আপনি শুরুটা কোথা থেকে কীভাবে করলেন সেটা জরুরি নয়। জরুরী হলো, আপনি কোথায় গিয়ে থামলেন আর সাফল্যের মুকুটে কতগুলো পালক যোগ করতে পারলেন।

আজ যার কথা বলব, তার জীবনের শুরুটা হয়েছিল একেবারে তলানি থেকে। পেশায় তিনি ছিলেন অতি সামান্য এক কুলি। জাহাজ বন্দরে মাল ওঠানো-নামানোর কাজ করত সে। সেই সময়টায় তার জীবনে না ছিল বড় কোন লক্ষ্য, না কোন উচ্চাকাঙ্ক্ষা। শুধু প্রতিটা দিন কোনমতে পার করে দিতে পারলেই যেন শান্তি। 

তার জন্ম তামিল নাড়ুর ছোট্ট এক গ্রামে। বাবা কাজ করত দিনমজুরের। ছোটবেলায় আর সব শিশুর মত তিনিও স্কুলে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার স্কুলজীবন খুব বেশি দীর্ঘায়িত হয়নি। কারণ ক্ষুধার কাছে শিক্ষা তো হার মানবেই। যেখানে দুবেলা ঠিকমত খাবারই জোটে না, সেখানে শিক্ষাগ্রহণ নিতান্তই বিলাসিতা। তাই অচিরেই স্কুল ত্যাগ করতে হয় তাকে। ১৯৫৭ সালের দিকে মাদ্রাজে গিয়ে বন্দরে কুলির কাজ শুরু করেন তিনি। সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনি করে এক সময় কিছু টাকা সঞ্চয় করতে সমর্থ হন তিনি। আর কাজ করতে করতে এই লাইনের অনেকের সাথে তার বেশ সুসম্পর্কও গড়ে ওঠে।

সঞ্চিত অর্থ আর সবার সাথে সুসম্পর্ককে কাজে লাগিয়েই সে একসময় নিজেই মালামাল সরবরাহের একটা ছোটখাটো ব্যবসা ফেঁদে বসে। সামান্য এক কুলির জন্য এরকম একটা ব্যবসার সাথে যুক্ত হওয়া তখনকার দিনে ছিল সত্যিই পরম বিস্ময়ের। কারণ এটা ছিল এমন একটা ব্যবসা যেখানে কেবল খুব ধনী ব্যক্তিরাই সফল হতে পারে। এখানে বিনিয়োগ অনেক বেশি করতে হতো, তাই ঝুঁকির হারও থাকত তুলনামূলক বেশি। কিন্তু মূলধন কম হলে কী হবে, সে সবসময় চেষ্টা করত তার কাস্টোমাররা যাতে তার কাজে কখনও কোন খুঁত খুঁজে না পায়। সময়মত মাল ডেলিভারি দেয়ায় সুখ্যাতি ছিল তার। আর এজন্য খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সবার চোখের মণি হয়ে ওঠেন তিনি। 

ছোটখাটো কাস্টোমারদের কাছে তার সুখ্যাতি শুনে এক পর্যায়ে বড় বড় কাস্টোমাররাও এসে লাইন ধরতে শুরু করে তার কাছে। আর এভাবেই ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতা আসতে শুরু করে তার জীবনে। কিন্তু তারপরও তিনি জানতেন, এক পর্যায়ে আরও বড় কোন ঝুঁকি নিতে হবে। নয়ত কিছুদিন হয়ত তার অবস্থা ভালোই থাকবে, কিন্তু পরে বড় কোন প্রতিযোগীর সম্মুখীন হলে হার মানতে হবে তাকে। সেজন্য মোটামুটি বড় রকমের ঝুঁকি নিয়েই তিনি নতুন বেশ কিছু ব্যবসা শুরু করেন। এর মধ্যে কয়লাসহ বিভিন্ন খনিজ সম্পদ, খাদ্যদ্রব্য ও পানীয়, ইন্টারন্যাশনাল হোটেল ইত্যাদি অন্যতম। এভাবে যতই দিন যেতে থাকে, তার ব্যবসার প্রভূত উন্নতি হতে থাকে। 

এতক্ষণ যার কথা বলছিলাম, তিনি ভারতের অন্যতম বৃহৎ শিল্পপতি এমজি মুঠু, এমজিএম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা। এবং সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, যেই লোকটা একদিন কুলির কাজ করতেন, দিন আনি দিন খাই গোছের জীবনযাত্রা ছিল যার, সেই লোকটাই আজ ২৫০০ কোটি রুপির মালিক। হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। একটা শূন্যও বেশি লেখা হয়নি। বাস্তবিকই তিনি আজ আড়াই হাজার কোটি রুপি মূল্যমানের সম্পদের একচ্ছত্র অধিপতি। 

তাহলে বুঝতেই পারছেন পাঠক, আপনি শুরুটা কোথা থেকে কীভাবে করলেন সেটা জরুরি নয়। জরুরী হলো, আপনি কোথায় গিয়ে থামলেন আর সাফল্যের মুকুটে কতগুলো পালক যোগ করতে পারলেন। এবং শুরুটা যেমন ভাগ্যের ব্যাপার, শেষটা কিন্তু ভাগ্যের ওপর নির্ভরশীল নয়। আপনার শেষটা কেমন হবে তা নির্ধারণ করবেন আপনি নিজেই, আপনার কাজের মাধ্যমে।

তথ্যসূত্র- yourstory.com

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা