সম্প্রতি শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্যে মনোনীত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প! সে সাথে আমরা ভাবার চেষ্টা করলাম, আর কে কে এই তালিকায় আসতে পারতো...

ডিনামাইট ব্যবসায়ী আলফ্রেড নোবেল যেদিন থেকে 'নোবেল পুরস্কার' চালু করলেন, সেদিন থেকেই ভণ্ডামির শুরু। এটা ঠিক, অনেক ভালো ভালো মানুষ তাদের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। কিন্তু এমনও হয়েছে, মাঝেমধ্যে নোবেল পুরস্কারের নমিনেশনে তারা এমন সব মানুষের নাম এনেছে, আমরা অবাক হতেও ভুলে গিয়েছি। এই যেমন- সম্প্রতি নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুনে আপনিও নিশ্চয়ই বিষম খেয়েছেন। খাওয়াই উচিত। যে লোকটি ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই এবং ক্ষমতায় আসার পর থেকেই লঙ্কাকাণ্ড বাজিয়ে যাচ্ছেন, সেখানে তাকে কোন যুক্তিতে শান্তি তে নোবেল পুরস্কারের জন্যে মনোনীত করা হলো, আমরা ঠিক জানিনা। বলা হচ্ছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে ইসরায়েলের ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তিতে মধ্যস্থতা করে তিনি নাকি এই পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন! আচ্ছা, এই কারণে যদি তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্যে মনোনীত করা হয়, তাহলে ইরান- উত্তর কোরিয়ার সাথে সংঘর্ষ, মেক্সিকো সীমান্তে অস্থিরতা, নিজের ক্যাবিনেটেই উল্টোপাল্টা কথাবার্তা বলার জন্যে কেন তাকে অমনোনীত করা হবেনা? অবশ্য আদার ব্যাপারী আমরা, এগুলো নিয়ে না ভাবাই বরং সমীচীন। তবে আমরা এটা ভাবতে পারি, ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্যে মনোনয়ন পেয়ে যান, আরো কিছু মানুষও এই তালিকায় মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য। আমরা একে একে তাদের নিয়েই কথা বলি।

প্রথমেই উত্তর কোরিয়ার শাসক, গোলগাল, শান্তশিষ্ট কিম জং উন এর কথা বলতে হবে। এই মানুষটি উত্তর কোরিয়াকে যেরকম করে শান্তিতে রেখেছেন, সেটি আসলেই প্রশংসার যোগ্য। কেউ টু শব্দটিও করতে পারেন না তার বিপক্ষে। কেউ টু শব্দটি করলে, তাকে চিরতরে নিঃশব্দ করে দেন মানুষটি। সব নাগরিকের গতিবিধি সচেতন অভিভাবকের মতন মনিটর ও নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। তাছাড়া নিউক্লিয়ার বোমা থাকা সত্বেও বিশ্ববাসীর কথা ভেবে তিনি এখনো সেই বোমা ব্যবহারও করেন নি। এরকম নিঃস্বার্থ মনোভাব কয়জনের মধ্যেই বা দেখা যায়? এসব বিবেচনায় কিম জং উন কে অবশ্যই রাখা উচিত নোবেল শান্তি পুরস্কারের তালিকায়।

এবার আসি একটু রাশিয়ার দিকে। আমি জানি না, 'নোবেল কমিটি'র কী ষড়যন্ত্র, ভ্লাদিমার পুতিনকে নোবেলের জন্যে নমিনেশন দিলেন না তারা। কেন দিলেন না? তাঁর মাথায় চুল কম বলে? ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করেছেন লোকটি, স্বৈরশাসনকে তিনি নিয়ে গেছেন শিল্পের পর্যায়ে, বিশ বছর ধরে ক্ষমতাকে রেখেছেন নিজের হাতে, কাউকে একটু টু শব্দও করতে দেন নি কখনো, সবাইকে চুপ করিয়ে রেখেছেন, ক্রেমলিন প্যালেসে বসে বসে ঠান্ডা করেছেন পৃথিবীর অনেক দেশের চোটপাট... এরকম শান্তিপ্রিয় মানুষকে কেন রাখা হবে না নমিনেশনে, প্রশাসন জবাব চাই।

আইসিসের নেতা; আবু বকর আল বাগদাদী নামের ভদ্রলোকটি আইসিসের কার্যক্রম নিয়ে এগিয়ে চলেছেন নিষ্ঠার সাথে৷ মানুষ মেরে মেরে, এলাকা গুঁড়িয়ে দিয়ে তিনি এই পৃথিবীর অতিরিক্ত জনসংখ্যাকেই নিয়ন্ত্রণ করেছেন একরকম। এরকম একজন সুদূরপ্রসারী মানুষকে, যিনি কী না পৃথিবীর জন্যে কল্যানকর্ম করছেন; তাকে শান্তি পুরস্কারের জন্যে মনোনয়ন না করা হলে, সেটি নোবেল পুরস্কারের জন্যেই দুঃখের বিষয় হবে। 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান'কে যৌথভাবে দেয়া উচিত নোবেল পুরস্কার। দুই দেশের মধ্যে একটি থমথমে নীরবতা বজায় রাখার জন্যে তারা অবশ্যই এই পুরস্কারের যোগ্য। যুদ্ধ করবে করবে করেও তারা যে করেনি, এজন্যেও তাদের একটা বিশেষ বিবেচনায় নমিনেশনে রাখা অবশ্যই উচিত ছিলো। তাছাড়া এরকম ধার্মিক মানুষও তো বিরল, নিজ নিজ ধর্মকে রক্ষার জন্যে তাদের যে আপ্রাণ চেষ্টা ও পরিশ্রম, সেটি নোবেল কমিটির বিবেচনা করা উচিত অবশ্যই। প্রত্যেক ধর্মই শান্তির কথা বলে। আবার তারা ধর্ম রক্ষার জন্যেই কাজ করছেন নিরন্তর। তারা তো প্রকৃতপক্ষে শান্তি রক্ষার জন্যেই কাজ করছেন নাকি? এরকম মানুষকে নোবেল কর্তৃপক্ষ কেন উপেক্ষা করছে, আমরা জানি না। 

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং'কে রাখা উচিত ছিলো নোবেল শান্তি পুরস্কারের লিস্টে। কী না করেছেন! সুন্দর করে একটা ভাইরাস ছেড়েছেন, এক ধাক্কায় পৃথিবীর জনসংখ্যা কই নামিয়ে দিয়েছেন, পৃথিবী ও প্রকৃতি আবার সবুজ হচ্ছে... এরকম অবদান কয়জন নেতা করেছেন? কয়জন নেতা পারবেন? এরকম ক্রিয়েটিভ কায়দায় বিশ্বব্যাপী শান্তি স্থাপনের জন্যে তাঁর যে অবদান, 'নোবেল কমিটি'তে আমার থাকার অবকাশ থাকলে, একটি না; একাধিক নোবেল পুরস্কার দেয়ার ব্যবস্থা করতাম তাকে৷

এবার একটু দেশের দিকে তাকাই। সবসময়ে নোবেল খালি বিদেশে দিতে হবে কেন? আমাদের দেশেও নোবেল দরকার। অবশ্য আমাদের দেশে গায়ক নোবেল আর নায়ক নোবেল দুইটিই আছে, শান্তিতেও নোবেল আছে। কিন্তু আমাদের দেশ নোবেল পুরস্কার পাওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সম্ভাবনাময়। এরকম সম্ভাব্য মানুষজনও আছে আমাদের। আসুন জেনে নিই তাদের বিষয়ে।

প্রথমেই আসবে আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কথা। দেশের সংকট চলছে, মহামারীতে নাকাল সবাই... এরকম প্রতিকূল সময়ে এসেও এই আলাভোলা মানুষটি আমাদের হাসিয়েছেন বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে। কখনো বলেছেন- আমরা করোনা মোকাবেলায় সফল হয়েছি (অথচ সেদিনও মারা গিয়েছিলো ৩০-৪০ জন মানুষ), কখনো বলেছেন- ভ্যাক্সিন লাগবে না, আমরা এমনিতেই সুস্থ হয়ে গিয়েছি। যখনই কোনো প্রশ্ন এসেছে তার বিরুদ্ধে, সুন্দর করে উত্তর দিয়েছেন, আমি জানতাম না। এভাবেই ঝঞ্জাটের সময়েও তিনি নির্মল বিনোদন দিয়েছেন। নিখাদ শান্তি ছড়িয়েছেন। এ কারণেও তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের তীব্র দাবিদার।

ওসি প্রদীপের কথাও বা বাদ দেবো কেন? এই মানুষটি কত অপরাধীকে নিজ হাতে চিরতরে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে, তার হিসেব আছে? সাধারণ মানুষজন শুধু ক্রসফায়ার, এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং এসব শব্দই জানে, নীরবে থেকে ওসি প্রদীপ যে অপরাধ দমনে, অপরাধী নির্মূলে কতটা অবদান রেখেছে, তা আমরা মনে রাখিনি। 'নোবেল কমিটি'র এই নিভৃতচারী শান্তিপ্রিয় মানুষটিকে অবশ্যই স্বীকৃতি দেয়া উচিত।

সবার শেষে আমার দুই প্রিয় মানুষের কথা বলে এই তালিকার ইতি টানবো। সেই দুইজন মানুষকে আপনারা সবাই চেনেন, স্যার শাহেদ ও ম্যাডাম সাবরিনা। একটা মানুষের করোনা হলে সে সমাজ, পরিবার সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একাকীত্বের জীবন কাটায়। এই দুটি মানুষ সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে নিজ হাতে কোনো টেস্ট ছাড়াই করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট দিয়েছেন অনেককে, মানুষজনকে স্বস্তি দিয়েছেন। এটা নিঃসন্দেহে এক মহৎ কাজ। মানুষের মানসিক সুস্থতা আনয়নে তারা দুইজন যে অবদান রেখেছেন, সে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ 'নোবেল পুরস্কার' দেয়া হলেও সেটি অবদানের তুলনায় কম হয়ে যায়। তাও আমরা চাই, এই দুই মানুষকে যেন যুগ্মভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের মনোনয়নে রাখা হয়।

আশা করছি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে ভেবে দেখবেন। কারণ, এইসব মানুষদের যে ভালো কাজ, শক্তপোক্ত অবদান... সেগুলোর স্বীকৃতি দেয়া আমাদের অবশ্যই উচিত।

এভাবেই তো কাজের উৎসাহ বাড়ে, তাই না?

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা