পিরিয়ড না হলে নারী বা পুরুষ কারো জন্ম হতো না
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

এক বন্ধুকে এই ছবি দেখালাম। সে হেসে ফেলে বলল- সেনোরা স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্যাকেটের কালার শাড়ি পরেছিস? আমি জিজ্ঞেস করলাম- স্যানিটারি ন্যাপকিন কি হাসাহাসির কিছু? হাসতে হাসতে সে বলল- হ্যাঁ! ভাইয়ের হাত দিয়ে বোনকে স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্যাকেট দেয়ায়ে তোরা যে বিপ্লব করতেছিস ভাই!
এক বন্ধুকে এই ছবি দেখালাম। সে হেসে ফেলে বলল- সেনোরা স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্যাকেটের কালার শাড়ি পরেছিস? আমি জিজ্ঞেস করলাম- স্যানিটারি ন্যাপকিন কি হাসাহাসির কিছু? হাসতে হাসতে সে বলল- হ্যাঁ! ভাইয়ের হাত দিয়ে বোনকে স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্যাকেট দেয়ায়ে তোরা যে বিপ্লব করতেছিস ভাই!
জ্বি হ্যাঁ, এইটা সত্যিই বিপ্লব। কারণ স্যানিটারি ন্যাপকিন হাসাহাসির জিনিস না। মানবজাতির টিকে থাকার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। পিরিয়ড চলাকালীন ইনফেকশানে কতো কি ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে পারে সেইটা ছেড়েই দিলাম।
কথা হচ্ছে- সেনোরা স্যানিটারি ন্যাপকিনের বিজ্ঞাপনে যদি ভাইয়ের হাতে বোনকে প্যাড এনে দেয়ার দৃশ্য দেখে একদল পুরুষের হাসির আর অন্যদলের অশ্লীল মনে হয়েছে! পিরিয়ডের রক্তপাতে কাতর একজন বোনকে ভাইয়ের প্যাড এনে দেয়ার দৃশ্য অতি মানবিক ব্যাপার, সেখানে আপনি অশ্লীলতা দেখেনি বা কিভাবে আর হাসিই কীভাবে পায়?

২০১৮ সালে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা শোভন মুখার্জি নামের একটা ছেলের কথা ছেপেছিল যে লেডিজ পাবলিক টয়লেটে প্যাড রেখে আসার কাজটা শুরু করেছিলো। 'বন্ধন' নামে ২০১৭ সালে ভাইফোঁটার আগের দিন থেকে সে এই কাজ শুরু করেছিলো আর বলেছিলো- ভাইফোঁটায় যেমন রাখীবন্ধন থাকে সেরকম এটাও পুরুষ হিসেবে বোনদের সহায়তা করায় তার 'বন্ধন'!
পরে প্যাডম্যান নামে বলিউড চমৎকার একটা সিনেমাও বানিয়েছে। সেই সিনেমা ভারতের জাতীয় পুরস্কারও জিতেছে।
ছেলেদের স্বপ্নদোষ আর পিরিয়ড গুলিয়ে ফেলাও একইরকম। এই দুটো এক হওয়ার চান্সই নাই, কারণ পিরিয়ডের ব্যাপারে গবেষণায় প্রমাণিত যে পিরিয়ডের এই পেইন হার্ট এটাকের কাছাকাছি। মনে রাখেন- পিরিয়ড না হইলে নারী বা পুরুষ কারোরই আর জন্মাইতে হইতোনা।
শারীরিক কষ্টের মধ্যে পেইনের এক্সট্রিমলি পেইনফুল যে ব্যাপারগুলো সেইগুলার মধ্যে পিরিয়ড একটা। সেইটা বা সেইটার অনুসঙ্গ স্যানিটারি ন্যাপকিন- এইসব দেখে আপনার হাসি কেন পাবে? যে শফি হুজুররা নারীদের দেখলে তেঁতুল ডাকে, নারীশিক্ষাকে 'জেনা' বলে তারাও নারীর পেট থেকে জন্মেছে এই প্রক্রিয়া হয় বলে! তাহলে এতো লজ্জার ট্যাবু কীসের?

নারী বা পুরুষ নির্বিশেষে স্যানিটারি ন্যাপকিন, রোদে শুকাতে দেয়া ব্রা-প্যান্টি, মেয়েদের ব্রায়ের ফিতা বের হয়ে থাকলে আপনার যদি মনে হয় খুব অশ্লীলতা হচ্ছে, তাহলে আপনার উচিত সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানো। ব্রায়ের ফিতা, কোমরের ভাঁজ, মেয়েদের ঘামে ভেজা শরীর, এমনকি পিরিয়ডের প্যাড এনে দেয়ার দৃশ্য ইত্যাদি দেখে আপনার মাত্রাতিরিক্ত যৌনকাতর হওয়ার মেডিক্যাল টার্মের নাম- নিম্ফোম্যানিয়া। নিম্ফোম্যানিয়ার চিকিৎসা যৌনতা না, পিরিয়ডের মতো একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নিয়ে বিদ্বেষ ছড়ানো না- সাইকিয়াট্রিষ্টের সাথে কাউন্সেলিং।
কনফুসিয়াসের একটা বিখ্যাত বাণী আছে- A journey of a thousand miles begins with a single step (একটা হাজার মাইলের ভ্রমণ শুরু হয় একটা ছোট্ট পদক্ষেপ দিয়ে)। নারী পুরুষ কেউ কারোর শত্রু না। নারীকে এগিয়ে দিয়ে পুরুষ কখনো ঠকে নাই, পুরুষকে এগিয়ে দেয়ার কাজও নারীর।
যারা নারী পুরুষকে সামনাসামনি দাঁড় করিয়ে একে অপরের প্রতি ঘৃণা ছড়ায়, পিরিয়ডের মতো স্বাভাবিক প্রক্রিয়া আর নিত্য ব্যবহার্য অন্তর্বাস নিয়ে অশ্লীলতা দেখে তাদের চিনে রাখেন। তাদের মৌলবাদী বিদ্বেষী কথায় কান না দেয়ার যাত্রাটা শুরু হোক আজই। কি, পারবেন না?
আরো পড়ুন-