যারা নেটফ্লিক্সের সিরিজগুলো দেখে মনে করেন, ধুর! এটাও কি সম্ভব? তাদের জন্য কিছু সমসাময়িক ঘটনা তুলে ধরা হলো, যা নেটফ্লিক্সকেও অনায়াসে হার মানাবে...

প্রথমে তারা লোকাল ওয়াইফাই বন্ধ করে দিয়েছে। এরপর পুলিশ বেসগুলোতে এক্সপ্লোসিভ সেট করে রেখেছে। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বড় বড় ট্রাক পার্ক করে রেখেছে। যাতে ব্লক তৈরি হয়, এবং চাইলেও যেন পুলিশ তাড়াতাড়ি পৌঁছুতে না পারে। সাথে ড্রোন ব্যবহার করেছে পুলিশের লোকেশন জানার জন্য।

৪০ জনের একটা টিম কাজ করেছে পুরো ব্যাপারটা ঘটাতে। এভাবে পরপর তিনটা ব্যাংক ডাকাতি করেছে তারা। কী পরিমাণ অর্থ লুট হয়েছে সেটার হিসেব পর্যন্ত মেলাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। তাই স্বীকার করতে চাইছে না। কারা এই কাজটা করেছে সেটাও এখনো অজানা। গত মে মাসেরই ঘটনা। ঘটেছে ব্রাজিলের সাও পাওলোতে।

যারা ভাবছিলেন নেটফ্লিক্সের সিরিজ মানি হাইস্ট একদম অবাস্তব, এই ঘটনা জানার পর কী ভাবছেন? এমনটা শুধু বিদেশেই সম্ভব? উহু, দেশেও ঘটেছে এমন অবাস্তব ঘটনা। মনে করে দেখুন বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘটনা। পুরোনো ঘটনা মনে না পড়লে থাক। গত সপ্তাহের একটা ঘটনাই উল্লেখ করি তাহলে। 

মিঃ হাইজিন জীবাণুমুক্ত হাতের প্রতিশ্রুতি

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে আরোপিত বিধিনিষেধের মধ্যেই গত ২৫শে মে সিকদার গ্রুপের মালিকানাধীন একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দুই জন যাত্রী নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ব্যাংককের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

গণমাধ্যমগুলোর সূত্র মতে, এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে যাওয়া এই দুই ‘মুমূর্ষু রোগী’ হলেন— সিকদার গ্রুপের এমডি রন হক সিকদার ও তার ভাই দিপু হক সিকদার। তারা দুই জনই এক্সিম ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার ইস্যুতে ঐ ব্যাংকের দুই শীর্ষ ব্যাংক কর্মকর্তা এমডি এবং ওএমডিকে গুলি করার হুমকি ও নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত। সিকদার গ্রুপ ব্যাংকটির কাছে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ প্রস্তাব দিলে এর বিপরীতে গ্রুপের বন্ধকি সম্পত্তি পরিদর্শনে যান ব্যাংকের ঐ দুই কর্মকর্তা।  

সিকদার গ্রুপের এমডির দাবি তুলনায় বন্ধকি সম্পত্তির মূল্য কম ছিল। এরপর ঐ ব্যাংক কর্মকর্তাদের একটি অ্যাপার্টমেন্টে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। তাদেরকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা করা হয় ও সাদা কাগজে সই নেওয়া হয়। গত ১৯ মে এক্সিম ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করে। মামলার অভিযোগে বলা হয়, লোনের জন্য ব্যাংকটির দুই শীর্ষ কর্মকর্তাকে গুলি করার চেষ্টা ও নির্যাতন করেছে এই দুই ভাই। এরপরই তারা আলোচনায় আসে।

ঘটনা এখানেই শেষ নয়, কেবল শুরু। এই টুইস্ট পুরোটা বুঝতে হলে আরেকটু পেছন ফিরে তাকাতে হবে। ঐ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি থাইল্যান্ডে অবতরণের অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে গত ২৩মে সেখানকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দিয়েছিলো থাইল্যান্ডে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাস।

এবং ঐদিনই তাদের অনুমোদন দেওয়া হলে ঢাকায় অবস্থিত থাই দূতাবাসে একটি চিঠি দেওয়া হয়। যেখানে দুই জনকে মেডিকেল ভিসা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়। ২৪মে ভিসা ইস্যু করা হয় এবং পরের দিন ২৫ মে তারা ব্যাংককের উদ্দেশে চম্পট দেয়। কী চমৎকার এয়ারলিফট।

যারা ভাবছিলেন নেটফ্লিক্সের এক্সট্র্যাকশন একদম অবাস্তব, এই ঘটনা জানার পর কী ভাবছেন? এমনটা শুধু মানুষের দ্বারাই সম্ভব? উহু, অন্য প্রাণীরাও পিছিয়ে নেই।

মে মাসের একদম শেষ দিকের ঘটনা, দিল্লীর মিরাটে একদল বানর এক মেডিকেল কর্মীকে মেরে করোনাভাইরাসের টেস্ট স্যাম্পল নিয়ে চম্পট দেয়। পরে সেই এলাকায় করোনাভাইরাস ছড়ানোর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে অবশ্য সেগুলো উদ্ধার করা হয়।

যারা প্ল্যানেট অফ দ্য এইপস্ দেখে অবাস্তব ভাবছিলেন, এখন তারা কী ভাবছেন? বাড়ির পাশেই যদি কোনো টাইম ট্রাভেলিং গুহা খুঁজে পান তবে কী করবেন? আর যা-ই করুন, পুরো দুনিয়াটাই যখন নেটফ্লিক্স হয়ে গেছে, কোনোকিছুকেই এখন আর অবাস্তব ভাবার উপায় নেই। 

তথ্যসূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান, ডেইলি স্টার। 

যাদের কাছে ঘটনাগুলো বানোয়াট মনে হয়েছে তাদের জন্য লিংকসহ নিউজ সোর্স উল্লেখ করে দেয়া হলো- 

 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা