এই সেতুটা আসলেই পদ্মাপাড়ের মানুষের জন্য একটা আবেগ, একটা উচ্ছ্বাসের নাম। শত শত বছরজুড়ে পদ্মায় এত এত লঞ্চডুবি, এত মানুষের দুর্ভোগ- আমি জানি সব এবার উবে যাবে...

আর দশটা দিনের চেয়ে আজকের দিনটা হয়তো আলাদা নয়, আবার আলাদাও। কারণ আজ সকালেই বসে গেছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সর্বশেষ স্প্যানটি। নিজেদের টাকাতেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু।

আহা পদ্মা সেতু! কতো ঘটনা এই এক সেতু নিয়ে। কতো কিছুর স্বাক্ষী আমি, আমরা, এই দেশ! পাঁচ বছর আগে ১২ ডিসেম্বর যেদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মূল সেতুর কাজের উদ্বোধন করেন, আমি সেদিন ছিলাম। পরদিন ১৩ ডিসেম্বর প্রথম আলোয় আমার করা মূল শিরোনামের নিউজটা ছিল স্বপ্নের সেতু ঘিরে উচ্ছ্বাস।

এই উচ্ছ্বাসের আগে পরে ছিল বহু শঙ্কাও! সেতু ঘিরে সাবেক মন্ত্রী আবুল হোসেন, এরপর বিশ্বব্যাংকের কাণ্ড সব মনে আছে। কিন্তু দমে যাওয়ার বদলে বাংলাদেশ যেভাবে নিজেই এই সেতু করার সাহস দেখালো সেটা এক বিরাট শক্তি। আমি মনে করি এই এক ঘটনা বিশ্ব রাজনীতিতে বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছে! ২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজের পুরো এলাকাটা ঘুরে এসে লিখেছিলাম, সেতুর জন্য প্রস্তুত পদ্মা।

১২ ডিসেম্বর ২০১৫। সেতুর মূল কাজের উদ্বোধনের সেই দিনটার কথা আমার বেশ মনে আছে। ঢাকা থেকে আমি আর প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক রাজা ভাই সেদিন গিয়েছিলাম। আমার মনে আছে, চারপাশ থেকেই মানুষ আসছিল সেদিন পিলপিল করে উদ্বোধনের কাজ দেখতে। এমনকি পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের অনেক চীনা নাগরিককেও সেদিন উচ্ছাস করতে দেখেছি।

আসলেই পদ্মা সেতু একটা উচ্ছ্বাসের নাম। সেতুটা যেখানে হচ্ছে, গত একযুগ ধরে প্রতি বছরের ডিসেম্বরে আমি সেখান দিয়ে ফরিদপুরের ভাঙায় আমাদের গ্রামের বাড়িতে গিয়েছি। পুরো কাজটাই আমার চোখের সামনে দেখা। সাংবাদিক হিসেবে তো পুরো সেতু এলাকা ঘুরে দেখার সুযোগ পেয়েছি বেশ কয়েকবার। সর্বশেষ গিয়েছিলাম গত সপ্তায়। নদীর মাঝখানে মাথা উঁচু করে যেন দাঁড়িয়ে আছে পদ্মা।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু

আমার মনে আছে, পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যানটি খুঁটির ওপর বসেছিল ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। এরপর একে একে আরও ৪০ টি স্প্যান। সময় টিভিতে কাজ করা আমার বন্ধু জুয়েল তো মনে হয় প্রতিটা স্প্যানেরই নিউজ করেছে। আমার বেশ লেগেছে। কারণ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে এই সেতু একটা আবেগের নাম।

ভাবতেই ভালো লাগছে আজ ৪১তম স্প্যান বসানোর পর পুরো সেতুটি একসাথে দৃশ্যমান হচ্ছে। এই স্প্যান বসানোর পর কনক্রিটের স্ল্যাব বসবে, এরপর পিচঢালাই করা হবে। চলবে রেলের কাজও।

যারা সম্প্রতি পদ্মা সেতু এলাকায় যাননি, ঘুরতে যেতে পারেন। ঢাকা থেকে যেতে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট, নদীর ওই পাড়ে মাদারীপুরের শিবচর সেতুর টোলপ্লাজা, ভাঙায় দারুণ সব রাস্তা সব মিলিয়ে এই এলাকায় গেলে মনে হবে ভিনদেশ। নদী থেকে দোতলা এই সেতুটা দেখতেও দারুণ লাগে।

এই সেতুটা আসলেই পদ্মাপাড়ের মানুষের একটা আবেগ। এই যে শত শত বছরজুড়ে পদ্মায় এতো এতো লঞ্চডুবি, এতো এতো মানুষের দুর্ভোগ- আমি জানি সব উবে যাবে। ঢাকা থেকে ভাঙ্গায় আমাদের গ্রামের বাড়ি যাওয়া যাবে এক ঘন্টারও কম সময়ে। এমন ব্যক্তিগত অনেক গল্পই নিশ্চয়ই তৈরি হবে।

আমি তো মনে করি এই সেতু উদ্বোধনের পর পুরো বাংলাদেশই বদলে যাবে। ভেবে দেখেন, মোংলা বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে ঢাকার সরাসরি যোগাযোগ হবে। ব্যবসা-বানিজ্যসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের জীবন বদলে যাবে। এখানে তৈরি হবে নিত্য নতুন সম্ভাবনা।

আজ বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে ফের বলি উন্নয়নের পাশাপাশি সুশাসন, গণতন্ত্র আর মানবিকতা থাকলে এই বাংলাদেশকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। বরং রোজ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। আর সেই আশা নিয়েই রোজ বলি... শুভ সকাল বাংলাদেশ।

ছবি কৃতজ্ঞতা- প্রথম আলো

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা