ধর্ষকের উপযুক্ত বিচারের দাবিতে আমরা কমবেশি সোচ্চার থাকি সকলেই, যদিও বাংলাদেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উপযুক্ত শাস্তি পায় না এই পাষণ্ডরা। প্রাসঙ্গিকভাবেই আমাদের জানা উচিৎ অন্যান্য দেশে ধর্ষণের সাজার মাত্রা কতখানি ভয়াবহতা লাভ করে।

মানবসভ্যতার ইতিহাসের জঘন্যতম অপরাধগুলোর একটি হলো ধর্ষণ। এমনকি অনেকে এটিকে হত্যা বা খুনের চেয়েও বেশি ভয়াবহ বলে মনে করেন। কেননা একজন ব্যক্তি মারা গেল মানে তো সব শেষই হয়ে গেল। কিন্তু যে নারী (কিংবা পুরুষও হতে পারে) একবার ধর্ষণের শিকার হয়েছে, লোক জানাজানি হলে তাকে যে সমাজ সংসারে ঠিক কী পরিমাণ অপমান, লাঞ্ছনা আর নিগ্রহের মধ্য দিয়ে দিন পার করতে হয় তার কোন সীমা পরিসীমা নেই। খুন হলো সরাসরি মৃত্যু, কিন্তু ধর্ষনকে যদি একজন মানুষের মানবিক সত্তায় আঘাত করে তাকে তিলে তিলে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়ার সাথে তুলনা করা হয়, তবে এতটুকু অত্যুক্তি হবে না। 

তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগে, ধর্ষণের মতো একটি জঘন্য অপরাধে যে বা যারা অংশ নেয়, তাদের ঠিক কী ধরণের সাজা হতে পারে? গভীর অনুতাপ ও পরিহাসের বিষয়, বিশ্বব্যাপী অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ধর্ষণকারী বিনা সাজায় পার পেয়ে যাচ্ছে, অন্য একজন মানুষের জীবনকে ছারখার করে দিয়ে নিজে রাস্তায় বুক ফুলিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে, আর তার অনুসন্ধিৎসু চোখ খুঁজে বেড়াচ্ছে সম্ভাব্য পরবর্তী শিকার। তবে ধর্ষণকারীকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে, খুঁজে দেখলে এমন দৃষ্টান্তও পাওয়া যাবে ভুরি ভুরি। আর তা নিয়েই আমাদের এই আয়োজন। চলুন দেখে আসা যাক দেশভেদে ধর্ষণের সাজার মাত্রা কতখানি ভয়াবহতা লাভ করে। 

দেশভেদে ধর্ষণের সাজা ভিন্ন হয়ে থাকে

চীন: চীনে আইন রয়েছে ধর্ষণের অভিযোগে প্রমাণিত ব্যক্তিকে সরাসরি মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করার। তবে ক্ষেত্রবিশেষে, অপরাধীর অন্ডকোষ কেটে নেয়ার মাধ্যমেও তাকে শাস্তি প্রদান করা হয়ে থাকে। 

ইরান: ইরানে ধর্ষণের শাস্তি হলো জনসম্মুখে ফাঁসি, কিংবা গুলি করে হত্যা। তবে কখনো কখনো অভিযুক্ত এই সর্বোচ্চ শাস্তির হাত থেকে রক্ষা পেয়ে যেতে পারে, যদি সে ধর্ষিতার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আসতে পারে। এবং অনেক ক্ষেত্রেই সামাজিক চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে তারা এটি করতেও পারে। তবে তারপরও অভিযুক্ত একটি শাস্তি এড়াতে পারে না, তা হলো হয় যাবজ্জীবন কারাদন্ড, নয়ত একশোটা চাবুকের বাড়ি। 

নেদারল্যান্ডস: যেকোন ধরণের শারীরিক মিলন বা অত্যাচার, এমনকি জোরপূর্বক চুমু খাওয়াকেও, এবং তা একজন দেহব্যবসায়ীকেও হলেও, নেদারল্যান্ডসে সেটিকে ধর্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর ভুক্তভোগীর বয়স কত, তা মাথায় রেখে ধর্ষককে ৪ থেকে ১৫ বছরের কারাদন্ড ভোগ করতে হয়। 

ফ্রান্স: ফ্রান্সে প্রাথমিকভাবে ধর্ষককে ১৫ বছরে সশ্রম কারাদন্ড (সাথে অত্যাচার) দেয়া হয়। তবে পরবর্তীতে যদি দেখা যায় যে আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থা গুরুতর, সেক্ষেত্রে শাস্তির মেয়াদ বাড়িয়ে ৩০ বছর, এমনকি যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশও দেয়া হতে পারে।

আফগানিস্তান: শাস্তি প্রদানে এ দেশে তিলমাত্র বিলম্ব করা হয় না। ধর্ষণের অভিযোগ সম্পূর্ণরূপে প্রমাণিত হওয়ার চার দিনের মধ্যে ধর্ষকের মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়। 

উত্তর কোরিয়া: এই দেশটি তো আরও এক কাঠি বাড়া। আফগানিস্তানে তো তাও চার দিন সময় নেয়া যেতে পারে, কিন্তু এ দেশে একটি স্কোয়াড আছে, যারা অভিযোগ প্রমাণের সাথে সাথেই ধর্ষকের মাথায় গুলি করে তাকে হত্যা করে। 

রাশিয়া: রাশিয়ায় প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের সাজা মাত্র তিন বছর। তবে ভুক্তভোগীর অবস্থা বিবেচনা করে সাজার মেয়াদ ক্রমান্বয়ে বাড়াতে বাড়াতে ৩০ বছর পর্যন্ত নেয়া যেতে পারে। 

সৌদি আরব: অভিযুক্ত দোষী সাব্যস্ত হলে, বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধর্ষককে জনসম্মুখে শিরশ্ছেদের মাধ্যমে হত্যা করা হয়।

সংযুক্ত আরব আমিরাত: ধর্ষন, কিংবা শ্লীলতাহানির সাজা এ দেশে সরাসরি ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলে মৃত্যু। কোন রকম দেন দরবার বা ক্ষতিপূরণের সুযোগ নেই। ধর্ষককে ৭ দিনের মধ্যে মৃত্যুবরণ করতে হয়। 

সংযুক্ত আরব আমিরাতে ধর্ষকের একমাত্র সাজা মৃত্যুদন্ড

গ্রীস: পরকালে কী হবে না হবে সেটা পরের ব্যাপার, কিন্তু গ্রীসে ব্যবস্থা রয়েছে ধর্ষককে ইহকালেই নরক যন্ত্রনা ভোগের সুযোগ করে দেয়ার। অভিযোগ সত্যি বলে প্রমাণিত হলে ধর্ষককে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। 

ভারত: ২০১৩ সালে ধর্ষণবিরোধী আইন পাশের পর ভারতে ধর্ষণের সাজা কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে। এখন সেখানে ধর্ষককে ৭ থেকে ১৪ বছরের কারাদন্ড ভোগ করতে হয়। কিন্তু ধর্ষণের দায়ে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলা এখনও এ দেশে খুবই বিরল একটি ব্যাপার, যা খুব কম ধর্ষকের সাথেই হয়েছে। 

মিশর: মিশরে শুধু ধর্ষককে শাস্তিই দেয়া হয় না, পাশাপাশি চেষ্টা করা হয় একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করার যাতে পরবর্তীতে কেউ এ ধরণের অপরাধ করার সাহস পর্যন্ত না পায়। আর তা নিশ্চিত করতে জনসমাবেশের মত করে, সকলের সামনে ধর্ষককে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। 

যুক্তরাষ্ট্র: এখানে দুই ধরণের আইনব্যবস্থা বিদ্যমান। স্টেট ল' আর ফেডারাল ল'। আক্রান্ত ব্যক্তি যদি ফেডারাল ল' এর অধীনে অভিযোগ জমা দেয়, তাহলে ধর্ষককে জরিমানা করা হয়, কিংবা কখনো সখনো মৃত্যুদন্ডও দেয়া হয়। কিন্তু স্টেট ল' এর নিয়মকানুন প্রতিটি রাজ্যভেদে ভিন্ন ভিন্ন। 

নরওয়ে: আক্রান্তের শারীরিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে এখানে ধর্ষককে ৪ থেকে ১৫ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। 

ইসরায়েল: এখানে একজন ধর্ষককে সর্বনিম্ন ৪ বছর, আর সর্বোচ্চ ১৫ বছর জেল খাটতে হয়।

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা