জুলাই মাসে কুয়েত, কাতার ও বাহরাইন থেকে দেশে আসা ২১৯ প্রবাসী বাংলাদেশিকে ৫৪ ধারার গ্রেপ্তার করে পুলিশ, রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে চার মাস আটকে রাখা হয়েছে তাদের। দেশের প্রায় গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে, অথচ এদের কোন অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায়নি...

মাঝে মধ্যে আমি আসলেই বুঝি না এই দেশ কারা চালায়। বুঝি না রাজনীতিবিদ, নীতিনির্ধারক, পুলিশ, প্রশাসন, বিচারক কেউ কী তাদের কমনসেন্সগুলো কাজে লাগায় না? একটা উদাহরণ দেই। করোনাকালে জুলাই মাসে কুয়েত, কাতার ও বাহরাইন থেকে দেশে আসা ২১৯ প্রবাসী বাংলাদেশিকে ৫৪ ধারার গ্রেপ্তার করে পুলিশ

অভিযোগ শুনবেন? দিয়াবাড়ির কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে আর্মির সামনে নাকি তারা রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করছিলো। কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থায় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য তারা নাকি সলাপরামর্শ করছিলেন। পুলিশ গোপন সূত্রে ওই সলাপরামর্শের খবর জানতে পারে। পুলিশের অভিযোগ, তারা জামিনে মুক্তি পেলে পালিয়ে যেতে পারে। তাই জেলখানায় রাখা দরকার। প্রয়োজনে রিমান্ডে ব্যাপকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।

এমন হাস্যকর সব অভিযোগ এনে তাদের দিনের পর দিন জেলে রাখা হলো। এমনকি প্রথমদিকে তাদের জামিনের আবেদনের শুনানিটা পর্যন্ত হয়নি। একইভাবে আরও চার দফায় বিদেশফেরতদের জেলে নেয়া হয়।

এই রাষ্ট্রের কর্ণধারদের কথা শুনলে মনে হতো, এরা একেকজন ভয়াবহ সন্ত্রাসী। আমি নিজে টেলিভিশনের এক লাইভে মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছি, মাননীয় মন্ত্রী এদের তো কোন অপরাধ নেই। কেন এদের জেলে রাখা হয়েছে?

অভিবাসন নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো এ নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। আমি নিজে একাধিকবার লিখেছি। ডেইলিস্টার সহ দেশের প্রায় গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে, এদের কোন অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

৫৪ ধারায় যে দিনের পর দিন জেলে রাখা যায় না, এই রাষ্ট্রের কর্ণধারদের জানার কথা। কিন্তু তবুও এই প্রবাসীদের দিনের পর দিন জেলে থাকতে হয়েছে।

একজন প্রবাসি যখন বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে গেছে, হাইকোর্ট তখন পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তাকে ডেকেছে। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে আদালতে জবাব দিতে বলেছে। পুলিশ-নিম্ন আদালতের তখন ঘুম ভেঙেছে। এখন তারা হাইকোর্টকে বলেছে, সুনির্দিষ্ট এই ২১৯ জনের বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

আমার প্রশ্ন হলো, কোন স্বাক্ষপ্রমাণ পাওয়া না গেলে কেন চার মাস এই প্রবাসীদের জেলে রাখা হলো? কে এই মামলা করার নির্দেশ দিলো? কেন তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হলো? আচ্ছা, দেশটা কি ছেলেখেলা যে যাকে যখন ইচ্ছে একটা মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে বললেই হলো, রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করেছে।

আমাদের পুলিশ, বিচারবিভাগ, সরকারসহ নীতি নির্ধারকদের বলবো, প্লিজ একটু মানবিক হোক। নিজেদের কমনসেন্সগুলো কাজে লাগান। একজন নিরপরাধ মানুষও যেন সাজা না পায়। অযথা যেন দেশের মানুষ হয়রানির শিকার না হয়।

এই যে দেখেন হোয়াইট হাউসে বসে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যা তা বলছেন কিন্তু তার কথায় কিছু হচ্ছে না। এমনকি তার দলের লোকেরাও তার সমালোচনা করছে। এর নাম প্রাতিষ্ঠানিকরণ। এর নাম গণতন্ত্র।

আপনাদের দোহাই লাগে, এই দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীনভাবে চলতে দিন। এই দেশের গণতন্ত্র, মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে আগাতে দিন। মনে রাখবেন শুধু আর্থিক উন্নয়ন দিয়ে দেশ আগালে সিরিয়া, লিবিয়া, ইরাক ধ্বংস হয়ে যেতো না। কাজেই অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সুশাসন, গণতন্ত্র, প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা, মত প্রকাশ এসবের দিকে নজর দিন। মানবিক সুন্দর এক বাংলাদেশ গড়ে তুলুন। ভালো থাকবেন সবাই। ভালো থাকুক বাংলাদেশ।

ছবি কৃতজ্ঞতা- দ্য ডেইলি স্টার

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা