সন্তানদের মঙ্গল কামনায় কত অদ্ভুত পদ্ধতি অবলম্বন করেন বাবা-মায়েরা, সেসব জানলে অবাক হতে হয়! চলুন জেনে আসি বিশ্বজুড়ে সন্তান লালন-পালনের অদ্ভুত কিছু রীতি!

পৃথিবীতে এমন বাবা-মা খুঁজে পাওয়া ভার, যারা তাদের সন্তানদের ভালো চান না এবং সাধ্যমত আদর-যত্নে তাদের বড় করার চেষ্টা করেন না। জন্মের পর থেকেই সন্তানদের যথাসাধ্য আদর-যত্নে লালন-পালন করেন তারা। সন্তানদের মঙ্গল কামনায় কত অদ্ভুত পদ্ধতি অবলম্বন করেন তারা, সেসব জানলে অবাক হতে হয়! চলুন জেনে আসি বিশ্বজুড়ে সন্তান লালন-পালনের অদ্ভুত কিছু রীতি -

মৌরিতানিয়ার বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানের মুখে থুতু দেয়

মৈারিতানিয়ার উওলোফ গোত্রের লোকেরা বিশ্বাস করে তাদের থুতু তাদের আশীর্বাদকে ধরে রাখে! তাই তারা তাদের শিশুদের শরীরে থুতু লেপে দেয়। মায়েরা সাধারণত বাচ্চাদের মুখে এবং বাবারা বাচ্চাদের কানে ও মাথায় থুতু লেপে দেয় যাতে বাবা-মার আশীর্বাদ জীবনজুড়ে সন্তানদের সাথে থাকে। 

উওলোফ গোত্রের লোকেদের বিশ্বাস- থুতু তাদের আশীর্বাদকে ধরে রাখে!

নরওয়ের বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের বরফশীতল তাপমাত্রায় বাড়ির বাইরে ঘুম পাড়িয়ে রাখে

নরওয়েতে বাবা-মায়েরা তাদের ছোট্ট হামাগুড়ি দেওয়া বাচ্চাদের বাড়ির বাইরে খোলা জায়গায় স্ট্রলারে করে রেখে আসে। শীতের প্রচন্ডতায় বাইরে দাঁড়িয়ে থাকাও দায়, ঘরে এসে গরম খাবার বা পানীয় খেতে হয়; সেখানে তারা বাচ্চাগুলোকে বাইরের ঠান্ডা আবহাওয়ায় রেখে দেয়! তারা বিশ্বাস করে এই বরফশীতল ঠান্ডা হাওয়া তাদের বাচ্চাদের আরও বেশি সহনশীল করবে এবং বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করবে।

কেনিয়ার মায়েরা কখনো তাদের সন্তানদের চোখের দিকে তাকায় না

কেনিয়ান মায়েরা যদিও নিজেদের বাচ্চাদের প্রতি খুবই যত্নশীল, তবু তারা খুব কমই বাচ্চাদের চোখের দিকে সরাসরি তাকায়। যখনই বাচ্চারা তাদের দেখে বেশি আহ্লাদ করে, মায়েরা তাড়াতাড়ি বাচ্চাদের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়। এ উপায়ে তারা বাচ্চাদের স্বনির্ভরশীলতার শিক্ষা দেয়!

বাচ্চাদের স্বনির্ভরশীলতার শিক্ষা দিতে তারা কেনিয়ান মায়েরা এমনটি করে থাকে

ভিয়েতনামের বাবা-মায়েরা তাদের বাচ্চাদের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রস্রাব করার ট্রেনিং দেয়

ভিয়েতনামের মায়েরা যখনই বুঝতে পারে যে তার বাচ্চার প্রস্রাব করার সময় হয়েছে তখনই তারা মুখ দিয়ে এক ধরণের শব্দ করে। জন্মাবার পর থেকে এই শব্দ শুনে বাচ্চারা এতটাই অভ্যস্ত হয়ে যায় যে, নয় মাস বয়স হতেই এই শব্দ শুনলেই তারা বুঝতে পারে যে প্রস্রাব করার সময় হয়েছ। এভাবে খুব তাড়াতাড়িই একা একা টয়লেট ব্যবহার শিখে যায় বাচ্চাগুলো।

মায়ান বাবা-মায়েরা তাদের শিশুদের বরফ পানিতে গোসল করায়

মায়ান বাবা-মায়েরা তাদের বাচ্চাদের ঘুমোতে যাবার আগে বরফ-শীতল ঠান্ডা পানিতে ‍চুবিয়ে গোসল করায়। অসহনীয় গরম থেকে বাচ্চাদের রক্ষা করতে এবং তাদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে তারা এ পদ্ধতি অবলম্বন করে।

ফিনল্যান্ডের শিশুদেরকে পুরুশক্ত কাগজের বাক্সে ঘুম পাড়ানো হয়

বাচ্চা জন্মাবার পরপর রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ফিনল্যান্ডের বাবা-মাদের বাচ্চার দরকারি জিনিসপত্রে পূর্ণ একটি কাগজের বাক্স দেওয়া হয়। বক্সটির মধ্যে অনেক জিনিসপত্রের সাথে একটি গদিও থাকে, যাতে দরকারি জিনিসপত্রে ভরা সেই বাক্সটিই বাচ্চার প্রথম বিছানা হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

জাপানের শিশুরা অনেক কিছুই খায়, কিন্তু কখনও মোটা হয় না

জাপানী বাবা-মায়েরা তাদের বাচ্চাদের খাবারের প্রতি খুবই যত্নশীল। প্রতিবেলার খাবারের সাথে কি কি উপাদান থাকছে তা তারা খুব ভালোভাবে খেয়াল রাখে। বাচ্চাদের স্কুলের ক্যান্টিনেও এ ব্যাপারে কড়া নজরদারি রয়েছে। তারা সব সময় লক্ষ্য রাখে বাচ্চারা যাতে সুষম খাদ্য খায়। বাচ্চাদের খাবারে প্রচুর শাকসব্জি থাকে এবং বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদানও প্রচুর পরিমাণে থাকে। একারণে জাপানী শিশুরা সু্স্বাস্থ্যের অধিকারী হয়।

জাপানী বাবা-মায়েরা সব সময় লক্ষ্য রাখে বাচ্চারা যাতে সুষম খাদ্য খায়

ডেনমার্কের শিশুরা তাদের পেসিফায়ারগুলো গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখে

ডেনমার্কে শিশুদের বয়স যখন তিন বছর হয়ে যায় এবং তারা পেসিফায়ার (শিশুদের চুষার জন্য প্লাস্টিক বা রাবারের খেলনা নিপল) নিয়ে খেলা বন্ধ করে দেয়, তখন সেটি ফেলে না দিয়ে, বিশেষ একধরণের গাছের উঁচু ডালে পেসিফায়ারগুলোকে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এভাবেই তারা তাদের ছোট্টবেলায় প্রিয় খেলার সাথীকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেয়!

আর্মেনিয়ার শিশুরা খুব অল্প বয়সেই তাদের পেশা পছন্দ করে ফেলে

আর্মেনিয়ান শিশুদের যখন সবেমাত্র প্রথম দাঁত উঠা শুরু করে, তখন বাবা-মায়েরা সেখানকার রীতি অনুযায়ী তাদের সামনে বিভিন্ন ধরনের খেলনা ছড়িয়ে রাখে। শিশুরা সেই খেলনাগুলোর মধ্যে থেকে যে খেলনাটার প্রতি বেশি আগ্রহ দেখায়, সেটাই শিশুদের ভবিষ্যৎ পেশা হবে বলে মনে করা হয়। যদি কোন বাচ্চা বইয়ের প্রতি আগ্রহ দেখায় তবে সে জ্ঞানী ব্যক্তি হবে, টাকা নিয়ে খেললে ব্যাংকার এবং ছুরি নিলে ডাক্তার হবে বলে মনে করা হয়! 

ব্রাইটসাইড অবলম্বনে

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা