ইতিহাসের জীর্ণতাকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছেন যে শতবর্ষী মানুষটা!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন। খুব কাছে থেকে দেখেছিলেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, রবীন্দ্রনাথ’কে। একাকী এই শতবর্ষী মানুষটা প্রায় দুইশো বছরের এন্টিক কালেকশন নিয়ে গড়ে তুলেছেন অতীতের আশ্রয়...
সবাই খোঁজে নতুন। আর আমাদের নকু বাবু খুঁজে বেড়ান পুরাতন। তাইতো গড়ে তুলেছেন প্রায় দুইশো বছরের এন্টিক কালেকশন ‘অতীতের আশ্রয়’। লিখছি সেই ইতিহাস আঁকড়ে বেঁচে থাকা একাকী শতবর্ষীর গল্প!
পুরো নাম সুশীল কুমার চট্টোপাধ্যায়। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন। খুব কাছে থেকে দেখেছিলেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, রবীন্দ্রনাথ’কে। বয়স ৯৫ বছর। উত্তর কলকাতার পুরনো এক বাড়ির এক চিলতে ঘর তাঁর বহু দুষ্প্রাপ্য সংগ্রহে ভর্তি। অবাক করা সেই ঘরের নাম অতীতের আশ্রয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সেনা ব্যবহৃত টর্চ থেকে সময়ের হাত ধরে বদলানো ঘড়ি, কী নেই এই এই মানুষটির কাছে। কলকাতার বুকে ইতিহাসের শিকড় বুকে নিয়ে বেঁচে থাকা একাকী মানুষটা নকু বাবু নামেও সুপরিচিত।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত সেনাবাহিনীর রিসিভার, ১৮ শতকের কলিং বেল, ১৯৩০ সালে তৈরি সুইস কোম্পানি Rocar -এর স্টপ ওয়াচ, ২০০ বছরের প্রাচীন ট্রাম্পেট, ৩ হাজার পুরোনো রেকর্ড, এক কোণায় আছে জার্মানিতে তৈরি ১৬ মিমি প্রজেক্টর, কলকাতায় আসা প্রথম হেডফোন,৩০০ বছরের পুরনো ঝিনুকের বোতাম, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমসাময়িক ক্যামেরা, হাতে তৈরি জাপানি পাখির মডেল, ব্রিটিশ যুগের রেডিও-সাউন্ড টিউনার, পর্তুগিজদের ব্যবহৃত অষ্টাদশ শতকের লণ্ঠন, ওই সময়কার দূরবীন… তালিকা অন্তহীন!
প্রাচীনত্বের নেশায় যে এভাবে মজে থাকা যায় তা সেই ঘরে না ঢুকলে বোঝা যাবে না। তিনি নিজেই যেন জীবন্ত এক মিউজিয়াম। তার কাছে গেলে টাইম মেশিনের দরকার হবে না, বরং অতীত নিজেই হাজির হবে আপনার সামনে। অ্যান্টিক জিনিসে ঠাসা দশ বাই বারো ফিটের ঘরটা বলে দেয় মানুষের ইচ্ছের কাছে পদানত হয় সবরকম বাধা বিঘ্ন।
তার সংগ্রহের প্রাচীনতম এলপি রেকর্ডটি, যা রেকর্ড হয়েছিল বছর পঞ্চাশেক আগে, বা হয়ত সময়ের ধুলো ঝাড়ছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ঘড়ির। দুর্লভ সময়ের জিনিস সংগ্রহ শুধু তার নেশাই নন, বরং সেগুলোর হাত ধরে ইতিহাস অক্টোপাসের মত জড়িয়ে রেখেছে তাকে।
যে বয়সে নতুন জিনিসের জন্য মুখিয়ে থাকে মন‚ সেই ১০ বছর বয়স থেকেই বালক নকু খুঁজে বেড়াতেন পুরনো জিনিস। বয়স যত বেড়েছে এই নেশা তত জড়িয়ে গিয়েছে তার জীবনে। উপার্জনের সিংহভাগ গেছে সংগ্রহকে সমৃদ্ধ করবেন বলে।
পরম মমতায় পুরাতনীকে আগলে রেখেছেন এই চিরতরুণ। তার উত্সাহ হার মানাবে বিদগ্ধ গবেষককেও। শুধু ভালবাসা থেকে, ব্যক্তিগত উদ্যোগে এত সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা করতে পারেন, সেই সংগ্রাহকের প্রতি শত কুর্নিশও যথেষ্ট নয়।
ধ্যান জ্ঞান তপস্যা সব মিলে মিশে গেছে পুরোনো সামগ্রী সংগ্রহে। এই প্রবীণ মানুষটির হাত ধরে ভেসে যাই সময় ভেলায়। স্মৃতি হয়ে বেঁচে থাকুন তিনি। এবং বেঁচে থাকুক তার দূর্মুল্য সংগ্রহ।