যে বিশ্ব আমরা ফিরে পেতে চাই, সেদিকেই এগোচ্ছে নিউজিল্যান্ড। কী চমৎকার নেতৃত্ব থাকলে করোনাযুদ্ধে জয়লাভ করার ঘোষণা দেয়ার সাহস করা যায় সেটাই ভাবছি...

শুরুটা হয়েছিলো গত বছরের শেষ দিকে। চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়লো এক প্রাণঘাতী ভাইরাস। ভাইরাসটি কোন একটা প্রাণী থেকে মানুষের দেহে ঢুকেছে এবং একজন থেকে আরেকজনের দেহে ছড়াতে ছড়াতে আবার নিজের জিনগত গঠনে সবসময় পরিবর্তন আনছে - যাকে বলে মিউটেশন। এভাবেই মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে যা ছড়িয়ে পড়লো বিশ্বব্যাপী।   

এটি এমন এক ভয়ানক সংক্রামক ভাইরাস, যা এর আগে কখনো মানুষের মধ্যে ছড়ায়নি। এটি এক ধরণের করোনাভাইরাস হলেও, এর অনেক রকম প্রজাতি আছে। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ৭টি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে। এই ভাইরাস মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেই এটি একজনের দেহ থেকে আরেক জনের দেহে ছড়ায়। সাধারণ ফ্লু বা ঠান্ডা লাগার মতো করেই এ ভাইরাস ছড়ায় হাঁচি-কাশির মাধ্যমে।

এক দশক আগে সিভিয়ার এ্যাকিউট রেস্পিরেটরি সিনড্রোম বা সংক্ষেপে সার্স নামে যে ভাইরাসের সংক্রমণে পৃথিবীতে ৮০০ লোকের মৃত্যু হয়েছিলো সেটিও ছিলো এক ধরণের করোনাভাইরাস। এতে আক্রান্ত হয়েছিলো ৮ হাজারের বেশি মানুষ। তবে এবারের প্রেক্ষাপট একদম ভিন্ন এবং ভয়াবহ। স্প্যানিশ ফ্লুর পর, শতবর্ষের ইতিহাসে এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় মহামারি। এখনো পর্যন্ত এই করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী আক্রান্ত হয়েছেন ত্রিশ লাখেরও বেশি মানুষ। মৃত্যুবরণ করেছেন দুই লাখেরও বেশি।

গোটা বিশ্ব যখন করোনার ভয়াল থাবায় কাবু, তখনই করোনা মহামারিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সফলতার সাথে এগিয়ে চলছে একটি রাষ্ট্র- যার নাম নিউজিল্যান্ড। সেখানে কয়েকদিন ধরে নতুন শনাক্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এক অঙ্কে রয়েছে। গত সোমবার মাত্র ৫ টি নতুন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয় দেশটিতে, সেই সাথে এখনো মিলেনি কমিউনিটি ট্রান্সমিশন এর কোনো প্রমাণ।

“করোনা যুদ্ধে এখনকার মত জিতে গিয়েছে নিউজিল্যান্ড”- এমনটাই দাবি দেশটির প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডানের। তবে জেসিন্দা সতর্ক থাকার কথা স্পষ্ট করেছেন। ভাইরাসটি দূর হয়েছে ঘোষণা করার অর্থ এ নয় যে, নতুন কোনো রোগী পাওয়া যাবে না। কিন্তু নতুন রোগীর সংখ্যা হবে কম এবং সহজে নিয়ন্ত্রণযোগ্য। নিউজিল্যান্ডে অশনাক্ত গণসংক্রমণ নেই। আমরা এ যুদ্ধে জয়ী হয়েছি। কিন্তু এটি বজায় রাখতে হলে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। - এভাবেই দৃঢ় কন্ঠে বক্তব্য দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী। 

নিউজিল্যান্ডের করোনা গ্রাফ

ওয়ার্ল্ডোমিটার এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী নিউজিল্যান্ডে এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত মোট ১৪৭২ জন যার মধ্যে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১২১৪ জন এবং মোট মৃতের সংখ্যা মাত্র ১৯ জন। পরিস্থিতি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে থাকায় দেশটিতে কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু হবে এমনটাই ঘোষণা দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী। তবে সেই সাথে সামাজিক দূরত্ব যথাযথ ভাবে বজায় রাখার নির্দেশও দেন তিনি।

করোনা ভাইরাস মহামারির শুরু থেকেই ভ্রমণ এবং সামাজিক কার্যক্রমে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে দেশটি। তখন মাত্র কয়েক ডজন রোগী শনাক্ত হয়েছিলো সেখানে। তখনই সীমান্ত বন্ধ করে দেয় দেশটি এবং বিদেশফেরত সবাইকে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে পাঠায়। গণহারে পরীক্ষা করতে শুরু করে তারা এবং শনাক্ত রোগীরা যাদের সংক্রমণে এসেছেন, তাদের খুঁজে বের করে।

শুরুতেই লকডাউন না করলে নিউজিল্যান্ডে দৈনিক এক হাজারেরও বেশি রোগী শনাক্ত হওয়ার আশঙ্কা ছিলো। সবার সংঘবদ্ধ কার্যক্রমের মাধ্যমে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি এড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে তারা। সেটি না করলে পরিস্থিতি কতটা খারাপ হতো তা আর জানা হবে না দেশটির। লকডাউনের সর্বোচ্চ সতর্কতা লেভেল চার থেকে তিনে নামবে নিউজল্যান্ড। ফলে বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ফের চালু হবে।

রেস্তোরাঁ খুলবে তবে খাবার নিয়ে বাড়িতে বা অফিসে খেতে হবে। কাছের বন্ধু বা পরিবারের অল্প মানুষের সঙ্গেই সামাজিকভাবে দেখা করার সুযোগ থাকছে এবং একে অপরের কাছ থেকে দুই মিটার বা ছয় ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। জনসমাবেশ বন্ধ থাকবে। স্কুল এবং শপিং সেন্টার এখনই খুলবে না। সেই সঙ্গে দেশটির সীমান্তও বন্ধ থাকবে।

যে বিশ্ব আমরা ফিরে পেতে চাই, সেদিকেই এগুচ্ছে নিউজিল্যান্ড। কি চমৎকার দিক নির্দেশনা থাকলে করোনাযুদ্ধে জয়লাভ করার ঘোষণা দেয়ার সাহস করা যায় সেটাই ভাবছি। আমরা যখন আক্রান্তের সংখ্যা গুনে বেড়াচ্ছি, ওরা তখন নিজেদের কমিউনিটি ট্রান্সমিশনমুক্ত ঘোষণা করছে। পার্থক্যটা আসলে এখানেই। এভাবে নিজেদের স্বকীয়তায় একটা দেশ আরেকটা দেশের থেকে আলাদা হয়। 

কথা বলুন নিঃসংকোচে

প্রিয় পাঠক, করোনার এই দিনগুলিতে নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হতেই পারেন আপনি। সেটা হতে পারে অর্থনৈতিক, মানসিক- বা অন্য কিছু। আপনার সমস্যার কথা জানান আমাদের, আমরা চেষ্টা করব সেটা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অবহিত করার, যাতে বেরিয়ে আসে সমাধানের পথ।

 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা