উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে ১০টি অজানা তথ্য!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
'আই মিন রিয়েলি?' - এই লেখাটা পড়ার পর ঠিক উপরের লাইনটাই আপনার মাথায় ঘুরতে থাকবে!
উত্তর কোরিয়ার মতো পাগলাটে দেশ আর একটাও নেই। বাইরের পৃথিবী এবং উত্তর কোরিয়া দুইটাকে একসাথে মেলানো যাবে না। কারণ, তাদের নেতা কিম জং উন কোনো নিয়মই মানেন না। তার অসীম ক্ষমতাকে তিনি নিজের মতো করে ব্যবহার করেন। পৃথিবীর সাধারণ নিয়মকানুন উত্তর কোরিয়ার জন্য নয়। এখানে কিম জং উনের মুডের উপরই সব কিছু নির্ভর করে। সে চাইলে দুনিয়ার বিরুদ্ধে পারমানবিক যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারে, আবার মুড ভালো থাকলে নিজের জন্য পার্টিও দিতে পারে! এই পাগলাটে লোকটার ক্ষমতা আর স্বেচ্ছাচারিতার হাতে বন্দী পুরো উত্তর কোরিয়া আর মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছা! চলুন জেনে নেওয়া যাক কিম জং উন ও তার দেশ উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য।
১. উত্তর কোরিয়ায় ইন্টারনেট নিষিদ্ধ
উত্তর কোরিয়ায় সাধারণ মানুষের জন্য ইন্টারনেট নিষিদ্ধ। অল্প কিছু সংখ্যক মানুষ কিছু নিজস্ব নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারে, তাও অল্প সময়ের জন্য। সরকারী অনুমোদন আছে এমন ১০০০টি সাইট শুধু তাদের নিজস্ব নেটওয়ার্কে চলতে পারে। এর বাইরে সব নিষিদ্ধ। প্রশ্ন হচ্ছে কেন উত্তর কোরিয়ায় ইন্টারনেট চালানো নিষেধ? অনেকে ভাবতে পারে অর্থনৈতিকভাবে তারা সক্ষম না, ইন্টারনেট চালানোর মতো ডিভাইস কেনার পয়সা নেই। ভুল! ইন্টারনেট নিষিদ্ধ কারণ, কিম জং উন চান না তার দেশের মানুষ পশ্চিমা উন্নত দেশগুলোর জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানুক, আর তারা যেন শুধু উত্তর কোরিয়ার খবরই জানতে পারে!
২. ১০টি কাটিং এর বাইরে চুল কাটা নিষিদ্ধ
উত্তর কোরিয়ায় সরকার অনুমোদিত ১০ টি কাটিংয়ের বাইরে অন্য কোনো স্টাইলে চুল কাটা যাবে না। নারীদের জন্য অবশ্য একটু বেশি স্বাধীনতা। তারা চুল কাটতে পারবে ১৮টি স্টাইলে। উত্তর কোরিয়ার ২৫ মিলিয়ন জনগণের মাত্র ২৮ টা চুলের স্টাইল। শুধু এই তথ্যেই হয়তো বুঝতে পারছেন, সেখানে মানুষের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেয়া কতটা কঠিন! নিজের মতো চুল পর্যন্ত যেখানে কাটা যায় না। ভিন্নরকম কাটিং যদি কেউ দিতে চায়, তাকে সরাসরি পাঠানো হয় জেলখানায়!
৩. ২০১৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপ জিতেছিল উত্তর কোরিয়া
নিশ্চয়ই ভাবছেন ঘটনা কি! প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছি নাকি? একদমই না। প্রোপাগান্ডা চালায় উত্তর কোরিয়ার সংবাদমাধ্যমগুলো। ২০১৪ সালে তাদের সব সংবাদে দেখানো হয় উত্তর কোরিয়া ব্রাজিলকে ফাইনালে ৮-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়! কী লেভেলের প্রোপাগান্ডা তারা চালায়, ভাবুন! মজার ব্যাপার হচ্ছে ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে তারা খেলার সুযোগই পায়নি। আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে তাদের মিডিয়া প্রচার করে তারা ২০১০ বিশ্বকাপে পর্তুগালকে ৭-০ গোলে হারিয়েছে! অথচ বাস্তবে ঘটেছিলো উলটো। পর্তুগাল তাদের হারিয়েছিল ৭-০ গোলে!
৪. নীল রঙা জিনস আর চকলেট অবৈধ
কিম জং উন কোনো কিছু জনপ্রিয় হয়ে যাওয়া পছন্দ করেন না। যা কিছু জনপ্রিয় হয়, সব কিছুকেই তিনি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেন। ২০১৪ সালের দিকে চকো পাই চকলেট উত্তর কোরিয়ায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এতে কিম জং উনের মন খারাপ হয়। তাই তিনি এই চকলেট নিষিদ্ধ করে দেন। নীল রঙা জিনসও সেদেশে নিষিদ্ধ, কারণ এই জিনস নাকি অ্যামেরিকান সাম্রাজ্যবাদকে প্রতিনিধিত্ব করে!
৫. নির্যাতনের অভয়ারন্য- উত্তর কোরিয়ার লেবার ক্যাম্প
সোভিয়েত ইউনিয়ন আর নাজ্জিদের ক্যাম্পে নির্যাতন করার ঘটনা হয়তো অনেকেই জানে। আজ সেসব নেই। পুরো পৃথিবীতে আর এই ধরণের লেবার ক্যাম্প নেই এমনটাই ধারণা করা হতো এতদিন। কিন্তু শুধু উত্তর কোরিয়াতেই লেবার ক্যাম্প আছে ১৬টি। যেখানে দুই লক্ষ বন্দী করুণ জীবনযাপন করে, যা সবচেয়ে বাজে দুঃস্বপ্নের চেয়েও বেশি নির্মম। লেবার ক্যাম্পের বন্দীরা খাবার পায় না, কাজ করতে হয় ২৪ ঘন্টা। তাদের অনেকেই অবসাদ ও বিষন্নতায় ভুগে মারা যায়। এসব ক্যাম্পে বন্দী হয়ে তারাই আসে, যারা ভিন্ন মত পোষণ করে, ভুল স্টাইলে চুল কাটে কিংবা নীল রঙের জিনস পড়ে!
৬. দাদার সাজা নাতি ভোগ করে
কিম জং উন লেবার ক্যাম্পের বন্দীদের দিয়ে বিভিন্ন ধরণের কাজ করান ফ্রি-তে। এই ফ্রি-তে লোক পাওয়ার ব্যবস্থা সমুন্নত রাখতে তিনি এক উদ্ভট চিন্তা করলেন যাতে করে কাজ করার মতো বন্দী লোকের কখনো অভাব না হয়। তারা “তিন পুরুষের শাস্তি” নিয়ম প্রবর্তন করেন। এই নিয়মে একজন মানুষ রুটি চুরি করেছে, এই অপরাধে গোটা পরিবারকে আটক করা জায়েজ আছে। একমাত্র উত্তর কোরিয়া এমন এক দেশ যেখানে দাদার নীল রঙের জিনস পড়া কিংবা এ ধরণের অন্য কোনো অপরাধের শাস্তি নাতিকেও ভোগ করতে হতে পারে। এটা অন্যায্য, কিন্তু উত্তর কোরিয়ায় কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।
৭. একমাত্র জেনারেল যার সামরিক জ্ঞান নেই
উত্তর কোরিয়ার উদ্ভট নিয়ম কানুন নিয়ে মজা করতেই পারেন। তারা দেশ হিশেবে গরীব, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বলতে কিচ্ছু নেই, কিন্তু আপনাকে এটাও মানতে হবে তাদের সরকার কিন্তু ঠিকই কাজ করে যাচ্ছে এবং এখন পর্যন্ত টিকে আছে। দেশ শাসনের জন্যে কিম জং উন ও তার পূর্বপুরুষরা একটাই ফর্মুলা ব্যবহার করে। যেটি হচ্ছে, দেশকে গোটা পৃথিবী থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা, স্টুপিড ধরণের আইন বানানো আর প্রোপাগান্ডা ছড়ানো। এসব করেই তারা ক্ষমতা ভোগ করে যাচ্ছে যুগের পর যুগ। এমনকি এই দেশের সামরিক বাহিনীর জেনারেল যিনি তার নিজেরই কোনো সামরিক জ্ঞান নেই। তিনি কে জানেন? কিম জং উন!
৮. নরমাংস-খাদক
উত্তর কোরিয়ার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ হয় ১৯৯৪-১৯৯৮ সালের মধ্যে। দেশে দূর্ভিক্ষ দেখা দেয়। খাদ্য সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। মানুষের খাওয়ার কিছু নেই। মারা যায় ৩৫ লক্ষ মানুষ। সরকার সাহায্য তো করলোই না উলটো গ্রামে গিয়ে গ্রামবাসীর খাবার যা ছিলো তা কেড়ে নিয়ে আসে। খাবার না পেয়ে মানুষ হিংস্র আচরণ শুরু করে। প্রথম দিকে তারা কুকুর, বিড়ালসহ বাড়ির যত পোষা প্রাণী ছিলো সব কিছু খেয়ে ফেলে। এরপর গাছের ছাল খুবলে খুবলে খায়। তাতেও বেঁচে থাকা কষ্টকর। এরপর তারা শুরু করে সবচেয়ে ভয়ংকর কাজ। বেঁচে থাকার তাড়নায় তারা শিশুদের হত্যা করে তাদের মাংস খায়! এখনো উত্তর কোরিয়ায় একটি প্রবাদ আছে, 'কখনো মাংস কিনবে না, যদি না জানো এটি কোথা থেকে এসেছে।'
৯. অলিম্পিকে মেডেল না জেতার ফল
অলিম্পিককে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আইকনিক খেলাধুলার ইভেন্ট। যেখানে প্রচার করা হয় সাম্যতা, একাত্মতা আর শান্তি। কিন্তু উত্তর কোরিয়া থেকে যারা খেলতে আসে এই কথা তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়। কারণ তাদের জন্য এই অলিম্পিক গেমস হচ্ছে “হয় জিতো নাহয় মরো” ধরণের খেলা। তাদের জন্য দুইটা অপশন। ১. খেলো, স্বর্ণপদক জিতো এবং উত্তরকোরিয়ার লিজেন্ড হও। অথবা ২. হারো এবং লেবার ক্যাম্পে বন্দী থাকো। এই ধরণের ঘটনা প্রায়ই ঘটে উত্তর কোরিয়ায়। যখন তারা ২০১০-এ পর্তুগালের কাছে ৭-০ গোলে হারে, তখন ওই দলের সব খেলোয়াড় এবং কোচদেরও বন্দী করে লেবার ক্যাম্পে পাঠানো হয়।
১০. উত্তর কোরিয়া থেকে অনেকেই পালাতে চায়
এই যুগে ২৫ মিলিয়ন মানুষকে এরকম একটা দেশের ভেতরে বন্দী করে রাখা কম কথা নয়। কারণ, উত্তর কোরিয়ার ভেতরে কি হচ্ছে না হচ্ছে তার কতটুকুই বা বাইরের পৃথিবী জানে? বাইরে কি হচ্ছে সেসবও তো জানতে পারে না উত্তর কোরিয়ার মানুষ। তাদের সরকার জনগণকে যেকোনো উপায়েই হোক বোকা বানিয়ে ঠিকই আটকে রাখতে পারছে। কিন্তু এত কিছুর মধ্যেও অনেকেই চেষ্টা করে এই দেশ থেকে পালিয়ে যেতে। প্রতিদিনই কিম জং উন এর সাম্রাজ্য থেকে পালিয়ে অন্য কোথাও যাওয়ার চেষ্টা কেউ না কেউ করছেই। কজনই বা সফল হয়? বেশিরভাগই ব্যর্থ হয় এবং মৃত্যুবরণ করতে হয় তাদের। এটাই নিয়তি। কিন্তু ২০১০ সালে একটি অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে। দক্ষিণ আফ্রিকাতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচের আগের ঘটনা। সেদিন উত্তর কোরিয়ার জাতীয় দলের চারজন খেলোয়াড় নিখোঁজ হন। এই দুর্ঘটনা নিয়ে অনেক গুজবই শুনা যায়। তবে অনেকেই মনে করেন নিখোঁজ নয়, ওই চারজন উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে যাওয়ার একমাত্র সুযোগটি যথাসময়ে কাজে লাগিয়েছে। ওরকম সুযোগ কি আর কেউ পাবে?
(দ্য রিচেস্ট অবলম্বনে)
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন