প্রধানমন্ত্রী জানেন যদি প্রিকশ্যন এর জন্যেও আজকে সবকিছু বন্ধ ঘোষণা করতে হয়, করোনাকে মহামারী ঘোষণা করতে হয় তাহলে কিভাবে আমরা নিজেদের জীবন বাঁচানোর জন্যে একজন আরেকজনের উপর ঝাঁপায় পড়ব।

আমি বিভিন্ন সময় সরকারের কট্টর সমালোচনা করি। সেজন্যে অফুরন্ত গালি, হুমকিও খাই। তবে এত সমালোচনার পরেও এটা আমি নির্দ্বিধায় স্বীকার করি, এই অঞ্চলের মানুষকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মত ভাল কেউ চিনেন না।

গতকাল আর আজকে সারাদিন ফেসবুকে দেখলাম কিভাবে ইতালী থেকে আসা ১২৬ জন প্রবাসী বাংলাদেশীর উপর হিংস্র দাঁত, নখ নিয়ে অল্প কিছু লোক বাদে ভদ্র, সুভদ্র, অভদ্র, অল্প ভদ্র সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ল! ওদের দোষটা কি? কোন সাহসে ওরা দেশে ফিরল?

দেশে ফিরল তো ফিরল, কোন সাহসে ওরা আশকোনা ক্যাম্পে গিয়ে হৈহল্লা করল? হৈ-হল্লার এক পর্যায়ে রাগে দুঃখে কোন সাহসে একজন 'ফাক ইউর সিস্টেম' বলল? বাংলাদেশ উপরে উপরে যতই বড়লোক দেখাক আসলে যে ফকিরের ফকির এটা জেনেও কোন সাহসে তারা ভি আই পি ট্রিটমেন্ট চাইল? আসছে পলায়া আবার কোন সাহসে সিস্টেম নিয়ে এত বড় কথা?

কেউ একবারও মুদ্রার অপর পিঠের কথা চিন্তা করল না! কি নিয়ে তাদের আপত্তি, অভিযোগ আমলেই নিল না। সবাই তো গালি দিতেই ব্যস্ত ওদের! কেউ একবারও চিন্তা করল না ঐ ক্যাম্পে মহিলা শিশুদের জন্যে কি ব্যবস্থা? ওদের ওখানে থাকতে আপত্তি নাই যদি পরিবেশ থাকার মত হয় সেটা কেউ দেখল না! আমি উনাদেরকে ছেড়ে দিতে না, বরং গালি দিতে নিষেধ করায় আমার পোষ্টে এসে মানুষ আমাকে গালমন্দ করতে থাকল সমানে! ট্রল বের হল, মীম বের হল ওদের নিয়ে। গোদের উপর বিষ ফোড়ার মত পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বলে বসলেন প্রবাসীরা দেশে এসে ফাইভ স্টার ট্রিটমেন্ট চায়।

উনারা চিৎকার চেঁচামেচি করছেন ঐ নোংরা পরিবেশে থাকার আতংকে আর আপনারা ওদের উপর ঝাঁপায় পড়লেন আপনাদের জীবননাশের আতংকে! অনেকে যুক্তি দিবেন অসুবিধা হতেই পারে কিন্তু ফাক ইউ বলবে কেন? ঠিক এই জায়গায় এসেই আমি শেখ হাসিনাকে অন্য আলোয় দেখি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

আমার মত আরো অনেকেরই ধারণা দেশে প্রচুর করোনা রোগী আছে যাদের কথা জানানো হচ্ছে না। যদি নাও থেকে থাকে তাহলে আমাদের অনেকেরই অভিযোগ কেন এখনো সবকিছু বন্ধ ঘোষণা করা হচ্ছে না?

কারণ প্রধানমন্ত্রী জানেন যদি প্রিকশ্যন এর জন্যেও আজকে সবকিছু বন্ধ ঘোষণা করতে হয়, করোনাকে মহামারী ঘোষণা করতে হয় তাহলে কিভাবে আমরা নিজেদের জীবন বাঁচানোর জন্যে একজন আরেকজনের উপর ঝাঁপায় পড়ব। পারলে পিটায় মেরে ফেলব কেউ করোনা লুকাতে চাইলে। আমরা এমনই। আজকে যাকে 'ফাক ইউর সিস্টেম' বলায় গালি দিচ্ছি, কালকে দোকানের সামনে আমরাই 'ফাক ইউ' বলে একজন আরেকজন এর উপর ঝাঁপায় পড়ব। খাবার স্টক করতে, ওষুধ স্টক করতে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য স্টক করতে, ডাক্তার এর সিরিয়াল পেতে, হাসপাতালের সিট পেতে আমরাই হামলা করব। 

আমরা ২ মাস আগে পেঁয়াজের স্টক করা জাতি, ২ দিন আগে একসাথে এক বস্তা স্যানিটাইজার একলা কিনে রাখা জাতি, আমরা কেমন সেটা আমরা ভুলে গেলেও উনি ভুলেন নাই। মাত্র ১ জনের আস্ফালন আমরা নিতে পারলাম না গতকাল আর ৭ কোটি মানুষ যখন আস্ফালন শুরু করবে মহামারী ঘোষণা দিলে তার পরিণতি কি হবে সেটাও উনি ভালমত জানেন। তাই উনি হয়ত ঘোষণা দিবেনও না। ন্যায্য কি অন্যায্য সেটা পরের ব্যাপার, আপনি আসলে ডিজার্ভই করেন না এই ঘোষণা। গতকালের ঘটনায় সেটা প্রমাণিত।

লক্ষণ যা তাতে সামনে ভয়াবহ দিন আসছে হয়ত। এই সময় আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন একটু মানবতা, একটু সংবেদনশীলতা। আমরা যদি সংবেদনশীল না হই, তাহলে কোন জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবেনা। আপনার সামনে গুদাম এনে রেখে দিলেও আপনি বাঁচবেন না যদি সংবেদনশীল না হোন। পৃথিবীতে নানান সময় নানান ঝড়ঝাপ্টা আসছে। তারপরেও পৃথিবী টিকে গেছে মানুষের মানবতার জন্যে। একটু মানবিক হোন। মানবিক হতে পয়সা লাগে না।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা