মোতালেব সরকার: অতীত হাতড়ে বেড়ানোই যার নেশা ও পেশা!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
আটত্রিশ বছর ধরে তিনি যুক্ত আছেন প্রত্বতাত্ত্বিক নিদর্শন খোঁজার কাজে। একশোটিরও বেশি স্থানে গিয়ে তিনি বের করে এনেছেন প্রাচীন সব নিদর্শন। মোতালেব সরকার এমন এক বাতিঘর, যেখানে স্পষ্ট হয়ে ফুটে ওঠে ইতিহাসের একেকটা অধ্যায়!
আমাদের চারপাশে এমন অনেক মানুষকে আমরা প্রায়শই দেখি, যারা আলাদা করে নজর কাড়েন না। পাদপ্রদীপের তলায় তাদের অস্তিত্ব বরাবরই মলিন। তবে তাদের যে কাজ, সেটুকু তারা বেশ যত্ন নিয়েই করে যান। কে মনে রাখলো, কে ভুলে গেলো, কতটুকু পরিচিতি পাওয়া গেলো... এই বিষয়গুলো তাদের কাছে খুব গুরুত্ব বহন করে না দেখেই তারা তাদের কাজ নিয়েই নিভৃতে শান্তিতে থাকেন। এরকমই একজন মোঃ মোতালেব সরকার। প্রত্বতাত্ত্বিক নিদর্শনের সুলুকসন্ধান করাই যার একমাত্র কাজ৷
আমার শৈশব থেকে যদি আমি বলি, আমার ছোটবেলার গল্প-উপন্যাসে ঘুরেফিরে প্রত্নতাত্ত্বিক বিষয়গুলো বারবার আসতো। সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা সিরিজের 'কৈলাসে কেলেঙ্কারি' পড়েছি, যেখানে প্রত্বতাত্ত্বিক নিদর্শন চুরি ঠেকাতে ফেলুদা ছুটে বেড়াচ্ছে এখান থেকে ওখানে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'কাকাবাবু' তো 'আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া'র কর্মকর্তাই ছিলেন। মিশর থেকে শুরু করে কানাডা ঘুরে বেড়িয়েছেন, প্রত্বতাত্ত্বিক দৃষ্টান্তের খোঁজে। আবার তিন গোয়েন্দা'র বইয়েও মাঝেমধ্যেই দেখেছি, মাটির গহীন থেকে অমূল্য রত্ন উদ্ধারের টানটান গল্প। অর্থাৎ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন যারা উদ্ধার করেন বা এই কাজে নিয়োজিত থাকেন, তারা বরাবরই আমার কাছে ঈর্ষার ও রহস্যের চরিত্র। যেমনটি মোঃ মোতালেব সরকারও।
তার জন্ম মহাস্থানগড়ের লাল মাটিতে। জন্মের পর থেকেই দেখেছেন বাবা-দাদা'রা যুক্ত এই কাজের সাথে। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরে তিনি নিজেও লেগে পড়েছেন কাজটির সাথে। কাজ করতে করতে চলে গিয়েছে ৩৮টি বসন্ত। ৩৮ বছর ধরেই তিনি যুক্ত আছেন এ পেশার সাথে। এখন পর্যন্ত একশোটিরও বেশি প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন উদ্ধার অভিযানের কাজে ছিলেন। কাজের সূত্রে ঘুরেছেন মহাস্থানগড়, ময়নামতি, কুমিল্লা, খুলনা, সাতক্ষীরা সহ বাংলাদেশের নানা প্রান্তে। এভাবে কাজ করতে করতে তিনি এই পেশায় এতটাই দক্ষ হয়ে উঠেছেন, প্রত্বতত্ত্ব গবেষণার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও তার পরামর্শ মেনে চলেন সময়ে সময়ে। মাটি দেখেই অনেক সময়ে তিনি বলে দিতে পারেন অনেক কিছু। অথচ এ বিষয়ে তার পড়াশোনা নেই একটুও। তবুও 'গাইতে গাইতে গায়েন' প্রবাদটিকে সার্থক করেই প্রত্বতাত্ত্বিক জ্ঞানে তিনি নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন এক অন্যরকম উচ্চতায়।
জীবনানন্দ লিখেছিলেন- কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে! কেউই বাসে না। তবে মাটি খুঁড়ে অতীত বের করার কথা হলে, তা অন্য হিসেব। যে কাজটাই আগ্রহ নিয়ে করেন মোতালেব সরকার। ইতিহাসের হলদেটে একেকটা পৃষ্ঠা জীবন্ত হয়ে ওঠে মোতালেব সরকারের হাত ধরেই। তিনিও হয়তো মেতে ওঠেন সৃষ্টিসুখের উল্লাসে। তার জন্যে এটাই হয়তো পরম প্রাপ্তি, স্বস্তি, আনন্দ। কেউ মনে না রাখুক, তিনি যদি তার পেশায় স্বস্তি পান, সেটাই তো বড় কথা।
একজন মোতালেব সরকারের জন্যে রইলো শুভকামনা ও ভালোবাসা।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন