ইতালি থেকে ফেরতদের প্রথম নয় ঘণ্টা পর্যন্ত খাবারের ব্যবস্থাই করা হয়নি। কেউ নয় ঘণ্টা অভুক্ত থাকলে সে সেটা নিয়েই প্রতিবাদ করবে। তার জানার কথা না যে, এরপর তাকে শেরাটন থেকে খাবার এনে দেওয়া হবে।

প্রবাসীরা কেন আসছে - এটা একটা অবিবেচকের মতো প্রশ্ন। প্রবাসীরা সবাই আপনার মতো এসি অফিসে আরাম-আয়েশের চাকরি করে না। বছর বছর ছুটি পায় না। আজকে চাইলে কালকে টিকেট করে বিদেশ থেকে ঘুরে আসতে পারে না।

তাদেরকে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে টাকা রোজগার করে নিয়মিত দেশে পরিবারের কাছে পাঠাতে হয়। সেই সাথে নিজেও প্রতিমাসে একটু একটু করে জমাতে হয়। 

দেশে যাওয়া বিশাল খরচের ব্যাপার। শুধু আপ-ডাউন টিকেট না, আত্মীয়-স্বজনের জন্য যে পরিমাণ উপহার নিয়ে যেতে হয়, সেটা সহজ কথা না। সেই পরিমাণ টাকা জমাতেই অনেকের কয়েক বছর লেগে যায়। অনেকেই দেশে যায় চার-পাঁচ বছর পর। সেটাও একদিনের সিদ্ধান্তে যায় না। চার-ছয় মাস ধরে প্রস্তুতি নিয়ে এরপর যায়।

ততদিন দেশে তার পরিবার গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো তার জন্য জমা করে রাখে। বাড়ি উঠাবে? ছেলে বিদেশ থেকে আসুক, এরপর। মেয়ের বিয়ে দিবে? ছেলে আসুক, এরপর। একদিকে দেশে তার জন্য সবাই সব কাজের প্রস্তুতি নিয়ে রাখে, অন্যদিকে সে নিজেও বিদেশ থেকে সবকিছু গুছিয়ে, কর্মক্ষেত্র থেকে দুই-তিন মাসের ছুটির ব্যবস্থা করে দেশের দিকে যাত্রা করে। 

প্রবাসীরা কেন আসছে - এটা একটা অবিবেচকের মতো প্রশ্ন

এমন সময় আপনি যদি বলেন সে নিজে এবং তার আশেপাশের অধিকাংশ মানুষ আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ হওয়া সত্ত্বেও তাকে আপনার কথা চিন্তা করে তার প্রোগ্রাম ক্যানসেল করতে হবে, স্যরি, সেটা অনেকেই মানবে না। তার জায়গায় আপনি হলে আপনি নিজেও মানতেন না। 

তাকে যদি দেশে ঢুকতে দিতে না চান, সরকারকে বলেন ফ্লাইট বন্ধ করতে। ফ্লাইট চালু থাকবে, অথচ আশা করবেন মানুষ নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বিদেশে বসে থাকবে, স্যরি, বাঙ্গালি কোনোকালেই এতো মহান ছিল না। যতো মানুষ প্রবাসীদেরকে গালাগালি করছেন, আপনারা নিজেরাও এতো মহান না। প্রবাসীরা তো বিদেশেই পড়ে আছে, আপনারা তো দেশেই আছেন, আপনারা এতো মহান হলে এতোদিনে দেশের চেহারা পাল্টে যেত।

এগুলোর সমাধান একটাই। কম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থেকে ফেরতদের জন্য হয়তো হোম কোয়ারেন্টাইন চলতে পারে, কিন্তু ইতালির মতো দেশগুলো থেকে ফেরাদের জন্য বাধ্যতামূলক কোয়ারান্টাইনের ব্যবস্থা করা। এবং সেই কোয়ারান্টাইনের ব্যবস্থা যেন মোটামুটি সহনীয় হয়, সেটা নিশ্চিত করা।

না, ফাইভ স্টার হোটেলের খাবার কেউ চায়ওনি, চাওয়ার যুক্তিও নাই। কিছু ছবি থেকে দেখা যাচ্ছে এর আগে চীন থেকে ফেরত ছাত্রদেরকে বেশ ভালো মানের খাবার দেওয়া হয়েছিল। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ইতালি থেকে ফেরতদের প্রথম নয় ঘণ্টা পর্যন্ত খাবারের ব্যবস্থাই করা হয়নি। কেউ নয় ঘণ্টা অভুক্ত থাকলে সে সেটা নিয়েই প্রতিবাদ করবে। তার জানার কথা না যে, এরপর তাকে শেরাটন থেকে খাবার এনে দেওয়া হবে।

খাবার ভেতরে ছিল - ইত্যাদি হাবিজাবি বলে লাভ নাই। ভেতরে থাকলেও কোথায় লুকানো ছিল, সেটা তাদেরকে জানানো হয় নাই। একাধিক প্রবাসীর টিভি সাক্ষাৎকার আছে, তারা উপস্থিত পুলিশ-আর্মির সামনেই চিৎকার করে বলছিল তাদের বাচ্চারা আট-নয় ঘণ্টা ধরে না খেয়ে আছে। উপস্থিত কাউকে সেটার প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি।

হ্যাঁ, তাদের কয়েকজনের, বিশেষ করে একজনের আচরণ খুবই ইর‌্যাশনাল ছিল। এ ধরনের আচরণ সমর্থনযোগ্য না। কিন্তু কারো বাচ্চা আট-নয় ঘণ্টা না খেয়ে থাকলে তার কাছ থেকে র‌্যাশনাল আচরণ আশা করা কঠিন।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা