আমেরিকা, চীন কিংবা রাশিয়া নয়; পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্ট যাদের!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

আমেরিকা না, রাশিয়া না, চীন না; কোন সেই দেশ, যার নাগরিকেরা কিনা পাসপোর্ট দিয়ে ১৯০টা দেশে যেতে কোনো বাধার মুখে পড়ে না?
ক্ষমতা নিয়ে এত দ্বন্দ্ব, সবাই শুধু আরো ক্ষমতা অর্জন করতে চায়। দুনিয়াজুড়ে বড় বড় দেশগুলো ক্ষমতার রেসে মত্ত। আমেরিকা, চীন, রাশিয়া, যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো সবসময়ই একটা না একটা হাঙ্গামা নিয়ে মেতে আছে। হয় বাণিজ্যিক যুদ্ধ, নইলে মনস্তাত্ত্বিক, না পোষালে একেবারে ট্যাংক কামান নিয়ে যুদ্ধ করতেও তারা পিছপা হয় না। কিন্তু, এগুলো দিয়েই কি গোটা পৃথিবীর কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া যায়?
আসল ক্ষমতাবান তো তারাই, যারা সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়াতে পারে, তাদের পাসপোর্ট এতটাই শক্তিশালী যে ১৯০টার মতো দেশে যেতে তাদের কোনো ভিসা নিতে হয় না, অন এরাইভাল ভিসার সুবিধা পায়। কোন দেশের পাসপোর্ট এতটা শক্তিশালী আসলে? আমেরিকা না, রাশিয়া না, চীন না; কোন সেই দেশ, তবে যার পাসপোর্ট দিয়ে ১৯০টা দেশে যেতে কোনো বাধা পড়ে না?
অবাকই হবেন, নামটা সিঙ্গাপুর। সিঙ্গাপুরের লাল পাসপোর্টের মালিকগণ ১৮৯টা দেশে ভিসা ছাড়াই কিংবা অন এরাইভাল ভিসা সুবিধায় যেতে পারেন। যেখানে বিশ্বের অন্যান্য দেশ মেতে আছে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নিয়ে, কূটনৈতিক মারপ্যাঁচ নিয়ে সেখানে সিঙ্গাপুরের কৌশল হলো, সবার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে চলা। আর এই সহজ সূত্রেই তারা ১৮৯ টা দেশের একসেস পাচ্ছে কী সহজে!
তবে সর্বশেষ পাসপোর্ট ইনডেক্সে সিঙ্গাপুরকে টপকে এক নাম্বারে এসেছে জাপান, জাপানের পাসপোর্ট দিয়ে আপনি যেতে পারবেন ১৯০ টা দেশে, একেবারে ভিসা ছাড়া কিংবা অন এরাইভাল ভিসায়। বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জাপান নিজেদের আগাগোড়া বদলে ফেলেছে। এখনকার দিনে জাপান সবার কাছেই ভীষণ অনুকরণীয় সব দিক থেকেই, শিক্ষা বলুন আর টেকনোলজি কিংবা উদ্ভাবন- সব কিছুতে৷ এই শান্তিপ্রিয় দেশের পাসপোর্টটাই এখন বিশ্বের সবচেয়ে দামী পাসপোর্ট৷

কিছুদিন আগে অবশ্য, সিঙ্গাপুর এবং জাপান সমভাবে টপে অবস্থান করছিল, এখন জাপান একটু এগিয়ে টপে অবস্থান করছে। দ্বিতীয়তে আছে সিঙ্গাপুর৷ বিশ্বের সবচেয়ে দামী পাসপোর্টের অধিকারী হওয়ার পেছনে কী গুণ কাজ করে আসলে?
সিঙ্গাপুরের কথাই বলি। সিঙ্গাপুর দেশটা এমন যে, আন্তজার্তিক কূটনীতিতে এরা সেভাবে প্রভাব ফেলে না। ছোট একটি দেশ, যাদের সাথে সেরকম ঐতিহাসিক বিরোধও নেই কারো। তাদের কূটনীতির মূল সূত্রই হচ্ছে সবার সাথে বন্ধুত্ব বজায় রাখা। তারা নিজেদের কোনো পক্ষের দিকে ঠেলে দেয় না৷ বরং তারা সবার সাথেই সুসম্পর্ক বজায় রাখে। এছাড়া, তাদের দেশের কারোরই বাইরের দেশে গিয়ে অবৈধ ইমিগ্র্যান্ট হবার রেকর্ড নেই খুব একটা। জলবায়ুগত কারণে বা যুদ্ধের কারণে সিঙ্গাপুরের মানুষ উন্নত দেশগুলোর বোঝা হবে এমন সম্ভাবনাও কম। ফলে, সিঙ্গাপুরকে ভিসা ফ্রি একসেস দিতে কার সমস্যা হবে তাহলে?
জাপানের কথা বলি। জাপান এমন একটা দেশ যারা নিজেদের সংস্কৃতি, ভাষাকে ভীষণ গুরুত্ব দেয়৷ তারা স্বপ্নেও ভাবে না জাপানের বাইরে গিয়ে তারা বসতি করবে, নাগরিক হবে অন্য কোনো দেশের। নিজের দেশে থাকাটাকেই তারা বেশি আনন্দের, গর্বের বলে ভাবে। কাজের খাতিরে তারা বিভিন্ন দেশে গেলেও এইটুকু নিশ্চয়তা জাপানিজদের নিয়ে থাকে যে, এরা নিজ দেশে ফেরত যাবেই। এছাড়া, আরো একটি লক্ষণীয় বিষয় হলো, জাপান এমন একটি দেশ যাদের কোনো ধর্মের সাথেই বিরোধ নেই। খেয়াল করলে দেখা যাবে, আমেরিকার কোথাও কোথাও যেখানে মাইনরিটির সাথে সংবেদনশীল ব্যবহার না করার রেকর্ড আছে, জাপানে এরকম কোনো সমস্যা নেই। জাপান সব ধর্মের প্রতিই মোটামুটি শ্রদ্ধাশীল৷ সব সংস্কৃতির প্রতিও! ফলে কে না চাইবে এমন সভ্য দেশকে ভিসার একসেস দিতে?
এই হলো অবস্থা, আপনি কোনটা সমর্থন করবেন? ইসরায়েলের মতো ক্ষমতা, নাকি জাপান সিঙ্গাপুরের মতো বিশ্বের প্রায় সব দেশে যখন তখন ঘুরবার মতো স্বাধীনতা? আমি হলে নিশ্চিতভাবেই চাইতাম, সারা পৃথিবীতে ঘোরার ক্ষমতা! এর চেয়ে বড় ক্ষমতা আর কী আছে! পৃথিবীতে কত কী দেখবার আছে, সেইসব দেখতে পাব না, শুধু অপ্রয়োজনীয় ক্ষমতার বলি হবার কারণে- এমনটা আমি মেনে নিতেই পারি না।
ইজরাইলি বংশোদ্ভূত নাস, যিনি 'নাস ডেইলি' ভিডিও বানান, তিনি একবার আফসোস করে বলেছিলেন, কয়েকটা রাষ্ট্রে তিনি একসেস পাচ্ছেন না একেবারেই, কারণ তার রাষ্ট্র ইসরায়েল। অমন ক্ষমতাধর একটা দেশকে সবাই স্বীকারও করে না। তারচেয়ে ছোট দেশ সিঙ্গাপুরই কি ভাল নয়? সিঙ্গাপুর-জাপানের মানুষেরাই কি সুখী নয়? গোটা বিশ্ব ঘোরার লাইসেন্স যাদের হাতে..