সোসাইটি এমন হয়েছে যে চোখের ভাঁজ দেখানো যাবে না। বয়স এর ছাপ লুকাতে হবে। চোখের নিচের কালি মানে অসুন্দর। ব্রণের দাগ মানে কুৎসিত।

আমার এক মেয়ে ফ্রেন্ড তার পায়ের ছবি দিয়েছে, দেখলাম সেখানে কেউ একজন প্রশ্ন করেছে, কেন সে ওয়াক্স করায়নি! তারপর থেকেই ভাবছিলাম, দেশের প্রকাশ্যে অনেক সুন্দরী প্রতিযোগিতা থাকলেও, রোজ-ই বেশির ভাগ মেয়েকে এই প্রতিযোগিতায় নামতে হয়। আচ্ছা আপনার কী মনে হয়, যে মেয়েটা রোজ মেকআপ করে, সে শখ করে করে? একটা একটা করে পশম তোলার মতো ভয়ঙ্কর প্রসেসের মধ্য দিয়ে গিয়ে ভ্রু প্লাক করে, সে এমনি এমনি করে? নো। বাধ্য হয়ে করে।

বিজ্ঞাপনী এবং এক চোখা সমাজের একটা ভয়ানক কুফল হল, প্রচুর মেয়ে রোজ সাফার করে নিজেকে সুন্দর রাখতে হবে এই ট্রমা নিয়ে। অন্যের চোখে নিজেকে সুন্দর বানানোর স্ট্রেস তাদের বাধ্য হয়েই নিতে হচ্ছে। বিয়ের আগে মেয়েদের নিজেকে সুন্দর দেখানো নিয়ে যতটা স্ট্রাগল থাকে, তার থেকে অনেক বেশি স্ট্রাগল শুরু হয়, বিয়ের পরে। স্বামী মানুষটা যতই ভালবাসার মানুষ হোক না কেন, সে যেন বৌ এর চেয়ে অন্য কোন মেয়েকে সুন্দর না ভাবে, তাই নিজের চামড়ার প্রতি একস্ট্রা কেয়ার শুরু করে। সেই সাথে সোশ্যাল প্রেশার যেমন, আরে তুমি তো বিয়ের পর মোটা হয়েছ, তুমি তো শুকিয়ে গেছ, স্কিনে এত দাগ হলো কবে, বাচ্চা হবার পর তো শরীর ভেঙে গেছে, চোখের নিচে এত কালি কেন, কপালে তো ভাঁজ পড়েছে, চুল তো পেকে যাচ্ছে, ইত্যাদি ইত্যাদি ।

স্কুল কলেজ ভার্সিটিতে চাইলে অনেকটা প্রেশার ইগ্নোর করা যায়, কিন্তু জব শুরু করার পর তাকে যেন কেউ আনস্মার্ট না ভাবে, তাই নতুন নতুন মেকআপ নিত্য দিনের সঙ্গী হয়ে যায়। এই স্ট্রাগল কেউ করে গোপনে, কেউ করে প্রকাশ্যে। যেহেতু সমাজটা পুরুষতান্ত্রিক, সেহেতু মেধার মাপকাঠির সাথে নিজেকে অন্যদের চোখে সুন্দর দেখানোটার জন্য মেকআপ কম্পোলসারি হয়ে গেছে।

চোখের নিচে কালি, কপালের ভাঁজ ঢাকতে মেয়েরা মেকাপের আশ্রয় নেয়

রোজ এতগুলা মেকাপ করতে দুনিয়ার কোনো মেয়ের ভাল লাগার কথা না, তার উপর সেই মেকআপ তোলাও যথেষ্ট পরিশ্রমের কাজ। কিন্তু সোসাইটি এমন হয়েছে যে চোখের ভাঁজ দেখানো যাবে না। বয়সের ছাপ লুকাতে হবে। চোখের নিচের কালি মানে অসুন্দর। ব্রণের দাগ মানে কুৎসিত। ভ্রু শেইপ রাখতেই হবে, আপার লিপ প্লাক করতেই হবে। মেয়ের পায়ে পশম থাকলে সেটা কুৎসিত।

প্রশ্ন হলো, মাথায় কালো ঘন চুল মানে সৌন্দর্য, কিন্তু পায়ে কালো পশম মানে কুৎসিত কেন হবে? অথবা ভ্রু থাকতে পারবে, কিন্তু আপার লিপে সমস্যা কী? ঠোটের ভাঁজ আকর্ষণীয় হলে, চোখের নিচে ভাঁজও তো জোস হবার কথা। প্রত্যেকটা ভাঁজের, প্রত্যেকটা অঙ্গের, প্রত্যেকটা রঙের একটা সৌন্দর্য আছে। নিজেকে সুন্দর রাখা আর অন্যের জন্য সুন্দর হবার মধ্যে পার্থক্য আছে।

এই যে রোজ আটা-ময়দা বলে গালি দেন, তার পেছনের প্রেশারটাও দেখবেন। মেয়ে যেদিন মেকআপ ছাড়া আসবে, তাকে বইলেন তোমাকে জোস লাগছে আজকে! মেয়ের পায়ের পশম দেখে বইলেন সুন্দর লাগছে, ওয়াক্স করলে মুরগি ছিলা লাগে, কইরো না। যেদিন মেয়ে এলোমেলো ভ্রুতে আসবে, সেদিন তাকে ক্ষ্যাত বইলেন না। মুখের দাগ, চোখের নিচের কালি কিংবা কপালের ভাঁজের চেয়ে তার হাসির দিকে খেয়াল করলে মেয়েরা এই ভয়ংকর ট্রমা থেকে মুক্তি পাবে।

মেয়েরা সাজবে নিজের ইচ্ছায়, নিজ স্বাধীনতায়। এর চেয়ে সুন্দর আর কী হতে পারে?


ট্যাগঃ

শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা