এই অবস্থা আমার দেশেও শুরু হয়ে গেছে। অলরেডি দোকানে দেখি মানুষজন গণহারে হ্যান্ডওয়াশ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার কেনা শুরু করে দিয়েছে।
মুহাইমিনুল ইসলাম অন্তিক: 'প্যানিক বায়িং' নামে একটা টার্ম আছে, শুনছেন? না শুনলেও ঠিকই দেখছেন কিন্তু! মাসখানেক আগে লবণের দাম বৃদ্ধির গুজবে মানুষ কেমনে লবণ কেনার জন্য দোকানে হুমড়ি খেয়ে পড়ছিল মনে আছে? অবশ্যই মনে থাকার কথা। কেন তারা এটা করছিল বলেন তো। সহজ করে বললে, মানুষ ভয় পাইছিল লবণের দাম বাড়া নিয়ে। তাই সে লবণ কিনে নিজেকে/নিজের পরিবারকে সেফ করতে চাইছিল। এটাই আসলে 'প্যানিক বায়িং'। কোনো কিছুর ভয়ে (সেটা হুট করে দাম বাড়া, প্রোডাক্টের কমতি দেখা দেয়া ইত্যাদি যেকোনো ভয়ই হতে পারে) স্পেসিফিক কিছু জিনিস মানুষ বিশাল সংখ্যকভাবে কিনে রাখলে সেটাকেই আপনি প্যানিক বায়িং হিসেবে আখ্যায়িত করতে পারেন।
আমরা বর্তমানে এই প্যানিক বায়িংয়ের অদ্ভুত সব নজির দেখতেছি। এই যেমন কিছুদিন আগে অস্ট্রেলিয়াতে দেখলাম টয়লেট পেপার সব শেষ হয়ে যাইতেছে স্টোরগুলা থেকে। শেষ তো শেষই, কে কার আগে নেবে সেটা নিয়ে কাড়াকাড়ি, হাতাহাতির খবর পর্যন্ত দেখলাম।
শুধুই কি টয়লেট পেপার! এই প্যানিক বায়িং এখন প্রয়োজনীয় নানা দ্রব্যের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে। বিজনেস ইনসাইডারের সৌজন্যে আমেরিকায় প্যানিক বায়িংয়ের একটা স্ট্যাট শেয়ার করি, যেটা দেখলে বুঝবেন কেন এই বিষয়টা নিয়ে এত প্যাচাল পারতেছি। গত ২ মার্চ প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে দেশটায় বিভিন্ন জিনিসের বিক্রি শুধু এই করোনাভাইরাস উপলক্ষে কত শতাংশ বাড়ছে তা উল্লেখ করা আছে-
ওট মিল্ক ৪৪১%, মেডিকেল মাস্ক ৪২৮%, থার্মোমিটার ২৮%, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ২০%, ফ্রুট স্ন্যাক্স ১০.৪%, বিড়ালের খাবার ৭.৫%, স্যানিটারি প্যাড ৭%, টয়লেট পেপার ৫.৪%, পানি ২.৪% ইত্যাদি। কথা হলো, এই স্ট্যাট ২৫ জানুয়ারির। সম্প্রতি যেহেতু দেশটায় করোনাভাইরাস আরও ছড়াচ্ছে, তাই এই সংখ্যাগুলো যে এখন স্পাইকের মতো দেখাইতেছে তাতে কোনোই সন্দেহ নাই।
এই অবস্থা আমার দেশেও শুরু হয়ে গেছে। অলরেডি দোকানে দেখি মানুষজন গণহারে হ্যান্ডওয়াশ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার কেনা শুরু করে দিয়েছে। মাস্কের দাম তো মাসখানেক ধরে এলন মাস্ক সাহেবের স্পেস-এক্সে চড়ে মার্সে চলে গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম এখন বাড়লে খুব একটা আশ্চর্য হবার কিছু থাকবে না। কারণ, আমাদের দেশে কোনো একটা অজুহাত দাঁড় করিয়ে সুবিধাভোগীর সংখ্যা তো কম না।
কিছুদিন পরে যদি তাই দেশের বাইরের মতো আমাদের দেশেও নানা জিনিস কিনতে মুদি দোকানের সামনে হুড়াহুড়ি লাগে, সুপারশপে বিশাল লাইন লাগে কিংবা দুই আন্টি মিলে চুলাচুলি করে, তাইলেও আসলে খুব একটা আশ্চর্য হব না আমি। আসলে, এমন বিপদগুলা আমাদের ভেতরে থাকা বেঁচে থাকার আদিমতম প্রবৃত্তিগুলারে বের করে আনে!