'মেন্টাল হেলথকেয়ার' এর নামে নেক্সিয়াম নামের সংস্থাটি চালাতো সেক্স কাল্ট। প্রভু-দাসীর পিরামিড মডেলে এখানে যৌন অত্যাচার চালাতেন কিথ র‍্যানিয়ারি। গর্ভবতী নারীদের গর্ভপাত ঘটানো, বছরের পর বছর ধরে সহস্র নারীকে সম্ভোগ, নারীদের নগ্ন করে তলপেটে চিহ্ন এঁকে দেয়া, পর্নোগ্রাফি... সব চলতো এখানে!

পর্দার আড়ালে আমাদের পৃথিবী ঠিক কতটা কদর্য, সেটা আমরা মাঝেমধ্যে টের পাই। আড়াল থেকে মাঝেমধ্যেই যখন বিচিত্র, বিকৃত তথ্য ও সংবাদ আমাদের সামনে আসে, তখন উপলব্ধি আসে, মলাটের আড়ালে কত কত ক্ষত! এই যেমন কিছুদিন আগে জানা গেলো নেক্সিয়াম সেক্স কাল্ট এবং এই কাল্টের গুরু কিথ র‍্যানিয়ারির কথা। এবং যেসব তথ্য উঠে এলো, তাতে শিউরে উঠলাম। এবং পুরোটা শুনলে শিউরে উঠবেন যে কেউ।

কিথ র‍্যানিয়ারি, যিনি নেক্সিয়াম সেক্স কাল্টের গুরু, তিনি নিজেকে আইনস্টাইন ও মহাত্মা গান্ধী পর্যায়ের জিনিয়াস বলে ভাবতেন। বিভিন্ন বয়সী নারীদের স্পর্শকাতর ছবি বা ভিডিও সংগ্রহ করে, সেগুলো ব্যবহার করে সেসব নারীদের ব্ল্যাকমেইল করতেন তিনি। নারীদের ব্ল্যাকমেইল করে, তাদের ব্রেইনওয়াশ করে এরপর সেই নারীদের সাথেই যৌনমিলন করতেন।

র‍্যানিয়ারির 'নেক্সিয়াম' বাইরের দুনিয়ার কাছে ছিলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান যারা একটি উন্নত পৃথিবী গড়ার জন্য কাজ করছেন। সত্যি বলতে মানুষ খুব বেশি অবিশ্বাসও করেনি তাদের কাজকর্ম।আলব্যানি ভিত্তিক এই গ্রুপটি নিজেদের বলতো, মানবিক নীতিমালায় পরিচালিত একটি কম্যুনিটি, যারা মানুষকে ক্ষমতাবান করতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো এবং মধ্য আমেরিকায় শাখা থাকা এই সংস্থা প্রায় ১৬ হাজারের বেশি ব্যক্তির সঙ্গে কাজ করছে নিয়মিত। সুতরাং র‍্যাকেটটি যে বেশ বড়, সেটা বোঝাই যাচ্ছে। মেন্টরিং এবং কাউন্সেলিং এর জন্যে চালু হওয়া এই নেক্সিয়ামের সাথে যুক্ত আছেন হলিউডের বিভিন্ন সেলিব্রেটিও। সবাইকে বলা হতো, নেক্সিয়াম একটি মেন্টাল কাউন্সেলিং এর অর্গানাইজেশন।

কিন্তু আদতে সত্যি হলো, নেক্সিয়াম ছিলো একটি পর্দা। যে পর্দার আড়ালে ঘটতো বর্বর সব কাজ। নেক্সিয়ামে কাজ করতে যে মহিলারা আসতেন, সে মহিলাদের প্রথমেই যে কাজ করতে হতো, সেটা হচ্ছে তাদের অথবা তাদের পরিবারের সদস্যদের স্পর্শকাতর ছবি দিতে হতো নেক্সিয়ামের কাছে। এটাই ছিলো চাকরিতে যোগদানের শর্ত। সে সাথে এটাও বলা হতো, এই সংগঠন পুরোপুরি মেয়েদের সংগঠন। তাই এই স্পর্শকাতর তথ্যগুলো বাইরে আসার ভয় নেই।  চাকরিতে যোগ দেয়ার জন্যে মরিয়া মেয়েরা এভাবেই যোগ দিতো নেক্সিয়ামে। তাদের স্পর্শকাতর তথ্যগুলোই তাদের জন্যে ফাঁদ হিসেবে কাজ করতো, র‍্যানিয়ারি এসব মেয়েদের জোর করে তার যৌনদাসী বানাতেন। তাদেরকে যৌন নির্যাতন করে পর্নোগ্রাফিও তৈরী করা হতো এখানে। এমনও হয়েছে অল্প বয়সী কোনো মেয়েকে আটকে রাখা হতো নেক্সিয়ামে। আঠারো বছর বয়স হওয়ার পর মেয়েটির কুমারিত্ব নিতো র‍্যানিয়ারি। আবার গ্রুপ সেক্স করতেও বাধ্য করতো অনেককে। অনেকে প্রেগন্যান্টও হয়ে পড়তো। তাদেরকে অ্যাবোরশন করানো হতো।

এখানেই শেষ নয়। নেক্সিয়ামের ভেতরে ছিলো 'ডস' নামের একটি ব্যবস্থা, যেখানে পিরামিড মডেলে যৌনদাস-প্রভু সিস্টেম ছিলো। এই পিরামিড মডেলে সবার উপরে থাকতেন র‍্যানিয়ারি, একমাত্র পুরুষ সদস্য। বাকিরা ছিলেন নারী এবং তারা সবাই দাসী। তাদের প্রত্যেকের সাথেই যৌনমিলন করতেন র‍্যানিয়ারি। এইসব নারীদের নিয়মিত ডায়েট কন্ট্রোলও করতে হতো, যাতে তারা শুকনো থেকে র‍্যানিয়ারির চাহিদা মেটাতে পারেন। গ্রুপের মহিলাদের তলপেটের একটি অংশ পুড়িয়ে রনিয়্যারির নামাঙ্কিত চিহ্ন বসিয়ে দেয়া হতো এবং সেগুলোর ভিডিও করা হতো। একটি বিশেষ অনুষ্ঠান করে সেখানে প্রত্যেক নারীকে নগ্ন করে এই সীল দিয়ে দেয়া হতো।

নারীদের তলপেটের চামড়া পুড়িয়ে এই সীল লাগিয়ে দেয়া হতো!

এরকম একটি অনুষ্ঠানের মধ্যেই র‍্যানিয়ারিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে এরপর আদালতে তোলা হয়। ছয় সপ্তাহ ধরে নিউ ইয়ার্কের আদালতে বিচারকাজ চলে। সমস্ত নথিপত্র ও তথ্য বিশ্লেষণ করে র‍্যানিয়ারিকে দোষী প্রমাণ করা সম্ভব হয়। সেক্স কাল্ট গুরু কিথ রনিয়্যারিকে ১২০ বছরের কারাদণ্ড দেয় আমেরিকার আদালত।  প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ ডলার জরিমানাও করা হয়। কাল্টের অন্যান্য নেতৃস্থানীয় সদস্যরা দোষ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন আদালতে।

এভাবেই শেষ হয়েছে এক বিষাক্ত সেক্স র‍্যাকেট ও কাল্টের। তবে এরকম কত সেক্স কাল্ট যে ছড়িয়ে আছে, লুকিয়ে আছে পর্দার আড়ালে, তার সঠিক সংখ্যা কে বলতে পারবে? কবে বলতে পারবে?

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা