অপারেশন জ্যাকপট: মুক্তিযুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া অসমসাহসী এক জলযুদ্ধ!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
আটজন বাঙ্গালী নৌ-অফিসার ফ্রান্স থেকে দেশে পালিয়ে এসে শুরু করলেন এক বিশেষ অপারেশনের প্রস্তুতি; অপারেশন জ্যাকপট। নিশ্চিত মৃত্যু ধরে নিয়েই তারা নেমে পড়লেন অসাধ্য সাধনে। যে রুদ্ধশ্বাস ঘটনা এখনো রক্তে উত্তাপ ধরায় অজস্র বাংলাদেশীর!
বিজয় দিবসে একটা আক্ষেপের কথা শোনাই। আমরাই মনে হয় ইতিহাসের একমাত্র জাতি, যারা নিজেদের ইতিহাস নিয়ে খুব একটা আগ্রহী নই। বিভিন্ন মতের ও পথের পথিক হয়ে আমাদের কাছে ইতিহাস আসে বিভিন্ন মোড়কে, আঙ্গিকে, অবয়বে। আমরা সত্য-মিথ্যার যাচাই-বাছাই না করেই নিজেদের মত ইতিহাস বিকৃতি করি৷ মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, সংগ্রাম, লড়াই... এগুলো ঢেকে যায় রাজনৈতিক নানা সর্পিল প্যাঁচে।
আমাদের ড্যাম কেয়ার ক্র্যাক প্লাটুন এর কথা আমরা কয়জন জানি? খালেফ মোশাররফ কে চিনি কয়জন? তাজউদ্দীন আহমেদের আত্মত্যাগের কাহিনীও বা কয়জন পড়েছি? অপারেশন জ্যাকপট এর সেই রুদ্ধশ্বাস থ্রিলারের গল্পও বা জানি কে কে? হয়তো হাতে গোনা কয়েকজন জানি। তবে যা জানি, তাও নানারকম মালমশলায় জর্জরিত হতে হতে পরিনত হয়েছে বিস্বাদ এক বস্তুতে।
কখনো কী মনে প্রশ্ন আসে না, বিজয়ের এত বছর পরেও আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটা আন্তর্জাতিক সিনেমা কেন নির্মিত হলো না? কেন মুক্তিযোদ্ধাদের সেভাবে প্রচার করা হলো না, যেভাবে করা দরকার? বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের হ্যান্ড টু হ্যান্ড কমব্যাটের গল্প কেন আমাদের ছেলেমেয়েরা জানতে পারলো না? কেন যুদ্ধাপরাধীর বিচার করতে গেলে আজও দাঁড়িয়ে যায় একাধিক বিরোধী পক্ষ? কেন আজও স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের পতাকা হাতে নিয়ে উল্লাস করে কোনো বাঙ্গালী তরুণ? আক্ষেপের কথা বললে শেষ হবে না মোটেও। জীবনানন্দ দাশ তো বলেই গিয়েছেন-
কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে!
বিজয়ের দিনে আক্ষেপ নাহয় থাকুক মগডালে। আজকে বরং অপারেশন জ্যাকপটের গল্প বলি। যে রক্ত-গরম অপারেশন মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের। কিছু দেশপাগল মানুষের যে গল্প টানটান কোনো থ্রিলার উপন্যাসের চেয়েও একধাপ এগিয়ে। যে গল্পের পরতে পরতে চমক আর নাটকীয়তার জমজমাট আধিপত্য!
গল্পের শুরু আটজন মানুষকে নিয়ে। যারা প্রত্যেকেই ছিলেন পাকিস্তানী নৌবাহিনীতে কর্মরত জাঁদরেল বাঙ্গালী অফিসার। তবে তাদের মূল গল্পে যাওয়ার আগে রয়েছে ছোট্ট একটু ভূমিকা। সময় ১৯৭১ সাল। মার্চ মাস। আমাদের গল্পের শুরু পাকিস্তানের শক্তিশালী সাবমেরিন পিএনএস ম্যাংরোর ভেতর থেকে। পাকিস্তানের বিখ্যাত সাবমেরিন পিএনএস ম্যাংরোর নাম অনেকেই শুনেছেন। যে সময়ের কথা বলছি, সে সময়ে সাবমেরিনটি নোঙ্গর করা ছিলো দক্ষিন ফ্রান্সের তুলন শহরের ডকইয়ার্ডে। সাবমেরিনে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন নৌবাহিনীর ৪৫ জন অফিসার। যাদের মধ্যে ১৩ জনই বাঙ্গালী!
ঢাকার বুকে কয়েকদিন আগেই হয়ে গিয়েছে অপারেশন সার্চলাইট। রাতের আঁধারে দাঁতালো ড্রাকুলারা বসিয়েছে রক্ত-কামড়। সাবমেরিনে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন যে তেরোজন বাঙ্গালী অফিসার, তাদের মধ্যে একজন তখন ভেতরে ভেতরে ক্রোধে ফুঁসছেন। পাকিস্তানীদের কিভাবে উচিত শিক্ষা দেয়া যায়, উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছেন। মানুষটির নাম মোঃ আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী। তিনি পিএনএস ম্যাংরোর সাবমেরিনার। তিনি ভাবলেন, এখানকার বাঙ্গালী অফিসারদের নিয়ে একসাথে পরামর্শ করে এরপর দেশে ফিরতে হবে৷ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে হবে৷ এমন কিছু করতে হবে, যাতে পাকিস্তানীদের অবস্থা হয়ে যায় চরমপত্রের সেই শব্দের মতন 'ছ্যাড়াব্যাড়া।'
আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী তার পরিকল্পনামত এগোতে লাগলেন। তিনি প্রত্যেক অফিসারের সাথে আলাদা আলাদাভাবে কথা বলতে লাগলেন এবং তার পরিকল্পনা জানাতে লাগলেন৷ তিনি একসাথে একজনের সাথেই কথা বলতেন৷ যাতে করে কেউ তাকে সন্দেহ না করে।
ওয়াহেদ ছিলেন সাবমেরিনের সিন্দুকের দায়িত্বেও। সব বাঙ্গালী অফিসারকে ফ্রান্স থেকে পালিয়ে দেশে ফেরার বিষয়ে রাজি করানোর পরে তিনি গোপনে তাদের পাসপোর্টগুলো সরিয়ে রাখেন সিন্দুকে৷ অপেক্ষা করতে শুরু করেন, কখন সুযোগ আসবে, কখন তিনি পালাবেন বাঙ্গালী অফিসারদের নিয়ে৷ ওয়াহেদ বুঝেছিলেন, ফ্রান্সে তাদের বেশিদিন থাকা নিরাপদ না৷ কারন, পাকিস্তানের সাথে ফ্রান্সের ভালো সম্পর্ক। তাই তাদের প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্যে ফ্রান্সে থাকা সমূহ বিপদ। বরং সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় যাওয়াটাই হবে সঠিক সিদ্ধান্ত। কারন, জেনেভা তখনও একাত্তরের যুদ্ধ নিয়ে খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি৷ নিরপেক্ষ অবস্থানেই আছে। তাই ফ্রান্স থেকে পালিয়ে জেনেভা, সেখান থেকে থেকে তারা কোনোভাবে ভারতে চলে যাবে, সেখান থেকে বাংলাদেশে, এটাই তাদের প্ল্যান।
ওয়াহেদের সিন্দুক থেকে পাসপোর্ট নিয়ে খণ্ড খণ্ড দলে ভাগ হয়ে অফিসারেরা পালাতে লাগলেন দুই একদিনের ভিতরেই। সর্বসাকুল্যে আটজন পালাতে পারলেন। বাকিরা আটকে গেলেন সাবমেরিনেই। এই পালিয়ে যাওয়া আটজন অফিসারও পালাতে গিয়ে আটকে পড়লেন ফ্রেঞ্চ সীমান্তে। সীমান্তে কর্তব্যরত কর্মকর্তারা জানালেন, ফ্রান্স থেকে সুইজারল্যান্ড যেতে হলে ভিসা লাগবে। শুধু পাসপোর্ট নিয়ে যাওয়া যাবে না।
অগত্যা, বাধ্য হয়ে, আটজন অফিসার তখন চলে গেলেন স্পেনে। স্পেনে যাওয়ার পেছনে কারন ছিলো। সে কারন হচ্ছে, ফ্রান্স থেকে স্পেনে যেতে কোনো ভিসা লাগতো না। স্পেনের লিওনে পৌঁছে তারা খুব তাড়াতাড়ির মধ্যে যোগাযোগ করেন সেখানের ভারতীয় দূতাবাসের সাথে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই তাদের কাগজপত্র রেডি হয়। এরপর দুই একটা বিক্ষিপ্ত ঘটনার পর তারা স্পেন থেকে চলে আসেন জেনেভায়। সেখান থেকে বোম্বের (বর্তমান মুম্বাই) উড়োজাহাজে সওয়ার হয়ে ভারত।
ততক্ষণে অবশ্য খবর রটে গিয়েছে, ফ্রান্স থেকে পালিয়ে ভারতে ফিরছেন বাংলাদেশের আটজন নৌবাহিনী অফিসার। এদিকে এই খবর জানতে পেরে ফ্রান্সের পাকিস্তানী বাহিনী তৎক্ষনাৎ পিএনএস ম্যাংরোতে আটকে পড়া এক বাঙ্গালী নৌ-অফিসারকে মেরে ফেলে। বাকি বাঙ্গালী অফিসারদের কী হয়েছে, তা জানা যায় নি আর।
যাই হোক, দেশে ফিরে আসার পরে এই আটজন অফিসার কিছুদিন সময় নেয় লোকবল যোগাড় করতে। সে সাথে কীভাবে পাকিস্তানিদের আক্রমন করা হবে, তা নিয়েও পরিকল্পনা শুরু হয়। রেকি করা হয় বিভিন্ন জায়গায়। সিদ্ধান্ত নেয়া হয়- বাংলাদেশের চারটি গুরুত্বপূর্ণ নৌ-পথ; দুটি সমুদ্র বন্দর- চট্টগ্রাম ও মংলা এবং দুটি নদীবন্দর- চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জ কে অপারেশন জোন বানানো হবে। চারটি অপারেশন জোনে ১৪৮ জন নৌ-কমান্ডোকে পাঠানো হবে। সড়কপথে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের মত লড়াই করছে। আকাশপথ ভারতীয় সেনাবাহিনী ইতোমধ্যেই দখল করেছে। বাকি থাকে- নৌপথ। পাকিস্তানিদের সৈন্য, খাবার, অস্ত্রশস্ত্র, অন্য দেশের সাহায্য সব আসে এই নৌ-পথে। তাই এদিকেই আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেয় অপারেশন জ্যাকপটের কুশীলবেরা।
তাদের সাথে ক্রমশ যুক্ত হয় আরো কিছু মানুষ। কর্নেল ওসমানী পরবর্তীতে তাদের সাথে যুক্ত হয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করেন। তিনি এই বাহিনীকে ডাকতেন নৌ-সেক্টর। পরবর্তীতে নদীয়া জেলার ভাগীরথী নদীর তীরে নৌ-সেক্টরের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প খোলা হয়। ক্যাম্পের কোডনেম দেয়া হয় সি-টু-পি। এই সি-টু-পি ক্যাম্পে প্রায় তিনশো জন যোদ্ধা ট্রেনিং নেয়া শুরু করে। অদ্ভুত ভয়ঙ্কর ট্রেনিং চলতে থাকে নদীয়া জেলার পলাশী স্মৃতিসৌধের পাশে ভাগীরথীর তীরে সেই পাণ্ডববর্জিত জায়গায়! শুরু হয় অপারেশন জ্যাকপটের হাড়মাস এক করা ট্রেনিং। জীবন-মৃত্যু তুচ্ছ হয়ে যায় যে ট্রেনিং এর ব্যাপকতার কাছে।
যেহেতু নৌপথে অপারেশন হবে, তাই যোদ্ধারা যাতে পানির মধ্যে অভ্যস্ত হতে পারে, তাই তাদের ঘন্টার পর ঘন্টা পানিতে রাখা হয়। এমনও হয়েছে, টানা তিন দিন ধরে তারা পানিতে। এই অপারেশনের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ ধরা হচ্ছিলো, বুকে এক্সপ্লোসিভ বেধে ডুবসাতারে শত্রুজাহাজের কাছে গিয়ে সেই এক্সপ্লোসিভ সেট করে দিয়ে আসা। এই কাজ যাতে যোদ্ধারা ঠিকভাবে করতে পারে, তাই তাদেরকে বুকে কয়েক কেজি ওজনের পাথর বেধে সাঁতার কাটতে হতো। সাঁতার কাটতে কাটতে মাইন ব্যবহার, জাহাজের কানেকটিভি নষ্ট করার মেকানিজম, নিজের অস্তিত্ব জানান না দিয়ে দ্রুতগতিতে সাঁতার কাটা, ঘন্টার পর ঘন্টা পানিতে ভেসে থাকা... অজস্র সব টেকনিক শেখানো হয় টানা তিনমাস ধরে। এছাড়াও হ্যান্ড টু হ্যান্ড কমব্যাট, বুবি ট্র্যাপ, ক্যামোফ্লেজ, গ্রেনেড-স্টেনগান-রিভলবার চালানো... এগুলোতেও দক্ষ করা হয় তাদের। মজার ব্যাপার হলো, এখানে কোন ধরণের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে, তা আগে থেকে কাকপক্ষীকেও জানানো হতো না। এতটাই গোপনীয়তা ছিলো সেখানে। তাছাড়া যোদ্ধাদের এটাও জানিয়ে দেয়া হয়েছিলো- অপারেশন জ্যাকপট হতে যাচ্ছে একটি সুইসাইডাল মিশন। তাই মৃত্যুর জন্যেই প্রস্তুত থাকতে হবে এখানে। বেঁচে গেলে, সেটা ভিন্ন হিসেব। মৃত্যুই স্বাভাবিক এই মিশনে। মৃত্যু ব্যতীত অন্য কোনো রাস্তা যেন কেউ না ভাবে।
ট্রেনিং কমপ্লিট করার পরে সব যোদ্ধাকে নিয়ে যাওয়া হয় ত্রিপুরায়। সেখানে নির্দেশ দেয়া হয় আরেক দফা। কোন দলের সাথে কে কে যাবে, তা বলে দেয়া হয়। তবে পুরো মিশনটা কিরকম হবে, তা কোনো যোদ্ধার কাছে জানানো হয় না। ঝুঁকি এড়ানোর জন্যেই এরকমটা করা হয়। কোনো যোদ্ধা শত্রুপক্ষের কাছে ধরা পড়ার পরে টর্চারের মুখে অপারেশনের ব্যাপারে যাতে কিছু জানাতে না পারে , তাই তাদেরকে পুরোপুরি তথ্য না জানানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কমান্ডোদের চারটি ভাগে ভাগ করা হয় এবং প্রত্যেক ভাগের জন্যে একজন লিডার নির্বাচিত করে তাদের পাঠিয়ে দেয়া হয় আগে থেকে নির্বাচিত চারটি গুরুত্বপূর্ণ স্পটে। সিদ্ধান্ত হয়, এই স্পটগুলো থেকেই কমান্ডোরা নৌপথে আক্রমণ চালাবেন।
তবে অপারেশন জ্যাকপট ঠিক কবে শুরু হবে, তা জানতো না কেউ। এমনকী জেনারেল ওসমানীও জানতেন না সেটি। তবে এটা ধারনা করা হচ্ছিলো, ১৪ই আগস্ট পাকিস্তান স্বাধীনতা দিবসের আগে অথবা পরে কোনো একটা সময়ে হয়তো আক্রমণ করা হবে। এখানেও করা হয় একটি অভিনব কাজ৷ কখন আক্রমণ শুরু হবে, তার জন্যে দুটি গান বাছাই করা হয়। যে গান আকাশবাণীতে প্রচারিত হলেই শুরু করতে হবে অপারেশন। প্রথম গান ছিলো- আমার পুতুল যাবে শ্বশুরবাড়ি। এই গান শুনলে বুঝতে হবে আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে আক্রমণ করতে হবে। সবাই প্রস্তুত হও। দ্বিতীয় গান ছিলো- আমি তোমায় শুনিয়েছিলাম যত গান। এই গানের অর্থ- অপারেশন শুরু করো। ১৩ ও ১৪ আগস্ট গান দুটি বাজানো হয়। এই গান যে সংকেত, তা শুধু জানতেন অপারেশন কমান্ডারেরা৷ এই গান শোনার পরেই কমান্ডারদের নেতৃত্বে শুরু হয় অপারেশন জ্যাকপট।
একযোগে চট্টগ্রাম, মংলা, চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জে আক্রমণ করে কমান্ডোরা। চট্টগ্রামে অপারেশনে তারা তিনটি অস্ত্র বহনকারী জাহাজ ধ্বংস করেন। ১৯০০০ টনের মত গোলাবারুদ ধ্বংস হয় পাকিস্তানিদের। এছাড়াও ছোট বড় আরো কয়েকটি নৌযান ধ্বংস হয় তাদের। মংলা অপারেশনে ৬টি বিদেশি জাহাজ ধ্বংস করে কমান্ডোরা। ৩০,০০০ টন গোলাবারুদ নষ্ট হয় পাকিস্তানিদের। অস্ত্রবাহী বেশকিছু জাহাজকে ডুবিয়ে দেয় তারা। চাঁদপুর অপারেশনে দশটির মত জাহাজ-স্টীমার ধ্বংস করে তারা৷ নারায়নগঞ্জে অপারেশনে ৪টি জাহাজের সলিলসমাধি ঘটায় তারা। ডিসেম্বর পর্যন্ত এ অপারেশন চলে। ৪৫টির মত নৌযান ধ্বংস করেন নৌ-কমান্ডোরা। পাকিস্তানী সেইফ চ্যানেলগুলোকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেন বাঙ্গালী বীরেরা। সে সাথে বাইরের পৃথিবীর কাছে এই বার্তাও চলে যায়, পাকিস্তানীরা বাঙ্গালীদের সাথে যা করছে, তার পালটা জবাব আসা শুরু হয়েছে। ভূ-রাজনীতিও তখন আস্তে আস্তে অন্য দিকে মোড় নেয়া শুরু করে।
অপারেশন জ্যাকপটে শহিদ হয়েছিলেন আট জন কমান্ডো, আহত হয়েছিলেন ৩৪ জন, আটক হয়েছিলেন ১৫ জন। তবে যোদ্ধারা জীবন-মৃত্যুর হিসেব করে যুদ্ধে নামে না কখনোই। আমরাও তাই সে হিসেবে না যাই বরং। বরং বিজয়ের এই দিনে একটু বুকভরে শ্বাস নেই। একটু বাংলায় কথা বলি। একটু বাংলাদেশের পতাকার দিকে তাকাই। নিজের মনে মনেই একটু নাহয় বলি-
এই দেশটা আমার
মুক্তিযোদ্ধারা এটুকুই চেয়েছিলেন। 'আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে'র মতন তারা চেয়েছিলেন, পরবর্তী প্রজন্ম যেন বৈষম্যে না বড় হয়, যেন বিজাতীয় ভাষার নীচে পিষ্ট না হয়, যেন শোষনের বস্তু না হয়। সেই চাওয়া থেকেই এত এত রক্ত, মৃত্যু আর বিচ্ছেদের গল্প। আমরা যেন এই মানুষদের ভুলে না যাই। আমরা যেন আমাদের ইতিহাসকে না ভুলে যাই। পূর্বপুরুষদের আত্মত্যাগের সাথে বেইমানি যেন না করি। এটাই থাকবে প্রত্যাশা।
সবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন