মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলবো, অসংখ্য ঘটনার দরকার নেই, এক শাহেদের আদ্যপান্ত তদন্ত করলে পুরো রাষ্ট্রের চিত্র বেরিয়ে আসবে। দেখবেন তখন এমপি পাপলু-রাষ্ট্রদূতের সম্পর্কটা কী, জানতে পারবেন শাহেদ করিম, জেকেজি বা ঠিকাদার শামীমদের মতো হাজার হাজার লোক কী করে দেশটা লুটেপুটে খাচ্ছে, কারা কেন তাদের লুটপাট টিকিয়ে রেখেছে। আরও জানতে পারবেন, কারা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে, কারা বিদেশে বাড়ি করেছে, কারা টাকা পাচার করেছে।
রিজেন্ট লিজেন্ডের জামায় কাদা থাকলেও জুতায় কাদা নেই কেন? কোমরের বাম পাশে প্যান্টের বেল্টের সঙ্গে কেন পিস্তল গোঁজা? হাতকড়া পরালেও অস্ত্রটি কেন নেয়া হয়নি, এতো তাড়াহুড়ার পরও পিস্তলের পজিশন ঠিক থাকলো কী করে? এক ছবির প্যান্টের সঙ্গে অন্য ছবির প্যান্টের মিল নেই এমন অনেক প্রশ্নই তোলা যায়। কিন্তু আমার এসব নিয়ে খুব একটা আগ্রহ নেই।
হ্যাঁ, এটা ঠিক শাহেদের মতো লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বললেই চলে, এতো নাটকীয়তার দরকার ছিল না। কিন্তু শাহেদকে নিয়ে আমার কোন আগ্রহ এখন আর নেই। চারদিন আগেই লিখেছিলাম, রিজেন্ট শাহেদ গ্রেপ্তার হলো কি হলো না, তাতে কিছু যায় আসে না যদি আমার একটা চাওয়া পূরণ হয়। আমি শুধু শাহেদের ঘটনার পুরো তদন্ত চাই। কারা শাহেদকে শাহেদ বানালো, কারা কারা তার কাছে থেকে সুবিধা নিল সেই রাজনীতিবিদ ও আমলাসহ সবার নাম আমি জানতে চাই। এগুলো জানতে পারলে এই এক ঘটনাতেই পুরো দেশের চরিত্র জানা হয়ে যাবে।
আপনারা নিশ্চয়ই কয়েকদিন গণমাধ্যমে দেখেছেন, রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে, এমন বক্তব্য দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। অন্যদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, মহাপরিচালকের অনুরোধে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তির অনুষ্ঠানে তিনি ছিলেন। সচিবরা বলেছেন, মন্ত্রী তাদের অনুষ্ঠানে থাকার অনুরোধ করেছিলেন।
অন্যদিকে আজকে বাংলা ট্রিবিউনের খবর বলছে, সাবেক স্বাস্থ্য সচিবের নির্দেশেই রিজেন্টকে বাছাই করা হয়। এ সংক্রান্ত সব কাগজপত্রও নাকি বাংলা ট্রিবিউন পেয়েছে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র সহকারি পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার বলেছেন, সরল বিশ্বাসে রিজেন্ট এবং জেকেজিকে কাজ দিয়ে আমরা প্রতারিত হয়েছি।
ভেবে দেখেন এক ঘটনায় কতো বক্তব্য? সবাই এখন সবার ওপর দায় চাপাচ্ছেন। আমি এই রহস্য জানতেই বেশি আগ্রহী। খুঁজলে দেখা যাবে এর পেছনে আরও অনেকে আছেন। আরও অনেকে সুবিধা নিয়েছেন। জাল সনদের যে ঘটনাগুলো বলা হচ্ছে এই জাল সনদ কারা কারা নিয়েছে বা কারা প্রতারিত হয়েছে সেটাও জানা জরুরী।
চারদিন আগেই লিখেছি, দয়া করে খুঁজে বের করেন, এই শাহেদের সাথে কারা কারা ছিলেন, সরকারের কোন কোন মন্ত্রী, কোন কোন রাজনীতিবিদ, কোন কোন আমলা, কোন কোন সাংবাদিক, আর কোন পেশার কোন মানুষ। সবাইকে খুঁজে বের করা উচিত। রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে কারা তাকে দাওয়াত দিতেন , কারা তাকে ভারত অব্দি পৌঁছে দিয়েছেন জানা জরুরী।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলবো, অসংখ্য ঘটনার দরকার নেই, এক শাহেদের আদ্যপান্ত তদন্ত করলে পুরো রাষ্ট্রের চিত্র বেরিয়ে আসবে। দেখবেন তখন এমপি পাপলু-রাষ্ট্রদূতের সম্পর্কটা কী, জানতে পারবেন শাহেদ করিম, জেকেজি বা ঠিকাদার শামীমদের মতো হাজার হাজার লোক কী করে দেশটা লুটেপুটে খাচ্ছে, কারা কেন তাদের লুটপাট টিকিয়ে রেখেছে। আরও জানতে পারবেন, কারা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে, কারা বিদেশে বাড়ি করেছে, কারা টাকা পাচার করেছে।
আবারও বলছি, শাহেদকে সব জিজ্ঞাসাবাদ করুন। শুধু শাহেদে আটকে না থেকে ঘটনাগুলোর তদন্ত করুন। প্রশ্নগুলোর উত্তর দিন। জাতিকে জানান। আপনারা যারা মুখে মুখে কথায় কথায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বলেন আর হাওয়া ভবনের দুর্নীতির কথা বলেন, তারা আমাকে বলেন তো বঙ্গবন্ধুর সততা বাদ দিয়ে আপনারা কেন তারেক রহমানের নীতি অনুসরণ করে দুর্নীতি করেন? আমি যদি বলি আপনারাও তারেক রহমানের অনুসারী কী জবাব দেবেন?
রাষ্ট্রকে আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতেই হবে। কারণ, এই যে আমরা যারা জীবনে কখনো কোন অন্যায় করার কথা ভাবি না, অসৎ পথে চলি না, যারা সুশাসনের স্বপ্ন দেখি, যারা এখনো এই দেশটা নিয়ে সব স্বপ্ন দেখি, যাদের একটাই পাসপোর্ট, যারা তাদের সন্তানদের জন্য একটা সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে তাদের দোষটা কী বলতে পারবেন?
আচ্ছা বলেন তো বাংলাদেশটাকে ভালোবাসা কি আমাদের অপরাধ? একটা সুন্দর দেশ চাওয়া কি আমাদের অপরাধ? যদি অপরাধ না হয়, তাহলে শাহেদের সঙ্গে জড়িতদের প্রত্যেকের নাম চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার সঙ্গে শাহেদের ছবি আছে। রাষ্ট্রপতির সাথে আছে। আপনারা তো অন্যদের মতো নন যে কেউ এসেই ছবি তুলে ফেলবে। আপনাদের কাছে কারা শাহেদকে নিয়ে গেল? এই জবাব দিতেই হবে। প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজুন। তাহলে আর শাহেদরা তৈরি হবে না। নয়তো এমন শাহেদ তৈরি হবে সারা বাংলায়। কাজেই শাহেদদের তৈরির পথ বন্ধ করুন। বাংলাদেশটাকে বাঁচান।
-
* প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন
* সমাজের নানান অসঙ্গতি নিয়ে আওয়াজ তুলুন। অংশ নিন আমাদের মিছিলে। যোগ দিন 'এগিয়ে চলো বাংলাদেশ' ফেসবুক গ্রুপে
আরও পড়ুন-