করোনা ইনভেনশন: বাংলাদেশ থেকে ভারত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এক ইজি বাইক মিস্ত্রীর উদ্ভাবন!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
কোনো প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, কারিগরি সহায়তা ছাড়া ঝিনাইদহের ইজি বাইক মিস্ত্রী নয়ন তার উদ্ভাবনী মেধা দেখিয়েছেন। ভারতের মাহিন্দ্রা শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধার আনন্দ মাহিন্দ্রা নিজের টুইটার একাউন্টে প্রশংসা করেছেন তার। নিজের কোম্পানিতে উপদেষ্টা হিসেবে নিতে চাইছেন...
করোনার ক্রান্তিকালে এক অটো রিকশা মিস্ত্রীর অনন্য উদ্ভাবন! সহজ ভাষায় করোনা ইনোভেশন বলা যায় এটাকে। একটা সাধারণ ইজি বাইককে, চারটি চেম্বারে বিভক্ত করেছেন এক অটো রিকশার মিস্ত্রী। তিনি নিজেই ড্রাইভার।
সম্প্রতি একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ভিডিওটাতে দেখা যাচ্ছে, চারটা আলাদা গেটসহ আলাদের সিটের অটোরিকশা বা ইজিবাইক। যে যাত্রী যেভাবে চাইবে তাকে সেভাবেই আলাদা বসানো যাবে। যাত্রীদের মধ্যে কারো সাথে কারো সংযোগ থাকবে না। অর্থাৎ করোনায় সংক্রমণের সুযোগ তৈরি হচ্ছে না এই বাহনে। আর এটা উদ্ভাবন করেছেন ইজি বাইক মিস্ত্রী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম নয়ন।
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে প্রতিটা দেশই লকডাউনের পথে হাটছে। বন্ধ রাখা হচ্ছে গণপরিবহন। চলাচলে আরোপ করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়াতেও বিপাকে পড়েছেন অধিকাংশ মানুষ। কিন্তু এই মাঝে একটা অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করেন বাংলাদেশের ঝিনাইদহের ইজি বাইক মিস্ত্রী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম নয়ন।
করোনা মহামারিকে লক্ষ্য করে তিনি তার উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগিয়ে একটা বাহন তৈরি করেছেন। তার নিজেরই সেসময় করা মতো কিছু ছিলো না। কাজকর্ম ছাড়া এক প্রকার মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন। কারণ লোক চলাচল না করলে তার নিজের পেশাটেই হুমকির মুখে পড়ে যায়। যারাই বের হচ্ছিলো, সবাই পায়ে হেঁটেই চলাচল করছিলেন।
গনপরিবহণে চলাফেরা করাটাই যেন নিজের মৃত্যুর পরোয়ানা নিজেই পাঠানো। এই একসাথে পাশাপাশি বসে চলাফেরা করাটাই এখন কতটা আতঙ্কের সেটা লকডাউনে থাকা লোকজন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। সবার চলাফেরা নিশ্চিত করতেই নয়ন ভাই এই কাস্টম মেইড ইজি বাইকটি তৈরি করেন। তার দাবি, শুধু ইজি বাইকেই নয়। প্রায় প্রত্যেকটা যানবাহনেই এমন ব্যবস্থা করা যাবে। ইজি বাইক থেকে শুরু করে, ভ্যান রিকশা, সিএনজি, লেগুনা- এমনকি বাসেও দুইটা সিট মিলিয়ে একটা কেবিন বানানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশের প্রায় সকল প্রত্যন্ত অঞ্চলেই দেখা মেলে এসব যানবাহনের। নামে ইজি বাইক হলেও, এটা মূলত ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা। বিদ্যুতের অপচয় রোধ করতেই এসব যানবাহনকে অবশ্য নিরুৎসাহিত করছে প্রশাসন। তবে সরকারি সাহায্য পেলে, এই যানবাহনগুলোকে আধুনিকায়নের কথাও ভাবছেন নয়ন ভাই। পরিবহন শ্রমিকদের জন্য একটা নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে এ ধরণের উদ্যোগ, এমনটাই ভাবছেন তিনি। তার উদ্ভাবন কাজে লাগালে, বাংলাদেশকে থেমে থাকতে হবে না। ‘আমার দেশ সোনার বাংলাদেশ চলতেই থাকবে’- এভাবেই নিজের দৃঢ় সংকল্পের জানান দেন তিনি।
ঝিনাইদহের ডিসি সাহেব নিজে সেই ভিডিও পোষ্ট করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ব্যাপক সাড়া ফেলে সেই ভিডিওটা। এদিকে তার উদ্ভাবন পেরিয়েছে দেশের সীমানা। ভারতের মাহিন্দ্রা শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধার আনন্দ মাহিন্দ্রা নিজের টুইটার একাউন্টে পোষ্ট করেছেন সেই ভিডিওটা।
প্রশংসার পাশাপাশি নিজ প্রতিষ্ঠানের অটো এন্ড ফার্ম সেক্টরের প্রধাণ নির্বাহী রাজেশ জেজুরিকারকে ট্যাগ করে লিখেছেন- ‘আমাদের টিমের গবেষণা ও উন্নয়ন টিমের উপদেষ্টা হিসেবে তাকে দরকার। মিস্টার রাজেশ তার উত্তরে লিখেছেন, প্রতিভার সন্ধান পেয়েছে ভারত। আমাদের ধ্যান ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করার জন্যে হলেও তাকে খুঁজে বের করা উচিত।
কোনো প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, কারিগরি সহায়তা ছাড়া যেভাবে ঝিনাইদহের ইজি বাইক মিস্ত্রী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম নয়ন তার উদ্ভাবনী মেধা দেখিয়েছেন সেটা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। এই মানুষগুলোকে আমাদের তুলে এনে কাজে লাগাতে হবে। দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে এই হিরার টুকরোগুলোকে হারিয়ে ফেললে চলবে না।