একটা সময় বেশ টেকসই এবং সস্তায় মোবাইল সেট তৈরীর কারনে নোকিয়া ব্র্যান্ডটির উপর মানুষের আস্থা ছিলো, বিশ্বাস ছিলো। পণ্যের পাশাপাশি তাদের বিক্রয় ব্যবস্থাপনা ছিলো অসাধারণ। নিজেদের চমৎকার লোগোর পাশাপাশি অসাধারন এক স্লোগান ছিলো, "Connecting People"
বিজ্ঞানের কল্যানে প্রতিদিনই আমাদের হাতে উঠে আসছে নিত্যনতুন গ্যাজেট। প্রাত্যাহিক জীবনযাত্রায় এরা মিশে যাচ্ছে, তৈরি হচ্ছে নতুন জীবনদর্শন, বোধ। সেলফোন বা মোবাইল ফোনের উপর মানুষের ক্রমবর্ধনশীল নির্ভরতা নতুন নতুন শিল্পের জন্ম দিচ্ছে। তৈরী হচ্ছে নতুন কোম্পানি, কারখানা। প্রতিটা কোম্পানি ব্যবহার করছে নিজেদের লোগো আর স্লোগান। স্লোগানগুলো একেবারে গেঁথে যাচ্ছে হৃদয়ে। এর মাঝে আছে মোবাইল কোম্পানিগুলো। এরা নিত্যনতুন পন্য নিয়ে এলেও চেষ্টা করে এমন কিছু একটা করার যা হয়ে যাবে আজীবনের সম্পদ। এগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে নোকিয়া রিংটোন! ফিনিশ এই টেকজায়ান্ট পৃথিবীর কয়েকটা বড় কোম্পানির মধ্যে অন্যতম।
১৮৬৫ সালে যাত্রা শুরুর পর বিভিন্ন শিল্পে বিনিয়োগের পর গত তিন দশক মনোযোগ দিয়ে চলেছে টেলিকমিউনিকেশন খাতে। এখন অবস্থা পড়তির দিকে থাকলেও কোম্পানিটি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। একটা সময় এরাই সবচেয়ে বেশি মোবাইল ফোন উৎপাদন এবং বিক্রি করেছে। একটা সময় বেশ টেকসই এবং সস্তায় মোবাইল সেট তৈরীর কারনে নোকিয়া ব্র্যান্ডটির উপর মানুষের আস্থা ছিল, বিশ্বাস ছিল। পণ্যের পাশাপাশি তাদের বিক্রয় ব্যবস্থাপনা ছিল অসাধারণ। নিজেদের চমৎকার লোগোর পাশাপাশি অসাধারন এক স্লোগান ছিলো, "Connecting People"
আর নোকিয়া রিংটোন ছিল নতুন শতকে বিজ্ঞান অগ্রযাত্রার প্রতিচ্ছবি। নোকিয়া রিংটোন প্রথম শোনা যায় ১৯৯২ সালে তাদের এক বিজ্ঞাপনে। নোকিয়া ১০১১ মডেলের সেটের ঐ বিজ্ঞাপনে রিংটোনটির স্থায়িত্ব ছিলো মাত্র ৩ সেকেন্ড। এর এক বছর পর কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয়, এটিই হবে তাদের ট্রেডমার্ক সাউন্ড এবং এই রিংটোন ঐ সময় তাদের সমস্ত মডেলের সেটে দিয়ে দেয়া হয়। ১৯৯৪ সালে বের হয় নোকিয়া ২১১০ মডেল। এই মডেলে নিজেদের রিংটোন এর পাশাপাশি অন্যান্য রিংটোন ও দেয়া হয়। ১৯৯৭ সালে এই টোনটির নাম দেয়া হয়, " Grande Valse"। ১৯৯৯ সালে নাম বদলে রাখা হয় নোকিয়া টিউন এবং তখন থেকেই এটি হয়ে যায় নোকিয়ার নিজস্ব রিংটোন।
মূল সুরটি পাওয়া যায় ১৯০২ সালের এক কম্পোজিশনে। কম্পোজ করেছিলেন স্প্যানিশ গিটারিষ্ট 'ফ্রান্সিসকো তারেগা'। ভদ্রলোককে গিটারিস্টদের মধ্যে কিংবদন্তীতুল্য বলা হয়। ১৮৫২ সালের ২১ শে নভেম্বরে ভিলারিয়ালে জন্ম নেওয়া এই শিল্পীকে বলা হয় বিংশ শতাব্দীর ক্লাসিক গিটার স্টাইলের জনক। তারেগাকে নোকিয়া টিউনের স্রষ্টা বলা হলেও ভদ্রলোক কিন্তু এই তিন সেকেন্ডের স্নিপ্পেটটি তৈরী করেননি। তিনি ফ্রেডেরিখ চপিনের কম্পোজিশন "Grande Valse" থেকে ধার করেছিলেন। Grande Valse কম্পোজিশন করা হয় ১৮৩৩ সালে। সলো পিয়ানোর জন্য প্রথম এই সুর তৈরী করলেও চপিন নিজেই সেটি সংরক্ষন করেননি। ফ্রান্সসকো তারেগা সেই সুর শুনেই অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। নোকিয়া রিংটোন সবচেয়ে জনপ্রিয় রিংটোন বলা হয়। ২০১০ সালে দিনে গড়ে ১.৮ বিলিয়ন বার এই রিংটোন শোনা হতো! ভাবা যায়!