একজন মুফতির পরিবারের গোঁয়ার্তুমিতে বিপন্ন শত শত জীবন!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
দুটো হাসপাতালের কয়েকজন ডাক্তারকে কোয়ারেন্টাইনে যেতে হয়েছে শুধুমাত্র মুফতি আবদুল্লাহ'র পরিবারের বলা বলা মিথ্যার কারণে। মহাসমারোহে তারা জানাজা পড়িয়েছেন, যেখানে মৃতের পরিবারের সবারই কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা ছিল...
জাতি হিসেবে আমরা যে কতটা বুদ্ধিশূন্য এবং বেকুব প্রকৃতির, করোনাভাইরাসের প্রকোপের এই সময়টায় সেটা বারবার জানান দিচ্ছি আমরাই। স্বাস্থ্য খাতের যথাযথ প্রস্তুতি নেই, মানুষের মধ্যে করোনা নিয়ে সিরিয়াসনেস নেই, লকডাউনকে আমরা বানিয়ে ফেলেছি পারিবারিক মিলনমেলার এক মহোৎসব হিসেবে। মানুষজন করোনার লক্ষণ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে পথে-প্রান্তরে, যোগ দিচ্ছে ধর্মীয় সমাবেশে, ভাইরাস ছড়াচ্ছে সমানে। চিকিৎসকদের তো ভিলেনই বানিয়ে দেয়ার একটা চেষ্টা হচ্ছে। এরইমধ্যে পিলে চমকে ওঠার মতো একটা ঘটনা ঘটেছে ঢাকায়।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুইদিন আগে মারা গেছেন ইসলামিক স্কলার মুফতি ড. আবদুল্লাহ বিক্রমপুরী। সরকারী হিসেবে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৩৪ জন মারা গেছেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে, আবদুল্লাহ বিক্রমপুরী তাদেরই একজন। তবে মারা যাওয়ার আগে এবং পরে এই ভদ্রলোক এবং তার আত্মীয়-স্বজনেরা তার সঙ্গে অনেককে পরপারে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন। কীভাবে?
শ্বাসকষ্টের কথা গোপন করে যাত্রাবাড়ির আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ড. আবদুল্লাহ। এক্সরেতে কনসোলিডেশান পাওয়ায় করোনা সন্দেহে IEDCR-এ স্যাম্পল পাঠানো হয়েছিল। ডাক্তাররা তাকে সম্ভাব্য করোনারোগী বলার পর রিপোর্ট আসার আগেই তিনি হাসপাতাল থেকে DORB নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে যান। সেখানেও মিথ্যা তথ্য দিয়ে পেটে ব্যথার কথা বলে সার্জারী [ইউনিট-৫] বিভাগে ভর্তি হন। একপর্যায়ে রোগীর শ্বাসকষ্ট বাড়লে ডাক্তাররা এক্সরে এবং অন্যান্য লক্ষণ দেখে আবারও করোনা সন্দেহে তাকে কুয়েত মৈত্রী হাসাপাতালে রেফার করেন। সেখানে যাওয়ার পথে তিনি মারা যান।
ড. আবদুল্লাহ’র মৃত্যু করোনাভাইরাসের কারণে হয়েছে, এটা নিশ্চিত হবার পরে ঢাকা মেডিকেলের সার্জারি-৫ ইউনিটের ৯ ডাক্তার, ৬ নার্স আর ১ ওয়ার্ডবয় কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। এরা সবাই কোন না কোনভাবে রোগীর সংস্পর্শে এসেছিলেন, তাকে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করেছেন। আজগর আলী হাসপাতালের কয়েকজন ডাক্তার এবং নার্সকেও কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে, তারাও আবদুল্লাহ সাহেবকে চিকিৎসা দিয়েছিলেন।
এটুকুতেও গল্পটা শেষ হতে পারতো। কিন্ত তা হবে কেন? আমরা তো বেকুবের জাতি, বোকামির পরকাষ্ঠা প্রদর্শন না করলে তো আমাদের চলে না। করোনায় আক্রান্তের খবর গোপন করেই মুফতি সাহেবের পরিবার তার মরদেহ নিয়ে আসে এলাকায়। যেখানে করোনায় আক্রান্ত রোগীকে প্রফেশনাল লোকজনের মাধ্যমে, ভীড় এড়িয়ে অতি সাবধানে সমাহিত করার কথা বলা হয়েছে সব জায়গায়, সেখানে মুফতি আবদুল্লাহ সাহেবের পরিবারের সদস্যরা তাকে নিয়ে আসেন সিরাজদিখানের বাড়িতে। প্রায় দেড়-দুইশো মানুষের উপস্থিতিতে জানাজা পড়িয়ে সমাহিত করা হয় তাকে।
করোনায় যে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন, মারাও যেতে পারেন। এটা একটা অসুখ, কোন অভিশাপ নয়। কিন্ত গোয়ার্তুমি করে এমন আচরণ করাটা কারো কাছেই কাম্য নয়, কোনভাবেই নয়। মুফতি আবদুল্লাহ সাহেবের পরিবারের নেয়া একের পর এক আত্মঘাতি সিদ্ধান্তের বলি এখন কতগুলো মানুষ হচ্ছে, সেটা কি তারা গুণেছেন?
দুটো হাসপাতালের কয়েকজন ডাক্তারকে কোয়ারেন্টাইনে যেতে হয়েছে শুধুমাত্র তাদের বলা মিথ্যার কারণে। মহাসমারোহে তারা জানাজা পড়িয়েছেন, যেখানে মৃতের পরিবারের সবারই কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা ছিল। সেই জানাজায় দুইশোর বেশি মানুষ এসেছেন, তারা নিশ্চয়ই মুফতি সাহেবের পরিবারের সদস্যদের সংস্পর্শে এসেছেন কোন না কোনভাবে, সবার মধ্যেই যে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েনি- তার গ্যারান্টি কে দেবে? এমন নির্বুদ্ধের মতো আচরণ করা মানুষজন নিয়ে আমরা করোনার মতো দুর্যোগ মোকাবেলা করব- এটা ভাবতেই অবাক লাগে!
আরও পড়ুন-