দুধ সম্পর্কীয় মাতা ও বোনের সাথে বিয়ে ইসলামে কড়াভাবে নিষেধ করা হয়েছে। মূলত, আপন রক্তের সম্পর্কীয় মা ও বোনের সাথে দুধ সম্পর্কের মা ও বোনের মাঝে এক্ষেত্রে কোনো ব্যবধান টানেনি ইসলাম। এমন পরিস্থিতিতে আরবরা কী করতো?

ফেসবুকে প্রচন্ড হাউকাউ শুরু হয়েছে হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক নিয়ে। ইসলামে নাকি মিল্ক ব্যাংক হারাম, তাই বাংলাদেশে এ বেশরিয়তী কর্মকান্ড বন্ধের জন্য আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। সমস্যা হচ্ছে, 'হারাম' শব্দটাকে আমাদের সাধারণ মুসলিমরা এমনভাবে ব্যবহার করেন, যেন এটি খুবই ঠুনকো একটি শব্দ। যে কেউ, যখন তখন, যে কোনো কিছুকে হারাম ঘোষণা করতে পারে!

অথচ এটি অত্যন্ত সেনসিটিভ বিষয়। এবং হারাম শব্দটিও এত শক্তিশালী যে, যে কোন রামশ্যাম জদু মদুর অধিকার নেই এ নিয়ে খেলার। ইসলাম ফিকহ শাস্ত্র অতি অতি জটিল বিষয়। এর প্রধান নিয়ম হচ্ছে, কোনো কিছুকে হারাম ঘোষণার আগে এটি কেন হালাল নয়, তা আপনাকে প্রমান করতেই হবে।

আমি কোনো ইসলামিক পন্ডিত নই। তবে কিছু ব্যাপার নিজের যেটুকু পড়াশোনা আছে, তার উপর ভিত্তি করে বলতে চাই। বাকি স্কলাররা বুদ্ধি বিবেচনা করে দেখবেন।

আগে দেখা যাক মিল্ক ব্যাংক বিষয়টা আসলে কী। এটি হচ্ছে এমন এক প্রতিষ্ঠান, যেখানে মায়েরা তাঁদের দুধ জমা রাখতে পারবেন, যাতে মায়ের দুধের অভাবে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুরা মাতৃদুগ্ধ পান করে সুস্থ সবল জীবন পেতে পারে।

এখন কিছু বিষয় ভেঙ্গে চুড়ে বলি। যে কোনো মুসলিম জানেন যে আমাদের নবী (সঃ) শৈশবে সুয়াইবা নামের এক নারীর দুগ্ধ পান করতেন, এবং এর কিছুদিনের মধ্যেই হালিমার দুধ পান করে বেঁচে ছিলেন। দুধ মাতা কনসেপ্টটা তখনকার আরব সমাজে অতি সাধারণ ঘটনা ছিল। নবীর নিজেরও কয়েকজন দুধ সম্পর্কীয় আত্মীয় ছিলেন, সাহাবীদের ক্ষেত্রেও তাই ছিল। তাহলে দেখা যাচ্ছে, অন্যের দুধ পান করা আমাদের ধর্মে নিষেধ না, উল্টো প্রশংসার বিষয়। আপনার বুকের অতিরিক্ত দুধ, যা অব্যবহারে নষ্ট হয়ে যাবে, এর বিনিময়ে আপনি কিছু শিশুর জীবন রক্ষা করতে পারলে কেন আপনি সেটা করবেন না? এতে তো সোয়াব হবে।

হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকের মাধ্যমে মাতৃদুগ্ধের অভাবে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুরা সুস্থ জীবন পাবে

তাহলে ইসলাম আপত্তি করছে কোথায়?

দুধ সম্পর্কীয় মাতা ও বোনের সাথে বিয়ে ইসলামে কড়াভাবে নিষেধ করা হয়েছে। মূলত, আপন রক্তের সম্পর্কীয় মা ও বোনের সাথে দুধ সম্পর্কের মা ও বোনের মাঝে এক্ষেত্রে কোনো ব্যবধান টানেনি ইসলাম। কিন্তু এখানেও একটি বিষয় চরমভাবে লক্ষ্যণীয়, ইসলাম দুধ সম্পর্কের ভাই/বাবা-বোন/মায়ের বিয়ে নিষেধ করেছে, কিন্তু দুগ্দ্ধ পান নিষেধ করেনি। তাহলে এখানেও হালাল হারাম ঘোষণা করতে হলে এই বিষয়টাই মাথায় রাখতে হবে। আস্ত মিল্ক ব্যাংককে আপনি হারাম ঘোষণা করতে পারেন না, তাদের রেকর্ড কিপিং সিস্টেমকে হারাম ঘোষণা করতে পারেন। তাহলে, এমন পরিস্থিতিতে আরবরা কী করতো? ভালভাবে জেনে রাখতো কে কার দুধ মা, এবং সেই সম্পর্ক মেইনটেইন করতো। অতি সহজ সমাধান।

চৌদ্দশো বছর আগের জাহেলী আরবরা যদি এই কাজ করতে পারে, এই অতি আধুনিক যুগে আমরা সেটা করতে পারবো না? কম্পিউটারে একটা সফ্টওয়্যার লাগবে, যে লগে হিসেব রাখবে কে কার দুধ খেয়েছে। এই রেকর্ড আর্কাইভড হয়ে থাকবে। এবং যখন প্রয়োজন হবে, তখন ডাটাবেসে নাম, পিতা/মাতার নাম, ঠিকানা, জন্মতারিখ ইত্যাদি দিয়ে সার্চ দিলেই বেরিয়ে আসবে কে কার কার দুধ পান করেছে।

বাংলাদেশে হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক

খুব কি কঠিন কিছু? মোটেও না। কম্পিউটার সায়েন্সের আন্ডারগ্র্যাড ছাত্রও এমন সফ্টওয়্যার বানিয়ে দিতে পারবে চাইলে। আরও অনেক অনেক সমাধান আছে। মাথা খাটালেই পাবেন। তবে তার আগে শান্ত হয়ে বসে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করতে হবে।

"বিয়েতে গিট্টু পাকিয়ে যাবে" - বিষয়টাকে এইভাবে না দেখে বরং "লাখে লাখে শিশুর প্রাণ রক্ষা সম্ভব" এইভাবে দেখতে শিখুন। তাহলেই দেখবেন কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ীই সমাধান আছে।

আরও পড়ুন-


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা