দশটা কারণের একটা হলো- বেকাররা কখনো রান্না বান্না নিয়ে অভিযোগ করে না। তুমি নিশ্চয় শুনেছো, উন্নত দেশগুলোতে খুব তুচ্ছ কারণে বিয়ে ভেঙ্গে যায়। তার মধ্যে খারাপ রান্নাকে খারাপ বলা একটি কারণ। বেলা তুমি বাবা মায়ের আহ্লাদী মেয়ে। রান্না ভালো করো খারাপ করো, সব সমান আমার কাছে। বেকাররা বিষ খেয়েও হজম করে ফেলতে পারে!
হ্যালোওওওওও! এটা কি টু ফোর ফোর, ওয়ান ওয়ান থ্রি নাইন? বেলা বোস চাকরিটা এবারো হলো না আমার। প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে নিয়মিতই। অভিযোগ আসেনি এই দোহাই দিয়ে বারবার প্রশ্ন ফাঁস হালাল করে নিচ্ছে ওরা। বেলা বোস, অভিযোগ জানানোর উপায় কি তাদের কাছে? তুমি বলতে পারো? বেলা বোস গত দুই দিন ধরে ভাত খাইনি। টাকা নেই এটা একমাত্র কারণ না। জিদ করেই খাইনি। কাগজের সার্টিফিকেটগুলো ঘুড্ডি বানিয়ে উড়িয়ে দিতে ইচ্ছা হয় আজকাল। আমার টেবিলে সাধারণ জ্ঞানের বইয়ের স্তূপ জমেছে। আমার না হয় প্রচুর সাধারণ জ্ঞান অর্জন হবে, কিন্তু তাদের- যারা এই শিক্ষাব্যবস্থার বুজুর্গ ব্যক্তিত্ব, তাদের সাধারণ কমনসেন্স কবে হবে বেলা?
বেলা, বাই দ্য বাই, শুনেছি তোমার সামনের মাসে বিয়ে। শুনে একটুও অবাক হইনি জানো। হবু পাত্র নাকি মাত্র দুই লাখ টাকা বেতন পায় তোমার। জেনে হিংসা হয়নি আমার। পাত্রের বাবার সম্ভবত নিজস্ব বাড়ি। সাত পুরুষের ঐতিহ্য নিয়ে তারা এসেছিলো তোমায় তাদের করে নিতে। তুমিও গাঁইগুই করে এবার রাজিই হয়ে গেলে। আমাদের প্রেম ছিলো যৌথ প্রযোজনার অবাস্তব সিনেমা। তুমিই আগে ভাগে সেটি বুঝে গেলে। তাই "বেশি কিছু চাই না শুধু ভালবাসা দিও" ধরণের আহ্লাদী কথা থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছো। জীবন কখনো কখনো এমন হয়। ভালবাসা থেকে ভাল "বাসা"র গুরুত্ব বেড়ে যায়।
***** বাংলাদেশে এখন এই বেকার সংখ্যা ২৬ লাখ (সূত্রঃ প্রথম আলো, ২৮/০৬/২০১৭)। ভাবা যায়! ২৬ লাখ মানুষ ফ্রি আছে যাদের যখন তখন বিয়ে করা যায়! কিন্তু, বেকার হওয়ার সবচেয়ে বড় সমস্যা কেউ তাকে বিয়ে করতে চায় না। বেলা বোসেরা খোঁজে চাকুরিজীবি জামাই, এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু যারা এক পয়সা কামাই নাই, তার বেলা বোসের জামাই হবার কোনো চান্স নাই। গত তিন দিন ধরে বেলা আমার ফোন ধরছে না। তাকে বোঝানো দরকার বেকারদেরও বিয়ে করা যায়। তারাও বিবাহযোগ্য প্রাণী। সে যদি ফোনটা একবার ধরতো, তাহলে তাকে কয়েকটা যুক্তি দেখাতে পারতাম কেন একজন বেকারকে বিয়ে করা উচিৎ।
১। প্রথমত, বেকার যুবক সাধারণত চাকরী পাওয়ার সাথে সাথেই একজন বেকার বেলা বোসকে বিয়ে করে। কিন্তু চাকরীজীবি বেলা বোস বিয়ের সময় বেকারকে বিয়ে করে না। বেলা বেকারদের অপেক্ষা করার ক্ষমতা অসীমতর। তুমি চাকরির চেষ্টা চালিয়ে যাও। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো।
২। আমি জানি বেলা, বিয়ের পর মাঝে মধ্যে তোমার মেজাজ খারাপ হবে। অকারণে আমার উপর ক্ষেপে যাবে। কিন্তু আমি বেকার বলে তোমাকে কিছুই বলবো না। ভেবে দেখো, আমার জায়গায় যদি একজন চাকরিজীবি তোমার জামাই হয় সে কি ছেড়ে দেবে? না দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। টাকার গরমে দুই চার কথা শুনিয়ে দিতে পারে। আমি তোমাকে কখনো দুই চার কথা শুনাবো না।
৩। বেলা তোমাকে অবহিত করা দরকার কিছু ব্যাপারে। অবগতির জন্য জানাচ্ছি, বেকাররা কখনো রান্না বান্না নিয়ে অভিযোগ করে না। তুমি নিশ্চয় শুনেছো, উন্নত দেশগুলোতে খুব তুচ্ছ কারণে বিয়ে ভেঙ্গে যায়। তার মধ্যে খারাপ রান্নাকে খারাপ বলা একটি কারণ। বেলা তুমি বাবা মায়ের আহ্লাদী মেয়ে। রান্না ভালো করো খারাপ করো, সব সমান আমার কাছে। বেকাররা বিষ খেয়েও হজম করে ফেলতে পারে।
৪। বেকাররা রাত জাগায় ওস্তাদ। বিয়ের পর মেয়েরা চায় তার বর একটু রোমান্টিক হবে। রাতে তাকে গল্প শুনাবে। কিন্তু চাকরিজীবি ছেলেরা সারাদিন কাজকর্ম করে খুব ক্লান্ত হয়ে থাকে। তাদের অল্পতেই ঘুম পায়। বেলা বিশ্বাস করো, আমি একদিনও ঘুমাবো না। জেগে থাকবো অনাদিকাল পর্যন্ত, যতদিন আমি বেকার থাকি।
৫। একজন বেকার মানেই একজন প্রেমিক। যে তার সমস্ত প্রেম উজাড় করে দিতে চায় কারো প্রতি। বেলা একজন চাকরিজীবি বিয়ে করলে হয়তো অর্থকরি পাবে, কিন্তু প্রেম নাও তো পেতে পারো! খাঁটি দায়িত্বশীল প্রেমিক নিয়ে সারাজীবন থাকার যে বিমলানন্দ, সেটি পাবে কেবল একজন প্রোফেশনাল বেকারকে বিয়ে করলেই!
৬। ইতিহাস বলে বেকাররা কখনো বিশ্বাসঘাতক হয় না। বরং বেকাররাই বিশ্বাসঘাতকতার স্বীকার হয়েছে সবচেয়ে বেশি। তাই বেলা, একজন বেকারকে নিশ্চিন্ত মনে বিয়ে করে নিতে পারো। সে কখনো তোমার বিশ্বাস নিয়ে খেলা করবে না। যখন তখন তোমাকে অকারণ সন্দেহ করবে না।
৭। কষ্টের স্বরূপ কি, তা বেকারদের চেয়ে কে জানে আর বেশি! অথচ দেখো, বেকাররাই হেসে খেলে মুসকুরিয়ে দিন পার করে দেয়। বেলা, একজন বেকার কখনো কাউকে কষ্ট দিতে পারে না। অতটুকু ক্ষমতা তাকে দেয়া হয় নি। কত বিবাহিতদের দেখেছি বউকে সকাল বিকাল কষ্ট দেয়। অবহেলা করে। ঘরে বেলার মতো সুন্দরী রেখে বাইরে পরকীয়া করে। বিশ্বাস করো বেলা, বেকাররা পরকীয়া করে না, তারা শুধু আপনকীয়া করতে জানে।
৮। আরেকটি বিষয় না বললেই নয়। বেকারদের পর্যবেক্ষণ শক্তি অসাধারণ। তুমি চিন্তা করো বেলা, বিয়ের পর তুমি অনেক সুন্দর করে সাজগোজ করলে, কপালে একটা রক্তজবা রঙা টিপ দিলে। চোখে কাজল দিলে। অপেক্ষা করে বসে আছো তোমার জামাই এসে তোমাকে নিয়ে কাব্য রচনা করে ফেলবে। তাহলে ভুল। সারাদিন নানান দিকে চোখ দিতে দিতে চাকরিজীবিদের মুগ্ধ হওয়ার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। এই ক্ষমতা কেবল বেকারদেরই থাকে। তোমার একটা তিল নিয়েও বেকার উপন্যাস লিখতে পারে।
৯। বেকাররা একমাত্র চাকরি ছাড়া দুনিয়ার বাকি সব কাজের ওস্তাদ। হেন কোনো কাজ নাই যা বেকাররা করতে পারে না। রান্না বান্না (ডিম ভাজা, ভর্তা বানানো, চা বানানো) থেকে শুরু করে ইলেক্ট্রনিক আইটেম নষ্ট হয়ে গেলে সেটা পর্যন্ত ঠিক করে ফেলতে পারে বেকাররা। বেলা, শুধু চাকরি দিয়ে মানুষ বিচার করো না দয়া করে। এমন ন্যাচারাল স্কিলড মানুষ আর কোথায় পাবে তুমি বলো?
১০। একজন বেকার বাবা হিশেবে অবশ্যই ভালো হবে। অনেক মেয়েকে বলতে শুনেছি, স্বামীকে বলে- "তুমি স্বামী না পায়জামা? বাচ্চাটাকে নিয়ে একটু পড়তে বসতে পারো না?" এই কথাটা একজন বেকারকে বলতে হবে দুইটা কারণে। এক. হাতে অনেক সময়। দুই. বেকার ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাকে সাধারণ জ্ঞান শিখিয়ে ফেলতে পারবে। ফলে, এই বাচ্চার ভবিষ্যতে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকবে। তার মানে, বেকার বিয়ে করা মানে লস নয়, এটা একপ্রকার বিনিয়োগ!
বেলা এখনো কি তুমি সিদ্ধান্ত পাল্টাবে না? আশা করি তুমি সময় থাকতে একজন বেকারকে বিয়ে করার যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিবে। কারণ, কবি বলেছেন, সময় গেলে বেকার পাবে না..