এসব বাড়িওয়ালাদের কি কখনো চিকিৎসার দরকার হবে না?
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
শুধু বাড়িওয়ালারাই নয় বরং আশেপাশের প্রতিবেশী বাসিন্দারা তাদের বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য চাপ তৈরি করছেন। নানা প্রকারের কটূক্তিও করছেন...
হাসপাতালে যারা চাকরি করেন- ডাক্তার, নার্স কিংবা মেডিকেল স্টাফদের ভাড়া বাসা ছেড়ে দেবার জন্য বলা হচ্ছে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাড়িওয়ালার। করোনার আতঙ্কে এমন ব্যবহারই করা হচ্ছে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত মানুষগুলোর ওপর। শুধু ঢাকাতেই এমন ব্যাপার ঘটছে তা নয়। ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশের বহু চিকিৎসক, নার্স, হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ জরুরি সেবায় নিয়োজিত পেশার মানুষ অমানবিক আচরণের শিকার হচ্ছেন। তাদেরকে বিনা নোটিশে তাৎক্ষনিকভাবে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার আতঙ্কে শুধু বাড়িওয়ালারাই নয় বরং আশেপাশের প্রতিবেশী ফ্ল্যাটের অন্য বাসিন্দারা তাদের বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য চাপ তৈরি করছেন। নানা প্রকারের কটূক্তিও করছেন। অথচ আইন বলছে অন্য কথা। কাউকে বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার জন্য বাধ্য করা যাবে না। কেউ যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন, তখন তিনি আইসোলেশনে থাকবেন। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মীসহ কাউকে যদি চলে যেতে বলা হয়, রূঢ় আচরণ করা হয়, সেটা বেআইনি।
ডাক্তার, নার্স, মেডিকেল স্টাফসহ জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা তো আর শখে বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। তারা তো মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য সরকারি নির্দেশনায় কাজ করছেন। এসব মানুষকে যারা হয়রানি করছেন, তারা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং অমানিবক কাজ করছেন। পেশাগত কাজে এই মানুষগুলোকে প্রতিদিন বের হতে হচ্ছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যেতে হচ্ছে। করোনার এই ক্রান্তিকালে এই মানুষগুলো যদি তাদের দায়িত্ব পালন না করেন তবে ভাবতে পারছেন আমাদের বিপদ কতটা বাড়বে? আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো?
যে চিকিৎসকরা দায়িত্ব পালন করছেন তাদের জন্য কী করছি আমরা? যেই ডাক্তার বা নার্সরা করোনা রোগী সামলাচ্ছেন দিন রাত তাদের জন্য কী করেছি আমরা? আপনারা কি জানেন ডিউটি দেবার সময় এই ডাক্তার-নার্সদের খাওয়াটাও ঠিক মতো জুটছে না। তার ওপর বাসায় ফেরার পর সইতে হচ্ছে এই উৎপাত। তাদেরকে শান্তিতে থাকতেও দেয়া হচ্ছে না। বলতে পারেন এই মানুষগুলো যাবে কোথায়? রাস্তায় থাকবে?
ভাবুন তো একবার। যেই ডাক্তার-নার্সরা এত কষ্ট করে সেবা দিচ্ছে তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থাটুকু করতে পারেনি আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। রাষ্ট্রও তেমন ব্যবস্থা নেয়নি। দেশে এখন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়েছে। এই সংখ্যাটা যখন আরো বাড়তে থাকবে, আমরা কাদের দিয়ে চিকিৎসা করাবো বলতে পারেন? আমাদের লড়াই করার যেটুকু সামর্থ্য আছে সেটাও নষ্ট করে ফেলছি নিজেদের এই আচরণে।
যারা দায়িত্ব ছেড়ে পালিয়ে যায়নি। বরং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা মোকাবেলা করছে। যারা এই ক্রাইসিসে ফ্রন্টলাইনের জরুরী কাজগুলো করছে, যারা রোগীদের সেবা দিচ্ছে, যারা করানোর বিরুদ্ধে লড়াই করছে, সেই মানুষগুলোকে তো আমাদের শ্রদ্ধা জানাতে হবে। শুধু ডাক্তার নয়, নার্স, মেডিকেল স্টাফ প্রত্যেকে এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর সব দেশে করোনা মোকাবেলায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মেডিকেল টিমেরা।
কাজেই তাদের পাশে থাকতে হবে। তাদের যে কোনো সঙ্কট অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধান করতে হবে। দেশের এই সংকটময় মুহুর্তে ডাক্তার, নার্্ মেডিকেল স্টাফ- এই মানুষগুলোর প্রতি বিন্দুমাত্র ঘৃণা ছড়াতে রাজি নই। বরং করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশের ডাক্তার নার্স মেডিকেল স্টাফসহ যারা দায়িত্ব পালন করছেন তাদের প্রত্যেকের জন্য শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। এই মানুষগুলোর আন্তরিক লড়াই আর আমাদের সবার দায়িত্বশীলতায় করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা জিততে পারবো।
আরও পড়ুন-