সাধারণ একজন মেয়ে হিসেবে সাধারণ এই চাওয়াগুলোই কি আমার ভুল?
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

সাধারন একটা জীবন চাওয়া এই আমি নিয়মিত প্রচুর গালির মুখোমুখি হয়েই যাচ্ছি। কই আমি তো বিপ্লবী না, রাজনীতিবিদ না, নেতা না। আমি তো বিপ্লব করিই না। শুধু নিরীহ কিছু চাওয়া আছে আমার...
ট্রাস্ট মি, দুনিয়ার কারো চক্ষুশূল হতে আমার ভালো লাগে না। আমি মিছিলে বড় হয়নি, বাসার কোনো কামরায় শ্লোগান লেখা হত না, সন্ধ্যায় ড্রয়িংরুমে রাজনৈতিক আলাপ আর চায়ের আড্ডাও ছিল না। বড় জোর একটা ঘরোয়া লাইব্রেরি ছিল বলে, ইডা বি ওয়েলস, শিরিন এবাদী, হেলেন কেলার, কিংবা ড. বি আর আম্বেদকর এর মতো সমাজ সংস্কারকদের বায়োগ্রাফী পড়েছিলাম বলে, ওনাদের ভালোবেসেছি।
অথচ সাধারন একটা জীবন চাওয়া এই আমি নিয়মিত প্রচুর গালির মুখোমুখি হয়েই যাচ্ছি। কই আমি তো বিপ্লবী না, রাজনীতিবিদ না, নেতা না। আমি তো বিপ্লব করিই না। শুধু নিরীহ কিছু চাওয়া আছে আমার,
- আমি চাই প্রতিটি হত্যার বিচার হোক, আমি চাই অন্যায়ের সাথে আপোষ না হোক
- এই সমাজের কেউ এসে আমার হাতে মদের গ্লাস দেখে আমাকে চরিত্রহীন, নষ্ট মেয়ে না ভাবুক বরং বলুক ক্যামেলিয়া মদ খাওয়া শরীরের জন্য খারাপ। চাইলে খাও তবে পরিমিত খাও যেন অসুস্থ না হও। পরামর্শে শ্রদ্ধা থাকুক।
- কেউ আমার উপরে ঝাঁপিয়ে না পড়ুক বরং ভালোবেসে তার আচরণ, চিন্তা, প্রজ্ঞা, আর সম্মান দিয়ে জয় করুক।
- কেউ আমাকে তার সম্পত্তি না ভেবে সম ভাবুক।
- আমার শরীরকে খাবার আর নিজেকে নোংরা মাছি না ভাবুক। আমাকে একটা যৌন বস্তু না ভাবুক, মানুষ ভাবুক।
- ছেলে বন্ধুর সাথে আমার ছবি দেখে কেউ বেশ্যা না বলুক। বন্ধুত্বের লিঙ্গ হয় না এটা বুঝুক ।
- যেন ধর্ষণ না হই , আর হলেও কেউ আমার পোশাকের দোষ না ভেবে বরং ধর্ষণের বিরুদ্ধে দাঁড়াক, ধর্ষকটাকে চরিত্রহীন বলুক, আমার উপরে অন্যায় হলে একজন মানুষ হিসেবে তার সঠিক বিচার যেন পাই।
- মেয়ে বলে এটা পারব না, ওটা পারব না, এমন ফালতু আলাপ করে আমার মনোবল না ভাঙুক।
- নীল শাড়ী আর জিন্স টিশার্ট দুটোই বেছে নেবার অধিকার থাকুক। কেউ আমাকে পরামর্শ দিতেই পারে, কিন্তু মানা, না মানার অধিকার হোক। আর না মানলে সেই সিদ্ধান্তকে সম্মান করার চেষ্টা করুক অথবা ইগ্নোর করুক ।
- রাস্তায় দাঁড়িয়ে হিসু করার মতো অসভ্যতা চাই না কিন্তু আমার হিসু যেন চেপে রাখা না লাগে, এই জন্য নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন টয়লেট চাই , আমার পিরিয়ড যে স্বাভাবিক বিষয় এটা সবাই বুঝুক।
- আর চাই , আমার মতামত দেবার অধিকার যেন কেড়ে নেয়া না হয়।
খুব স্বাভাবিক, সাধারণ চাওয়া। আর এই চাওয়াগুলো পূরণ হয় না বলেই লিখি। যেহেতু আমি সাধারণ মানুষ, তাই প্রচুর খোঁচা-গালি সহ্য করতে না পেরে কখনো কঠিন ভাষায় জবাব দেই, কখনো অতিরিক্ত ক্ষেপে গেলে ব্লক করে দেই। রাগ-অভিমান-ক্ষেপে যাওয়া এসবের ঊর্ধ্বে আমি না। আপনি আমাকে সম্মান করবেন না, আমিও করব না।
এবার বলি কেন আজ এই কথা বললাম,
আমিও কোরিয়ান সিরিয়াল দেখে হুহু করে কেঁদে ফেলা সাধারণ মেয়ে, প্রেমিকের গায়ের গন্ধ নিয়ে, পাতার পর পাতা চিঠি লেখা ন্যাকা প্রেমিকা, বন্ধুর অকোয়ার্ড মোমেন্ট নিয়ে মজা করা নিরীহ বিচ।
ফ্রিদা আর ডিয়েগোর ডার্ক রোমান্স পড়ে ফ্যান্টাসাইজ করা, নির্জন দুপুরে ছমছম করা বনের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে catch a boat to england baby শোনা, ঝরনার পাশে ক্যাম্প বানিয়ে জীবনানন্দের মৃত্যুটা দুর্ঘটনা নাকি আত্মহত্যা ছিল- সেই জটিল ধাঁধায় ঢুবে যাওয়া ইত্যাদি অহেতুক, অতি সাধারণ অভ্যাসের বাইরের কেউ না।
শুধু যে কাজটা পারি না, সেটা হল, নিজের সাধারণ চাওয়াগুলো ছাড়তে। তাই আমাকে খুঁচিয়ে, গালি দিয়ে, হামলা-মামলার ভয় দেখিয়ে লাভ নাই, আমি সাধারণ একটা মেয়ে, আর সাধারণ মেয়েদের ক্ষ্যাপালে পশ্চাৎদেশের চামড়া থাকে না- ইতিহাস তাই বলে।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন