ভাঙ্গা দাঁত ও একজন 'সিরিয়াল রেপিস্ট' এর গ্রেফতার!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
নির্যাতিতা তরুণী পুলিশের কাছে মজনুর শারিরীক অবয়বের কথা উল্লেখ করার সময় ভাঙা দাঁতের কথা বলেছিলেন, মজনুকে গ্রেফতারে সেই তথ্যটা কাজে লেগেছে বলেও জানিয়েছে র্যাব।
বারো বছর আগে চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে দুইটা দাঁত ভেঙ্গে গিয়েছিল মজনুর। সেই ভাঙা দাঁতের সূত্রটাই পুলিশ আর র্যাবকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে নরপিশাচ এই ধর্ষককে খুঁজে বের করার কাজে। তিনদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ধর্ষন করা মজনুকে আজ গ্রেফতার করে জনসম্মুখে এনেছে র্যাব, সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের পক্ষ থেকে তাকে উল্লেখ করা হয়েছে ‘সিরিয়াল রেপিস্ট’ হিসেবে, জানা গেছে আরও কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য।
র্যাব জানিয়েছে, মজনুর বাড়ি নোয়াখালীর হাতিয়ার সন্দ্বীপে। বাবা মারা গেছেন, মা জীবিত থাকলেও বাড়ির সঙ্গে মজনুর কোনো যোগাযোগ নেই। মজনু বিবাহিত, তার স্ত্রী মারা গেছেন। ১০ বছর আগে জীবিকার সন্ধানে ঢাকায় আসে সে। স্ত্রীর মৃত্যুর পর থেকে বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে সে- এমনটাই নাকি র্যাবের কাছে দাবী করেছে মজনু।
র্যাব বলছে, মজনু একজন মাদকাসক্ত। পেশায় সে নিজেকে দিনমজুর বলে দাবি করলেও ছিনতাই, রাহাজানি ও চুরির মতো অপরাধ কর্মকাণ্ডে সে জড়িত। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। নির্যাতনের শিকার হওয়া সেই ছাত্রীর ব্যাগ এবং পাওয়ার ব্যাংক উদ্ধার করা হয়েছে মজনুর কাছ থেকে।
ধর্ষণের শিকার হওয়া ছাত্রীর খোয়া যাওয়া মুঠোফোন ও অন্যান্য সামগ্রী এই মজনুর কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। মজনু মুঠোফোনটি অরুণা নামের একটি মেয়ের কাছে বিক্রি করে। অরুণা আবার সেটি বিক্রি করেন খায়রুল হক নামের এক ব্যক্তির কাছে। গতকাল অরুণা ও খায়রুলকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব নিশ্চিত হয় আসল অপরাধী কে।
সেই সূত্র ধরেই আজ ভোর রাত ৪টা ৫০ মিনিটে ঢাকার শেওড়া এলাকা থেকে মজনুকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন র্যাবের মিডিয়া শাখার পরিচালক সারোয়ার বিন কাশেম। মজনুকে একজন ‘সিরিয়াল রেপিস্ট’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, এই ব্যক্তি এর আগেও বিভিন্ন সময় ভিক্ষুক ও প্রতিবন্ধী নারীদের ধর্ষণ করেছে। টার্গেট করেই নারীদের ধর্ষণ করতো সে, যেমনটা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ছাত্রীকে।
ধর্ষণের আগে মজনু ওই এলাকায় ওত পেতে ছিল মজনু। ধর্ষণের পর মেয়েটিকে হত্যার চেষ্টাও চালিয়েছিল সে, এলোপাথাড়ি আঘাত করেছিল তরুণীকে, গলা টিপে মেরে ফেলার চেষ্টাও করেছে। মেয়েটিকে অজ্ঞান করতে কোনো ক্লোরোফর্ম ব্যবহার করেনি মজনু। এই ঘটনা ঘটানোর পর তার মধ্যে কোনো অনুশোচনা বোধও নেই। ঘটনা ঘটানোর পর সে নরসিংদী চলে গিয়েছিল। তবে কাল সারা দিন সে ছিল বনানী স্টেশনে।
র্যাব মজনুকে গ্রেফতারের পর নির্যাতিত সেই ছাত্রীকে তার ছবি দেখিয়ে নিশ্চিত হতে চেয়েছে, সেই ছাত্রী মজনুকে ধর্ষক বলে শনাক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘সব চেহারা ভুলে গেলেও এই চেহারাটা কোনদিন ভুলতে পারবো না।
এর আগে জবানবন্দী দেয়ার সময় নির্যাতিতা তরুণী পুলিশের কাছে মজনুর শারিরীক অবয়বের কথা উল্লেখ করার সময় ভাঙা দাঁতের কথা বলেছিলেন, মজনুকে গ্রেফতারে সেই তথ্যটা কাজে লেগেছে বলেও জানিয়েছে র্যাব। ঘটনার স্থানের কোন পরিস্কার সিসিটিভি ফুটেজ ছিল না র্যাবের কাছে, বড় কোন আলামতও ছিল না। তবুও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ধর্ষককে দ্রুত গ্রেফতার করতে পেরেছে তারা, এজন্যে একটা ধন্যবাদ তাদের প্রাপ্য।