গ্রেপ্তারের পর রায়হানের ভীষণ মন খারাপ ছিল। ও ভেবেছিল ওর পাশে কেউ নেই। কিন্তু ও যখন জেনেছে বাংলাদেশে আজ ওর জন্য মানবন্ধন হয়েছে, সবাই ওর পাশে আছে তখন রায়হান স্বস্তি প্রকাশ করেছে।
যা দেখেছি তাই বলেছি, খুব শক্তভাবে এই কথাগুলো বলেছেন মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি তরুণ রায়হান কবির। রায়হান বলেছেন, কোভিড-১৯ এর সময় প্রবাসীদের প্রতি যে আচরণ তিনি দেখেছেন সেটাই তিনি বলেছেন। তবে তিনি মালয়েশিয়ার কোন কর্তৃপক্ষ বা কাউকে আহত করতে চাননি। আর তিনি দ্রুত দেশে ফিরতে চান।
আজ বুধবার সকাল ১১ টায় রায়হান কবিরের সঙ্গে দেখা করতে যান আইনজীবী সুমিতা শান্তিনি কিষনা। দুপুরে সুমিতার সঙ্গে আমার দীর্ঘ আলাপ হয়েছে। সুমিতা আমাকে এসব কথা জানিয়েছেন। আরও বলেছেন, গ্রেপ্তারের পর রায়হানের সঙ্গে কোন দুব্যবহার করা হয়নি। তাকে কোন নির্যাতনও করা হয়নি।
সুমিতা জানান, রায়হানের ভীষণ মন খারাপ ছিল। ও ভেবেছিল ওর পাশে কেউ নেই। কিন্তু ও যখন জেনেছে বাংলাদেশে আজ ওর জন্য মানবন্ধন হয়েছে, সবাই ওর পাশে আছে তখন রায়হান স্বস্তি প্রকাশ করেছে। এছাড়া রায়হান যেহেতু কোন অপরাধ করেনি এখনো তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আনেনি পুলিশ।
আজকে অবশ্য সুমিতাকেও পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। আপনারা জানেন, গত সোমবার আইনজীবীরা মালয়েশিয়ান ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়ে রায়হানের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তারা জানান, পরে তারা দেখা করার জন্য তারিখ দেবেন। আজ বুধবার ১১ টায় সেই তারিখ দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ে গিয়ে রায়হানের সঙ্গে কথা বলেন আইনজীবীরা।
এর আগে সোমবার মালেয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তারা রায়হানের সঙ্গে দেখা করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, মালয়েশিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বজায় রেখে রায়হানের বিষয়টি সমাধান করা হবে।
আপনারা জানেন, রায়হানের বাড়ি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে। বাবা-মা আর দুই ভাইবোনের পরিবার। স্থানীয়রা বলছেন, বন্দরে নিজ এলাকাতেও সবার কাছে প্রতিবাদী তরুণ হিসেবে পরিচিত রায়হান। এলাকার সবার বিপদে-আপদে পাশে থাকতেন। নিজের বই, অর্থ দিয়ে সাহায্য করতেন শিক্ষার্থীদের। এলাকায় মাদক চোরাকারবারের বিরুদ্ধে দারুণ সোচ্চার ছিলেন।
এদিকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবাদ: মালয়েশিয়ায় অভিবাসীদের বিরুদ্ধে সরকারের নীতির সমালোচনার করার প্রতিশোধ হিসাবেই বাংলাদেশি রায়হান কবিরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
রায়হান কবিরকে গ্রেপ্তার ও হয়রানির ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার আইনজীবীদের সংগঠন লইয়ারস ফর লিবার্টি-এলএফএল। তারা এক বিবৃতিতে বলছে, রায়হানের বিপক্ষে যেভাবে অভিযোগ আনা হয়েছে সেটা নিপীড়নমূলক। আর আল জাজিরার প্রতিবেদনে রায়হানের বক্তব্যটি তারা তলিয়ে দেখেছেন। সেখানে খুব সূক্ষ্মভাবে বিচার করলেও মালয়েশিয়ার আইনের কোনওরকম লঙ্ঘন ঘটেনি।
রায়হানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ ও মুক্তি চেয়ে শনিবার ২১টি বেসরকারি সংস্থা বিবৃতি দিয়েছে। অন্যদিকে আজ সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছ নাগরকিদের বিভিন্ন সংগঠন। রায়হানের পরিবারের সদস্যবৃন্দ, বন্ধু এবং সচেতন নাগরিকদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিরাও ওই মানববন্ধনে যোগ দেন।
রায়হানের বন্ধু জাকারিয়া ইসলাম জানান, মানববন্ধন শেষে ঢাকায় অবস্থিত মালয়েশিয়ান দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত বরাবর তারা একটি স্মারকলিপি দিয়ে রায়হানের মুক্তি দাবি করবেন। পাশাপাশি আর কোন বাংলাদেশিকে যেন এভাবে হয়রানি না করা হয় সেটাও তাদের দাবি।
আপনারা যারা রায়হানের পাশে দাঁড়িয়েছেন সবাইকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ পুরো বাংলাদেশকে। আমি বিশ্বাস করি এভাবে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকেল রায়হান মুক্ত হয়ে বাংলাদেশে আসবেই। আর এভাবেই ন্যায়ের যুদ্ধে জয়ী হবে বাংলাদেশ।