আমার প্রশ্ন হলো, ব্রহ্মপুত্রের কী শাখা নেই? শীতলক্ষ্যা , যমুনা এইগুলো তাহলে কোন নদীর শাখা? শীতলক্ষ্যা, যমুনা যদি ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী হয় তাহলে সংজ্ঞানুসারে ‘ব্রহ্মপুত্র’ তো নদী হবার কথা, একে আমরা নদ বলি কেন?

‘নদ’ আর ‘নদী’ এই দুইয়ের মাঝে পার্থক্য কী?- এই প্রশ্ন করা হলে বেশিরভাগ লোকই হাস্যকর সব ভুল উত্তর দেয়। উত্তরের একটা নমুনা দেখা যাক-

নদ আর নদীর মধ্যে পার্থক্য হল- “নদীর শাখা আছে, নদের শাখা থাকে না”। বেশিরভাগ লোকই এই উত্তরটা দেয় । সবাই এটা বংশানুক্রমে পায়।আমি নিজেও স্কুলে আমার শিক্ষকের কাছে এই উত্তরটাই পেয়েছিলাম। এই উত্তরের ব্যাকরণগত ভিত্তি কেউই জানে না ( ভিত্তি থাকলে তো জানবে!)। মজার ব্যাপার হলো উইকিপিডিয়াও একই পথের পথিক।

নদ ও নদী সম্পর্কে উইকিপিডিয়াতে লেখা আছেঃ
“যে জলস্রোত কোনো পর্বত, হ্রদ, প্রস্রবণ ইত্যাদি জলাধার হতে উৎপন্ন ও বিভিন্ন জনপদের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে অন্য কোন জলাশয়ে পতিত হয় , তাকে নদী বলে। যেমনঃ মেঘনা, যমুনা, কুশিয়ারা ইত্যাদি। যখন কোন নদী হতে কোন শাখা নদীর সৃষ্টি হয়না, তখন তাকে বলা হয় নদ। যেমনঃ কপোতাক্ষ, ব্রহ্মপুত্র, নীল নদ ইত্যাদি নদ। সুরমা, গঙ্গা, বুড়িগঙ্গা ইত্যাদি নদী।”

বিউটিফুল বাংলাদেশ ক্যাম্পেইনের ছবি  

এখন আমার প্রশ্ন হলো, ব্রহ্মপুত্রের কী শাখা নেই? শীতলক্ষ্যা , যমুনা এইগুলো তাহলে কোন নদীর শাখা? শীতলক্ষ্যা, যমুনা যদি ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী হয় তাহলে সংজ্ঞানুসারে ‘ব্রহ্মপুত্র’ তো নদী হবার কথা, একে আমরা নদ বলি কেন? গেল লেগে কনফিউশন? আমারও লেগেছিল। সেটা দূর করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের বর্তমান অধ্যাপক,প্রাবন্ধিক ও গবেষক বিশ্বজিৎ ঘোষ।

তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের একটি অনুষ্ঠানে নদ ও নদীর নাম করণের বিষয়ে আলোচনায় বলেছিলেন। নদ ও নদীর সাথে শাখা থাকা না থাকার কোন সম্পর্ক নেই। এই দুয়ের মাঝে যা পার্থক্য আছে তা হল ব্যাকরণগত।

বাংলা, হিন্দি, ফারসি ইত্যাদি ভাষার ক্ষেত্রে পুরুষবাচক শব্দ সাধারণত অ-কারান্ত এবং নারীবাচক শব্দ আ-কারান্ত বা ই , ঈ-কারান্ত হয়। আমার বিশিষ্ট বন্ধু জিয়া উদ্দিন আহমেদ বিটু যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনিও অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ এর উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন।

যেমনঃ রহিম (অ-কারান্ত) -রহিমা (আ-কারান্ত, নামের শেষে আ আছে ) , রজক (অ-কারান্ত) – রজকী ( ঈ-কারান্ত) এখানে নামের শেষে ঈ। তেমনিভাবে- ফুল-ফুলি, কুমার-কুমারী, নদ-নদী ইত্যাদি। তাই যে সকল ‘নদীর’ নাম পুরুষবাচক অর্থাৎ অ-কারান্ত তারা 'নদ' আর যে সকল ‘নদীর’ নাম নারীবাচক অর্থাৎ আ-কারান্ত বা ঈ , ই-কারান্ত তারা নদী। যেমনঃ কপোতাক্ষ, ব্রম্মপুত্র, নীল,দামোদর,শংখ, আমাজন, সবই নদের নাম। যমুনা, পদ্মা, মেঘনা, ভলগা, আত্রাই, ইছামতি, মধুমতি, ভাগিরথী সবই নদীর নাম।

বাংলার নদী 

এই কারণে ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী থাকলেও এটি নদ। একই কারণে নীল ‘নদী’ নয় ‘নদ’। অনেকে আমাজন নদী বললেও উপরে উল্লেখিত কারণে তা হবে নদ। তাই এখন থেকে যে নদীর নাম অ-কারান্ত দেখবেন , নিশ্চিন্তে তাকে ‘নদ’ বলুন , আর আ,ই ও ঈ-কারান্ত দেখবেন নিশ্চিন্তে ‘নদী’ বলুন।

লেখক- জসীমউদ্দিন 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা