কাউকে বাইট্টা, কালা, ভোটকা, লম্বু, টাকলা এসব বলতে বিন্দুমাত্র বিবেকে বাঁধে না আমাদের। আমাদের দরকার মজা করা, তাতে কে কস্ট পেলো সেটা দেখার সময়টা কোথায়?

শিশুটি অঝোরে কাঁদছে। রাগে কষ্টে শরীর কাঁপছে তার। মরে যেতে চাইছে সে। সম্প্রতি এমনই এক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে আন্তর্জাতিক সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে। ভিডিওটি গত ১৯ ফেব্রুয়ারি পোস্ট করেছেন শিশুটির মা। শিশুটির অপরাধ সে একন্ড্রপ্লাজিয়া নামক বামন রোগে আক্রান্ত। এই শারিরীক অবস্থার জন্য সহপাঠীরা তার সঙ্গে বুলিং করে থাকে। আর এই বুলিং একটি ভয়াবহ মানসিক উপদ্রপ।  

ইয়ারাকা বেইলস, অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনের বাসিন্দা। প্রতিদিনের মতোই নিজের সন্তানকে স্কুল থেকে আনতে যান। স্কুলে যেয়ে চোখের সামনেই সন্তানকে বুলিং হতে দেখেন তিনি। সেখান থেকে ছেলেকে গাড়িতে নিয়ে এসে বসান। তারপরেই অবতারণা ঘটে ভিডিও ফুটেজে দেখা করুণ দৃশ্যের।

একটি ৯ বছরের শিশুর সহ্যশক্তিই বা কতটুকু? তার ওপর প্রতিদিন এই অস্বাভাবিক মানসিক যন্ত্রণা, কতদিন পর্যন্ত সহ্য করা যায়? কোয়াডিন নামের এই শিশুটি পারেনি নিজেকে ধরে রাখতে। যাপিত জীবনের যন্ত্রণায় নিজেকে মেরে ফেলতে চেয়েছে। আর এই পুরো দৃশ্যগুলো তার মা নিজের মুঠোফোনের ক্যামেরায় ধারণ করেছেন। ভিডিওটি অনলাইনে শেয়ার করার কারণ উল্লেখ করে ইয়ারাকা জানান, এই দৃশ্য সবার দেখা উচিত। বুলিং কতটা ভয়ংকর হতে পারে সেটা জানা উচিত। নিজের সন্তানকে শেখানো প্রয়োজন যাতে অন্য কারও সাথে দুর্ব্যবহার না করে। বুলিং এর বিপক্ষে সচেতনতা গড়ে উঠুক। সবার শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।

দুই দিনেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে রীতিমত ঝড় তুলেছে ভিডিও বার্তাটি। সব মিলিয়ে ছাড়িয়ে গেছে কয়েক কোটি ভিউ, হচ্ছে লাখ লাখ শেয়ার। কোয়াডিনকে সাহস জোগানোর প্রয়াস ছিলো কমেন্টকারীদের মধ্যে। এদিকে কোয়াডিনকে ডিজনিল্যান্ড ঘুরিয়ে আনার জন্য কমেডিয়ান ব্র্যাড উইলিয়ামস একটি গো-ফান্ড-মি পেইজ খুলেছেন। সেখানে শিশুটির নামে ইতিমধ্যেই জমা হয়েছে দুই লাখ ডলার। উল্লেখ্য, ব্র্যাড উইলিয়ামস নিজেও বামনাকৃতির শারিরীক প্রতিবন্ধকতার শিকার।   

মায়ের সাথে শিশু কোয়াডিন

শিশু কোয়াডিনের ভিডিওটি এখন শুধুমাত্র সাধারণ ব্যবহারকারীদের মাঝেই সীমাবদ্ধ নেই। উলভারিনখ্যাত অস্ট্রেলিয়ান অভিনেতা হিউ জ্যাকম্যান বাড়িয়েছেন তার বন্ধুত্বের হাত। টুইট করে বলেছেন, কোয়াডিন- আমার মধ্যে তুমি বন্ধু খুঁজে পাবে। হ্যাশট্যাগে ব্যবহার করে লিখেছেন, দয়াশীল হও।

কোয়াডিন এর প্রিয় রাগবি দল একটি ভিডিও তৈরি করে তাকে সাহস জুগিয়েছে। শিশুটিকে নিজেদের টিমমেটের মর্যাদা  দিয়েছে তারা। একটি খেলায় কোয়াডিন এর নেতৃত্বে মাঠে নামার কথাও জানিয়েছে তারা। পুরো ভিডিওটি শেষ হয়েছে কোয়াডিনের উদ্দেশ্যে করতালির মাধ্যমে।

এইটুক পড়ে হয়তো কিছু ভাবনার উদয় হবে আমাদের মনে। কয়েক মিনিটের জন্য। তারপর আবার নিজেরাই বুলিং করে বেড়াবো। আয়নাটা নিজের দিকে তাক হবার আগ পর্যন্ত আমরাই বর্ণবাদী আচরণ করি, বডিশেমিং করি, আমাদের দ্বারাই ট্রলিং এর শিকার হন অনেকেই। একটা মানুষের মনে কস্ট দেবার সময় আমরা কিন্তু এতোকিছু ভাবি না। কাউকে বাইট্টা, কালা, ভোটকা, লম্বু, টাকলা এসব বলতে বিন্দুমাত্র বিবেকে বাঁধে না আমাদের। আমাদের দরকার মজা করা, তাতে কে কস্ট পেলো সেটা দেখার সময়টা কোথায়?

 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা