও একরকম। তাঁর মাধ্যমেই বেঁচে গিয়েছে অনেকগুলো প্রাণ। অসাধারণ এ অবদানের জন্যে তিনি আছেন বিবিসি'র এই তালিকার ৬ নাম্বারে।
এবার আসি রিমা সুলতানা রিমু'র গল্পে। তিনি স্কুল শিক্ষিকা৷ 'ইয়ং উইমেন লিডারস ফর পিচ' নামক কক্সবাজারের সংগঠনের একজন সদস্যও তিনি। এই সংগঠনে নারী সদস্যদের নেতৃত্ব বিকাশে কাজ করা হয়৷ তিনি রোহিঙ্গা সমস্যা, নারীদের মানবিক কাজে অংশগ্রহণ সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে স্থানীয় নারীদের সচেতনতা বাড়ানোর কাজটি করেন নিষ্ঠার সাথে। এছাড়াও তিনি রোহিঙ্গা শিশু ও নারীদের শিক্ষিত করার জন্যে ক্লাসও নিচ্ছেন নিয়মিত৷ মঞ্চনাটক ও রেডিও'র সাহায্যে সমাজসংস্কার বিষয়ক নানা কাজও করে থাকেন রিমা। তিনি মনে করেন, শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে সমান অংশগ্রহনই পারে নারীদের স্বাবলম্বী করতে ও লিঙ্গ-বৈষম্য দূর করতে। এই কাজগুলোর জন্যেই তিনি স্থান পেয়েছেন 'বিবিসি ১০০ নারী'র তালিকায়। তিনি আছেন তালিকার ৮৫ নম্বরে।
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে রিনা আক্তার ও রিমা সুলতানা রিমু ছাড়াও ভারতের চার জন, পাকিস্তানের দুই জন, আফগানিস্তানের দুই জন এবং নেপালের একজন নারী রয়েছেন এই শীর্ষ ১০০ নারীর তালিকায়। এ প্রসঙ্গে একটা বিষয় জানিয়ে রাখি, বিবিসি এই তালিকা তৈরী করেছে তাদের কাছে আসা আবেদন, বছরজুড়ে যারা ছিলো সংবাদ শিরোনামে এবং যাদের কাজ সমাজের ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে; তার প্রেক্ষিতে৷ এ বছরের থিম ছিল ‘পরিবর্তনে নেতৃত্বদানকারী নারী’। এবং এই থিম মাথায় রেখেই একশোজনকে বাছাই করেছে বিবিসি। এখানে একটি চমকও রাখা হয়েছে। তালিকায় একশো জন নারীর নাম আসা উচিত ছিলো। কিন্তু তালিকায় আছে ৯৯টি নাম। একটি ঘর রাখা হয়েছে খালি। সে ঘর উৎসর্গ করা হয়েছে নাম না জানা বাকিসব অনুপ্রেরণাদায়ক নারীকে।

রিনা আক্তার ও রিমু সুলতানা রিমু'র প্রতি রইলো শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা৷ সমাজের প্রতিটি স্তরে এমন মানুষ আসুক ক্রমাগত, এটিই আমাদের প্রত্যাশা৷
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন