‘‘তোর আল্লাহ্ কি তোকে বাঁচাতে আসবে?’’
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
রাস্তাতেই বেধড়ক পেটানো হয় ঘন্টাখানেক। এ সময় পুলিশ জিজ্ঞেস করে, তোর আল্লাহ্ কি তোকে বাঁচাতে আসবে? তারপর জোরপূর্বক ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে বাধ্য করে।
‘রাস্তাতেই আমাদের বেধড়ক পেটানো হয় ঘন্টাখানেক। এ সময় পুলিশ জিজ্ঞেস করে, তোর আল্লাহ্ কি তোকে বাঁচাতে আসবে? তারপর জোরপূর্বক ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে বাধ্য করে। এরপরেই পুলিশ গরম রড দিয়ে আমার হাত পুড়ে ফেলে, যখন তারা রাস্তার আগুনের ওপর আমাকে ছুঁড়ে মারতে চায় তখনই তাদের মধ্যে থেকেই দুইজন এসে আমাকে আটক করে নিয়ে যায়।’
এভাবেই নিজের সাথে ঘটে যাওয়া সেই বীভৎস ঘটনার বর্ননা দিয়েছেন ভারতের উত্তরপ্রদেশের ১৪ বছরের এক কিশোর। তার প্রথম অপরাধ, সে মুসলমান। দ্বিতীয় অপরাধ, সে ভারতের বিতর্কিত নাগরিক আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলাকালীন সময়ে বাড়ির বাইরে বেড়িয়েছিলো। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরনগরে।
শিশুদেরকেও ছাড়ছে না সেখানকার পুলিশ। মুসলমান সংখ্যালঘুদের উপর চালানো হচ্ছে বর্বর নির্যাতন। পাঞ্জাবি, কুর্তা, দাড়ি, টুপি দেখলেই রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এতো পুরোটাই মোদি রাজার দেশ। পুলিশের গাড়ি থেকেই শুরু হচ্ছে মোদিজির নির্যাতন। দিনের পর দিন অবৈধভাবে আটকে রাখা হচ্ছে। আটকাবস্থায় চালানো হচ্ছে পৈশাচিক নির্যাতন, খাবারও দেয়া হচ্ছে না, শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি চালানো হচ্ছে মানসিক অত্যাচারও। ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছেন অনেকেই, সেখান থেকে ছাড়া পেলেও সেই ট্রমাটিক অভিজ্ঞতা থেকে মুক্তি মিলছে না ভুক্তভোগী মুসলমানদের।
সেই কিশোরের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, নাগরিত্ব সংশোধন আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকালীন সময়ে সে জুম্মার নামাজ পড়ে এসে ভাইকে খুঁজতে বের হয়। ভাইকে খুঁজতে গিয়ে সে পুলিশের কাছে ধরা পড়ে। এরপর পুলিশ তাকে মারতে মারতে নিয়ে যায়। আটকের প্রথম রাতেই অত্যাচারের মুখে একশ প্রতিবাদীর নাম দিতে বলা হয় তাকে। সে আশেপাশে আরো কিছু মানুষকে মার খেতে দেখে যারা সবাই কুর্তা, পাঞ্জাবি পরিহিত ছিলো। পুলিশেরা নাকি ক্রমাগত পবিত্র কুরআন ও ইসলাম নিয়ে কটুক্তি করে যাচ্ছিলো। স্থানীয় লোকজন বলছে, এখনো পর্যন্ত ১৯জন কিশোর নিখোঁজ রয়েছে। পুলিশ আটক করে নিয়ে যাবার পর তাদের আর কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে, ভারতে কর্ণাটক রাজ্যে বিতর্কিত নাগরিক আইনের বিরুদ্ধে একটি নাটক মঞ্চস্থ করেছিলো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সেই নাটকে,ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করা হয়। আর এতেই ক্ষেপে যায় স্থানীয় প্রশাসন। শিশুদেরকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। অথচ, কিছুদিন আগেই একই রাজ্যের অন্য স্কুলে বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার পক্ষ নিয়ে একটি নাটক মঞ্চস্থ করা হয় সেখানে প্রশাসন প্রশংসা করেছিলো। একই রাজ্যের শিশুদের ওপর এই দ্বিমুখী আচরণের কারণ কী? শুধুমাত্র অন্যায়ের প্রতিবাদ করাটাই এখন অপরাধ বলে বিবেচিত হচ্ছে?
কথায় কথায় ভারতকে বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ বলে গর্ব করা মানুষদের কি লজ্জা হয় না? নিজেদের সেক্যুলারিজমের ধারক বাহক দাবি করা ভারতের সেই লজ্জাবোধ হবে কবে? বাহ, মোদিজি, বাহ! এই হচ্ছে আপনার সাম্প্রদায়িক ভালোবাসা? ভিন্নমত এবং ধর্মালম্বীদের ওপর চালানো অত্যাচারের রক্তের দাগ কি মোদির গায়েও লাগছে না? শুধুমাত্র মুসলমানদের ওপর চড়াও হয়ে নরেন্দ্র মোদি ঠিক কী প্রমাণ করতে চাইছেন? এতো বড় দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েও, কতো ছোট তার ভাবনা? ছিঃ!