মায়ের জন্য কি আসলেই কিছু করছেন আপনারা? যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তাহলে তো খুবই ভালো। সেই কাজগুলো অব্যহত রাখুন। আর উত্তর যদি না হয়, তাহলেও লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই। বেটার লেট দ্যান নেভার।

মিসেস নাজনীন, একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহিণী। বয়স ৪৮। স্বামী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন, তাই দিনের বেশিরভাগ সময় বাসার বাইরে থাকেন। তার এক ছেলে, এক মেয়ে। ছেলেটা বড়, বছরখানেক হলো বিয়ে করে আলাদা হয়ে গিয়েছে। আর মেয়েটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ছে; সেও দিনের একটা বড় সময় ক্যাম্পাসেই কাটায়, আর বাসায় ফিরলে হয় পড়াশোনা, নয়ত মোবাইল হাতে চ্যাটিং বা ল্যাপটপে মুভি-সিরিজ দেখায় ব্যস্ত থাকে।

মিসের নাজনীনের তাই সারাদিনে বিশেষ কিছু করার নেই। সকালবেলা উঠে রান্না করেন। বাপ-মেয়ে তাই খেয়ে, টিফিন নিয়ে, যে যার গন্তব্যে বেরিয়ে পড়ে। সকালের রান্না দিয়েই তার নিজেরও দুপুরের খাওয়া হয়ে যায়। বিকালে মেয়ে ক্যাম্পাস থেকে বাসায় ফেরার আগ পর্যন্ত তিনি শুয়ে-বসেই কাটান। হয়ত পাশের ফ্ল্যাটে গিয়ে ঘন্টাখানেক গল্প করেন, কিংবা পাশের ফ্ল্যাটের ভাবিই তার ফ্ল্যাটে আসেন। এরপর টিভি খুলে গত রাতের সিরিয়ালগুলোর রিপিট টেলিকাস্টই আবারও দেখেন।

বেলা গড়াতে থাকলে গোসল সেরে যোহরের নামাজ পড়ে, একটু কিছু মুখে দিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেন। বিকালে মেয়ে বাসায় ফিরলে তার জন্য চা-নাস্তা বানান, নিজেও একটু খান। তারপর একটু একটু করে রাতের রান্নারও জোগাড়-যন্তর করতে থাকেন। সন্ধ্যার দিকে স্বামী ফিরলে তারও ফাই-ফরমাশ খাটেন। এরপর সিরিয়াল দেখার ফাঁকে ফাঁকেই রাতের রান্নাটা সেরে ফেলেন। রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষ হলে আরও ঘন্টাখানেক টিভি দেখে ঘুমাতে চলে যান। এভাবেই একটা একঘেয়ে রুটিনে কেটে যায় তার প্রতিটা দিন। কোনো আনন্দ নেই, বৈচিত্র্য নেই, নতুনত্ব নেই।

প্রায় তিন দশক আগে যখন বিয়ে করেছিলেন, শ্বশুর-শাশুড়ি-দেবর-ননদদের সাথে এক সংসারে থাকতেন, তখন কীভাবে কীভাবে যে দিনগুলো কেটে যেত, টেরই পেতেন না। কিন্তু এখন মধ্যবয়সে এসে প্রচন্ড একাকীত্ব আর নিঃসঙ্গতায় তার দিন যেন কাটতেই চায় না। প্রতিটা ঘন্টাকে যেন মনে হয় অনন্তকালের মতো। সারাদিন অপেক্ষায় থাকেন কখন স্বামী আর মেয়ে বাসায় ফিরবে। কিন্তু তারা ফিরলেও যে তার খুব একটা সুবিধা হয়, তা কিন্তু নয়। তারা নিজেদের নিয়ে, নিজেদের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকে।তিনি টুকটাক কথাবার্তা বলার সুযোগ পান তাদের সাথে, এ-ই যা। এর বাইরে তার যে নিজের একটা আলাদা ব্যক্তিসত্ত্বা আছে, সেটাকে যেমন কেউ স্বীকৃতি দেয় না, তেমনই তিনি নিজেও আজকাল সেটা ভুলতে বসেছেন। 

স্বামী, সন্তান পালনের বাইরে যে নিজের একটা আলাদা ব্যক্তিসত্ত্বা আছে, সেটাই ভুলে যান মা'রা

এই যে মিসেস নাজনীনের কথা বললাম, তিনি কিন্তু কোনো কাল্পনিক চরিত্র নন। একেবারে বাস্তব সমাজ থেকে উঠে আসা রক্ত-মাংসের একটি চরিত্র। আমাদের চারপাশে এমন অসংখ্য মিসেস নাজনীন ঘুরে বেড়াচ্ছেন। দেখার চোখ নিয়ে আশেপাশে তাকালেই দেখতে পাবো। সেটুকু কষ্টও যদি করার ইচ্ছে না হয়, তবে নিজেদের বাসায় নিজেদের মায়ের দিকেও কিন্তু একটু নজর দিতে পারি আমরা। তাহলে আমরা উপলব্ধি করব, আমাদের অধিকাংশের মায়ের সাথে এই মিসেস নাজনীনের বিন্দুমাত্র অমিল নেই। তারা দুজন যেন প্রায় শতভাগ একরকম।

এবার একটু ভেবে দেখুন তো, প্রারম্ভিক উদ্দীপকে মিসেস নাজনীনের কথা পড়তে পড়তে তার জন্য যেমন গভীর বিষাদে ছেয়ে যাচ্ছিল আপনার মন, বাসায় নিজের মায়ের জন্য কি কখনও সেরকম অনুভূতি হয়েছে আপনাদের? বাজি ধরে বলতে পারি, বেশিরভাগ পাঠকেরই এতদিনে একটিবারের জন্যও হয়নি। কারণ নিজেদের মায়ের ব্যাপারে যে এইভাবে কখনও ভেবেই দেখি না আমরা! মুখে মুখে বলি মাকে অনেক বেশি ভালোবাসি, আমার মায়ের মতো মা পৃথিবীতে আর হয়ই না, মা ছাড়া আমার জীবনের কোনো অর্থই নেই, ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু প্রকৃত বাস্তবতা হলো, মাকে সারাজীবন আমরা কেবল ‘মা’ হিসেবেই ভেবে এসেছি। মায়ের যে একটা স্বতন্ত্র সত্ত্বা থাকতে পারে, তিনিও যে মা হওয়ার আগেও একজন মানুষ, এ ধরনের চিন্তাভাবনা ঘুণাক্ষরেও কখনও আমাদের মনে উঁকি দিয়ে যায়নি। 

অথচ আজ যারা আমাদের বয়স অন্তত বিশের কাছাকাছি (কিংবা এর উপরে যতই হোক), তারা কি কখনও ভেবে দেখেছি সময়ের সাথে সাথে আমাদের মায়েদের জীবন কতটা একাকীত্বে ভরে উঠছে? আমরা কি কখনও ভেবে দেখেছি আমাদের মায়েদের হয়ত ইতিমধ্যেই মেনোপজ হয়ে গেছে বা শীঘ্রই হবে, আর কোনো সেক্সুয়াল আর্জ তাদের মধ্যে অবশিষ্ট নেই- অর্থাৎ নারীত্বের একটা বিশাল বড় অনুষঙ্গই তাদের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে। আমরা কি খেয়াল করে দেখেছি কীভাবে ক্রমশ তারা অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন, কীভাবে সারাটা দিন নিজেদের মনের কথা অন্তত একজনের সাথে ভাগ করে নেয়ার আনন্দ থেকেও তারা বঞ্চিত হচ্ছেন? 

না, আমরা কখনও এগুলো ভেবে দেখিনি, ভেবে দেখিও না। এতকিছুর সময় কই আমাদের! একসময় আমাদের মায়েরা হয়ত তাদের যৌবনের প্রায় পুরোটাই উৎসর্গ করে দিয়েছেন আমাদের বড় করতে গিয়ে, নিজেদের সকল শখ-আহ্লাদ বিসর্জন দিয়েছেন। আজ আমরা বড় হয়েছি ঠিকই, কিন্তু সেই সাথে আমাদের নিজেদের একটা একান্ত ব্যক্তিগত জীবনও যে তৈরী হয়েছে। সেই জীবনে আমাদের প্রেমিক-প্রেমিকা আছে, বন্ধুবান্ধব আছে, কল্পনায় প্রিয় খেলোয়াড়, চিত্রতারকা বা সঙ্গীতশিল্পী আছে, বাস্তব জগতের বাইরেও বিশাল একটা ভার্চুয়াল জগৎ আছে। কিন্তু সেসবের কোনোটাতেই আমাদের মায়েদের স্থান নেই, এমনকি প্রবেশাধিকারও নেই। আমরা আমাদের নিজেদের জগৎ, নিজেদের দুনিয়া নিয়ে মেতে থাকি, ব্যস্ত থাকি, কিন্তু আমাদের মায়েদের কথা একটিবার চিন্তা করারও ফুরসত পাই না। 

প্রতিনিয়ত আমাদের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হতে হতে আমাদের কাছ থেকে আমাদের মায়েদের এক্সপেকটেশন লেভেলও এক পর্যায়ে শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। প্রায়ই তাদের বলতে শোনা যায়, “ছেলেমেয়ের সুখেই আমাদের সুখ!” এটা কতটা তাদের মনের কথা, আর কতটা হতাশা থেকে জন্মানো ক্ষোভের কথা, তা কি আমরা ভেবে দেখেছি? আমাদের মায়েদের বয়স কতই বা, বলুন তো? কারও কারও মায়ের বয়স হয়ত পঞ্চাশোর্ধ, আবার অনেকের মায়ের বয়স এখনও পঞ্চাশ ছোঁয়নি। তারমানে গড় আয়ুর হিসেবে তাদের জীবনের এখনও অনেক লম্বা একটা সময় অবশিষ্ট রয়েছে। কিন্তু আমরা ক্রমাগত তাদের প্রতি শীতল আচরণের মাধ্যমে তাদের অবস্থা এতটাই দুর্বিষহ করে তুলেছি যে, আমাদের কাছ থেকে তো নয়ই এমনকি সামগ্রিক জীবনের কাছ থেকেও তাদের আর কোনো প্রত্যাশা নেই। 

কিন্তু আসলে কি জিনিসগুলো এমন হওয়া উচিৎ ছিল? আমরা কি চাইলেই আমাদের মায়েদের জীবন একদম অন্যরকম করে তুলতে পারতাম না? বা এখনও চাইলেই কি তা পারি না? প্রথম কথা হলো, আমরা আমাদের মা'দেরকে যা দিতে পারি তা হলো সময়। একজন মায়ের কাছে সন্তানের সান্নিধ্যের চেয়ে বড় আর কিছু হতে পারে না। তাই প্রতিদিন কিছুটা করে হলেও সময় আমরা তাদের জন্য বরাদ্দ রাখতে পারি। প্রতিদিন না হোক, দুই-তিন দিন অন্তর একবার, বা নিদেনপক্ষে সপ্তাহে একবার কিছুটা সময় তাদের জন্য বরাদ্দ তো রাখা যেতেই পারে। এই সামান্য একটা কাজের মাধ্যমেই কিন্তু তাদের জীবনকে অনেকাংশেই পরিবর্তন করে দেয়া সম্ভব, তাদের নিঃসঙ্গতা ও একাকীত্বের গায়ে কিছুটা হলেও ভালোলাগার প্রলেপ দেয়া সম্ভব। 

এখন অনেকেই বলতে পারেন, আমরা তো পড়াশোনা বা পেশাগত কারণে পরিবারের কাছ থেকে, মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকি। তাই আমাদের তো সম্ভব না মাকে সময় দেয়া। হ্যাঁ, যারা পরিবারের থেকে দূরে, অন্য শহরে বা দেশে থাকেন, তাদের পক্ষে শারীরিকভাবে মাকে সময় দেয়া সম্ভব নয় অবশ্যই। কিন্তু প্রতিদিন অন্তত একবার ফোনে তার সাথে কথা তো বলাই যায়, তাই না? ভেবে দেখুন তো, প্রতিদিন নিজের প্রেমিক-প্রেমিকা বা বন্ধু-বান্ধবের সাথে ফোনে বা ফেসবুক চ্যাটে গড়ে কতক্ষণ কথা বলেন আপনারা। নিজের মায়ের সাথে দিনে তার বিশভাগের একভাগ সময়ও কি কথা বলা যায় না? 

ছোট থাকতে মায়ের সাথে সারাক্ষণ লেপ্টে থাকলেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে কোথায় যেন একটা দূরত্ব নিয়ে আসি আমরা

এ তো গেল শুধু নিজেদের সময় দেয়া বা কথা বলার প্রসঙ্গ। এছাড়াও পঞ্চাশোর্ধ বা পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই মায়েদের জীবনকে কিছুটা আনন্দময় করে তুলতে আমরা চাইলেই আরও কিছু কাজ অনায়াসেই করতে পারি। যেমন ধরুন আমাদের নিজেদের প্রতিদিনের সিংহভাগ সময়ই ব্যয় হয় ফেসবুক চালিয়ে বা স্মার্টফোন টেপাটিপি করে। আমরা নিজেরা যেটার মাধ্যমে সময় কাটাতে পারছি, আমরা কি পারি না আমাদের মায়েদেরকেও সেটার মাধ্যমে সময় কাটানোর ব্যবস্থা করে দিতে? আমরা হয়ত সমাজে বা ফ্রেন্ড সার্কেলে নিজেদের স্ট্যাটাস মেইনটেইন করতে বিশ-তিরিশ হাজার, এমনকি আশি-নব্বই হাজার টাকার মোবাইলও ব্যবহার করে থাকি। আমাদের মায়েদের অত দামি মোবাইলের দরকার নেই। ছয়-সাত হাজার টাকাতেই মোটামুটি চলনসই মানের এন্ড্রয়েড ফোন পাওয়া যায়। আমরা তো তাদেরকে ওইরকম একটা মোবাইল কিনে দিয়ে, তাতে ফেসবুক-ইউটিউবসহ বিনোদনের প্রধান প্রধান ফিচারগুলো চালানো শিখিয়ে দিতে পারি। ফেসবুক-ইউটিউব যদি কেবল ‘টাইম পাস’ এর জন্যই ব্যবহার করতে হয়, তাহলে সেটা থেকে আমরা যতটুকু উপকৃত হতে পারি, তারচেয়ে আমাদের মায়েরা কিন্তু দশগুণ বেশি উপকৃত হতে পারবে।

এছাড়া অনেকেরই বাসায় হয়ত এমন অবস্থা যে মাত্র একটাই টিভি, তাই মায়েরা ইচ্ছা থাকলেও নিজেদের মনমত অনুষ্ঠান দেখতে পাননা। অথচ একটা টিভির দামও তো আজকাল খুব বেশি না। বারো থেকে পনেরো হাজার টাকার মধ্যেই বেশ ভালোমানের টিভি কিনে উপহার দেয়া যায় মাকে।

আর মায়ের যদি দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে, তাহলে কিন্তু তার মধ্যে নতুন করে বই পড়ার অভ্যাসও গড়ে তোলা সম্ভব। খুব ভারি কোন বই না হয় না’ই পড়ালেন, অন্তত হুমায়ূন-সুনীল-শীর্ষেন্দুর বই তো পড়াতেই পারেন। বই পড়লে সময় যেমন ভালো কাটবে তাদের, তেমনি সস্তামানের টিভি সিরিয়ালের চেয়েও অনেক বেশি বিনোদন পাবেন তারা। কোনো রকমে যদি একবার তাদের মনে বইয়ের নেশা জাগিয়ে তোলা যায়, তাহলে দেখবেন তাদের জীবনটাই পুরোপুরি পাল্টে গেছে। 

তাছাড়া আরও একটা কাজ করতে পারেন, সেটা হলো মাঝেমধ্যে মায়েদের সাথে করে ট্যুরেও যেতে পারেন। না, মোটেই রসিকতা করছি না আমি। বন্ধুবান্ধবের সাথে এক-দুই মাস অন্তর সিলেট-চট্টগ্রাম-রাঙামাটি-কক্সবাজার তো ঠিকই যাচ্ছেন। তাহলে মা-বাবা ও পরিবারের অন্যান্যদের সাথে নিয়ে বছরে অন্তত একবারও কি কাছের কোনো জেলা থেকে দুই-তিনদিনের জন্য বেড়িয়ে আসা যায় না? চাইলেই কিন্তু যায়, কিন্তু আমি জানি, এরকমটা করার কথা অনেকেই হয়ত কোনোদিন চিন্তাও করেননি।

একবার ভেবে দেখুন তো, আমরা তো কিছুদিন পরপরই ট্যুরে যাই, নতুন নতুন জায়গা দেখি। কিন্তু আমাদের বেশিরভাগের মায়েরাই সারাজীবন বাপের বাড়ি টু শ্বশুরবাড়ি বাদে অন্য কোথাও যাননি। তাদের কি মনে সাধ জাগতে পারে না নিজেরাও নতুন কোনো জায়গায় যাওয়ার, পৃথিবীটাকে নতুন করে দেখার? আমাদের বাবাদের পক্ষে হয়ত এখন আর সেই সাধ পূরণ করার ক্ষমতা নেই, কিন্তু আমরা চাইলেই সেটা করতে পারি। 

আরও যে কাজটা চাইলেই করতে পারি, তা হলো মাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে খেয়ে আসতে পারি। নিজেরা তো প্রায়ই রেস্টুরেন্টে যাই, ট্রিট দিই, চেক ইন দিই, সেলফি তুলি। আজ না হয় মাকে নিয়ে যেতে পারি রেস্টুরেন্টে। সকালে উঠেই মাকে বলে দিতে পারি, “তুমি তো রোজ আমার জন্য এত কষ্ট করে রান্না করো। আজ আর কষ্ট করা লাগবে না তোমার। চলো আজ তোমাকে আমি রেস্টুরেন্টে ট্রিট দেব।” তারপর কিন্তু সত্যি সত্যি মাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে একটা সেলফি ফেসবুকে আপলোড দিতেই পারি।

বিশ্বাস করুন, ফেসবুকে মাতৃভক্ত মানুষের সংখ্যা কিন্তু প্রচুর। নিজের প্রেমিকাকে নিয়ে যদি আপনি সেলফি তুলে ফেসবুকে আপলোড দেন, রাগে-হিংসায় অনেকেই হয়ত সেটায় লাইক দেবে না। কিন্তু মায়ের প্রতি সবার মনেই একটা দুর্বলতা কাজ করে। তাই দেখবেন মায়ের সাথে আপলোড করা ছবিতেই আপনি এ যাবতকালের সর্বোচ্চ লাইক-কমেন্ট-লাভ পেয়ে গেছেন!

পরিশেষে একটা জরুরি কথা না বললেই নয়। অনেকেই হয়ত আমরা ভাবি যে আগে নিজের পায়ে দাঁড়াই, টাকা রোজগার করতে শুরু করি, তারপর না হয় মাকে অনেক সুখে রাখব, মাকে আর কোনো কষ্ট পেতে দেবো না। কিন্তু সেই সুযোগ আমাদের সবার জীবনে নাও আসতে পারে। আর যদি তা আসেও, ততদিনে যে অনেক দেরি হয়ে যাবে। এখনও আমাদের মায়েদের জীবনে যে ন্যূনতম শখ-আহ্লাদ অবশিষ্ট আছে, সেটুকুও হয়ত ততদিনে কর্পূরের মত উবে যাবে। তারচেয়ে এখন থেকেই নিজেদের যতটুকু সম্ভব, সে অনুযায়ী মাকে খুশি রাখার চেষ্টা করতেই পারি।

মনে রাখবেন, কাউকে কেবল টাকা দিয়েই খুশি রাখা যায় না। পৃথিবীতে টাকার চেয়েও অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস রয়েছে, আর সেগুলোর মাধ্যমে আমরা এখন থেকেই মাকে খুশি করার মিশন শুরু করে দিতে পারি। আর যারা ইতিমধ্যেই নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়ে গেছেন, অথচ স্রেফ মাসে মাসে মাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করে বা নতুন জামাকাপড় কিনে দিয়ে ভাবছেন দায়িত্ব সেরে ফেলেছি, তাদেরকে বলবো- যারা মাকে বৃদ্ধ্বাশ্রমে রেখে আসে, তাদের সাথে আপনাদের কিন্তু খুব বেশি পার্থক্য নেই। শুধু টাকা দিয়ে কিছুই হয় না, যদি না মাকে সময় দেয়া যায়, সঙ্গ দেয়া যায়, তার মন ভালো করার জন্য নিত্য-নতুন পন্থা অবলম্বন করা যায়, আপনার জীবনে তার গুরুত্ব ঠিক কতটা, সেটা তাকে উপ্লব্ধি করানো যায়। 

যাইহোক, এতক্ষণ এই লেখা যারা পড়লেন, নিজের বিবেকের কাছে একবার প্রশ্ন করে দেখুন, মায়ের জন্য কি আসলেই কিছু করছেন আপনারা? যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তাহলে তো খুবই ভালো। সেই কাজগুলো অব্যহত রাখুন। আর উত্তর যদি না হয়, তাহলেও লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই। বেটার লেট দ্যান নেভার। চলুন আজ থেকেই নিজ নিজ মায়ের জন্য কিছু করা শুরু করি। শুধু মা দিবসে নয়, বছরের প্রতিটা দিনই মাকে ভালোবাসি, মায়ের জন্য কিছু করি।

প্রতীকী ছবি- সাদীয়া বিনতে আজহার ও মাশরাফি ইবনে মুক্তার


ট্যাগঃ

শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা