শিক্ষা নয়, এই দেশে স্রেফ এমপি-মন্ত্রী আর ক্ষমতার মূল্য আছে
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
একজন বিচারক তাঁর রায় দিয়েছেন; এর জন্য এক দিনও লাগেনি; ঘণ্টা খানেকের মাঝে তাকে বদলি করে দেয়া হয়েছে।
ঘটনা এক- পিরোজপুরে এক জেলা জজকে বদলি করা হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে- ওই বিচারক, সাবেক এক সাংসদকে জামিন না দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। এর জন্য সঙ্গে সঙ্গে তাকে বদল করে তাঁর জায়গায় আরেকজনকে বসিয়ে ওই সাংসদের জামিন দেয়া হয়েছে!
ঘটনা দুই- বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে উচ্ছেদ অভিযান চলছে। সেখানে এক সাংসদের অবৈধ স্থাপনা আছে। তার স্থাপনার কারণে এমনকি বুড়িগঙ্গার বাঁকই বদলে গিয়েছে। কাল উচ্ছেদ অভিযান চলার সময় ওই সাংসদ তার দলবল নিয়ে উচ্ছেদ বন্ধে বাধা দিয়েছেন!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল। তাকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? তিনি উত্তরে বলেছেন, 'আমি নিজ এলাকা থেকে এমপি ইলেকশন করতে চাই!'
এমন না একজন শিক্ষক নির্বাচন করতে পারবেন না। কিন্তু একজন একাডেমীকের ভাবনায় থাকবে শিক্ষা, গবেষণা, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা ইত্যাদি। সেটা না করে তিনি ভাবছেন কী করে সাংসদ হওয়া যায়! আমার এক ছাত্র আমাকে সেবার প্রশ্ন করেছিল, 'স্যার, কেন লেখাপড়া করবো?' আমি একটু অবাক হলেও উত্তরে বলেছি- জ্ঞান অর্জন করার জন্য। প্রকৃত মানুষ হবার জন্য।
ওই ছাত্র এরপর বলেছে, 'জ্ঞান অর্জন করে কী লাভ? যদি চেয়ারম্যান, কমিশনার, এমপি, মন্ত্রীদের কাছেই সব ক্ষমতা থাকে, শুধু তাদেরকেই মানুষ মূল্য দেয়; তাহলে পড়াশুনা করে করবো কী?' ব্যাপারটা তো আসলেই ঠিক এমন হয়ে গেছে। এই দেশের অর্ধেকের বেশি চেয়ারম্যান, কমিশনার, কাউন্সিলর, এমপি, মন্ত্রীর আসলে সেই অর্থে কোনো পড়াশুনা নেই। অথচ তারা দিব্যি এমপি-মন্ত্রী হয়ে কত চমৎকার ভাবেই না প্রকাশ্য দিবালোকে ক্ষমতা দেখিয়ে বেড়াচ্ছে।
একজন বিচারক তার রায় দিয়েছেন; এর জন্য এক দিনও লাগেনি; ঘণ্টা খানেকের মাঝে তাকে বদলি করে দেয়া হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, দেশের অন্য বিচারকরা কি দেশের নানান প্রান্তে থাকা রাজনৈতিক নেতা, চেয়ারম্যান, এমপি, মন্ত্রী এদের খারাপ কাজের বিচার করতে পারবে?
ধরুন ঢাকার যেই সাংসদ উচ্ছেদ অভিযানে বাধা দিয়েছে; এখন কেউ যদি তার বিরুদ্ধে মামলা করে দেয়; সেই মামলার রায় যে বিচারক দিবে; তিনি কি আদৌ সঠিক বিচারটি দিতে পারবেন? নাকি তার মনে ভয় থাকবে- আমাকে না আবার বদলি করে দেয়! এই দেশে জজ-ব্যারিস্টারদের কোনো মূল্য নেই। এই দেশে শিক্ষার কোনো মূল্য নেই। এই দেশে স্রেফ এমপি-মন্ত্রী আর ক্ষমতার মূল্য আছে।
এই জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি তার নিজ দায়িত্ব ছেড়ে ৬০ এর উপর বয়সে এসে যুবলীগের দায়িত্ব নিতে চায়। চিন্তা করা যায়! তিনি কেন এই দায়িত্ব নিতে চেয়েছেন? কেন তার ভিসি পদ ভালো লাগছে না? কারণ ভিসি পদের যে কোনো মূল্য নাই! সেটাও যে পেতে হয় ওই এমপি-মন্ত্রীদের পা চেটে এবং পদটা ধরেও রাখতে হয় এমপি-মন্ত্রীদের হুজুর হুজুর করে।
অবাক হবো না, আর কিছু দিন পর স্কুলে যদি ছাত্র-ছাত্রীরা 'এইম ইন লাইফ' রচনা লিখতে গিয়ে যদি লিখে- মাই এইম ইন লাইফ ইজ টু বি এ পাওয়ারফুল ম্যান লাইক এন এমপি!