আজকে তুমি এসে জন্মদিন পালন কর...? উল্লাস কর...? তোমার লজ্জা করে না? তোমার শরম নাই? আমি তো লজ্জায় মাথা তুলতে পারি না...

লেখাটি যদি পড়বেন চিন্তা করেন তাহলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন দয়া করে। নিচের তালিকাটা ভালো করে লক্ষ্য করেন। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সাতটা নাম মিলায়া মিলায়া পড়েন। দরকার হইলে গুগল করে দেখেন হিসাবে কোন ভুল আছে নাকি-

১. ভদ্রলোকের নাম দো মউই (Đỗ Mười)। তিনি ছিলেন এক সময়ে ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপ্রধান (Chairman of the Council of Ministers 1988–1991), এবং কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক (General Secretary of the Communist Party 1991–1997)। এই ভদ্রলোকের জন্ম ২ ফেব্রুয়ারি ১৯১৭। বর্তমানে তার বয়স ১০১ বছর ৪৩ দিন। তিনি এখনো জীবিত আছেন।

২. ভদ্রলোকের নাম বাবাকির আওয়াইডাল্লা (Babiker Awadalla)। তিনি ছিলেন একসময়ের সুদানের প্রধানমন্ত্রী। তার জন্ম হয় ১৯১৭ সালের ২ মার্চ। বর্তমানে তার বয়স ১০১ বছর ১৫ দিন। তিনি এখনো জীবিত আছেন।

৩. ইয়াসুহির নাকাসন (Yasuhiro Nakasone) জাপানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত। ওনার জন্ম হয় ২৭ মে ১৯১৮ সালে। বর্তমানে তার বয়স ৯৯ বছর ২৯৪ দিন। তিনি এখনো জীবিত আছেন।

৪. হিউন সং-জং (Hyun Soong-jong) ছিলেন উত্তর কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী। তার জন্ম হয় ১৯১৯ সালের ২৬ জানুয়ারি। বর্তমানে তার বয়স ৯৯ বছর ৫০ দিন। তিনিও এখনো জীবিত আছেন।

৫. মোহাম্মদ করিম লামরানী ছিলেন মরক্কোর তিন মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী। জন্ম ১ মে ১৯১৯। বর্তমান বয়স ৯৮ বছর ৩২০ দিন। জীবিত আছেন। বহাল তবিয়তে আছেন।

৬. হাউ পে সুন (Hau Pei-tsun) ছিলেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট। ভদ্রলকের জন্ম হয় ১৯১৯ সালের ১৩ জুলাই। ৯৮ বছর ২৪৭ দিন বর্তমানে তার বয়স। তিনিও জীবিত আছেন।

৭. জাভিয়ার প্যারে জ্যাক্যুইয়ার (Javier Pérez de Cuéllar) পেরুর সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তার জন্ম ১৯২০ সালের ১৯ জানুয়ারি। তার বয়স এখন ৯৮ বছর ৫৭ দিন। ভদ্রলোক এখনো বেঁচে আছেন।

এবার আসেন এই লিস্টটা ভাঙি। উপরের তালিকটার বিশেষত্বগুলো কি কি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন? মোটামুটি এই লিস্টের চারটা বিশেষত্ব আছে।

প্রথমতঃ এই লিস্টের সবাই কোন না কোন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন... দ্বিতীয়তঃ এই লিস্টের সবাই এখনো জীবিত... তৃতীয়তঃ এই লিস্টে সবার বয়স ৯৮ বছরের বেশি... চতুর্থতঃ এই লিস্টের সবাই বঙ্গবন্ধুর চাইতে বয়সে বড়...

বঙ্গবন্ধু ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ (আজকের দিন) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি। তিনি এই জাতির জনক। তিনি স্বাধীনতার ঘোষক। তিনি এই দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট। তিনি এই দেশের সব।

পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরেছেন বঙ্গবন্ধু

মাত্র ৫৫ বছর বয়সে তাঁকে নিজের পরিবারে প্রায় সকল সদস্যের সাথে হত্যা করে তার দেশেরই  মানুষ। তার দেশের সেনাবাহিনী। জানা যায় সেই হত্যাকান্ডের পরিকল্পনায় ছিল তার নিজের হাতে গড়া  দলের সামনের দিকের কিছু মানুষ।

এই লেখাটির পেছনে আমার কোন বক্তব্য নেই। শুধু আপনাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখালাম যে বঙ্গবন্ধু এখনো বেঁচে থাকতে পারতেন। তিনি বেঁচে নেই। আমরা তাঁকে মেরে ফেলেছি। বঙ্গবন্ধুর বুকে ব্রাশফায়ার করেছি, সাতাশটা গুলি করেছি। নয়টা গুলি বুকের নীচের দিয়ে চক্রাকারে ঢুকলো, বা হাতে তর্জনীতে একটা , দুই হাতের উপরে দুইটা, ডান হাতের তালুতে একটা, দুই পায়ে চারটা, দুটি হাটুতে দুইটা। পিঠে একটাও না...

আমি জানি এই পোষ্টের নিচে আপনাদের কমেন্টে আসবে- "আর কত ভাই...?" "কত বিক্রি হবেন...?" "কত দ্যায়...?" "চ্যাতনা ব্যাবসা..." "শেষ-মুজিব" "বঙ্গবল্টু..." "কান পইচা গেলো..." "চেতনার ক্যাসেট..."

বঙ্গবন্ধু একটা ভাষণে একবার বলেছিলেন- "কবিগুরু দেখে যাও, আমার বাঙালি আজ মানুষ হয়েছে..."

বিশ্বাসী বুকটা নয়টা বুলেটের ভারে যখন পড়ে যাচ্ছিলেন তখনও কি সেই বুকে বিশ্বাস ছিলো? নাকি সেই বুকে তখন শুধু বুলেটের ভার?

বঙ্গবন্ধু ৯৯ বছর পার করে ১০০ বছরে পড়লেন। সেই জন্মদিন পালনের উপায় তুমি রাখো নাই বাঙালি। তুমি তোমার নেতাকে খুন করেছো, কল্পনাযোগ্য সব চাইতে নির্মম উপায়ে। হেলিকপ্টারে করে বড় অবহেলায় তোমার পায়ের কাছে কফিন রেখে তুমিই তাঁর লাশটা উড়িয়ে নিয়ে গেছো টুঙ্গিপাড়ায়। সবচেয়ে সস্তা কসকো সাবান দিয়ে গোসল করিয়ে তাঁরই ভিক্ষা চেয়ে আনা সবচেয়ে কম দামী রিলিফের কাপড়ে মুড়িয়ে তুমিই তাঁকে দাফন করেছো। তুমিই পাহারা দিয়েছো যেন কেউ তাঁর জানাজাটুকুনও পড়তে না পারে। 

আজকে তুমি এসে জন্মদিন পালন কর...? উল্লাস কর...? তোমার লজ্জা করে না? তোমার শরম নাই? আমি তো লজ্জায় মাথা তুলতে পারি না... আমি তো ঘুমের মাঝেও পিতার আর্তনাদ শুনতে পাই...

এ জাতি বাঙালি জাতি না হলে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নিতেন। একটা স্যালুট সম্ভবত ভদ্রলোকের পাওনাই ছিল। আমরা সেই পাওনা স্যালুট তাঁকে নিতে দেই নাই। কি ভয়াবহ বর্বরতায় আমরা তাঁকে মেরে ফেলেছি!!  

এখনো বাংলার মাঠে ঘাটে লাখে-লাখে কাতারে-কাতারে মানুষ মনে করে- এই মৃত্যু নাকি তাঁর পাওনাই ছিল!! 

ক্ষমা পিতা, ক্ষমা...


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা