মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁস, 'মেশিনম্যান সালাম গং' ও কিছু অনুসিদ্ধান্ত
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
এত অপকর্ম ও দেশ ধ্বংসের একমাত্র কালপ্রিট মেশিনম্যান সালাম গং। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী, মেডিকেল কলেজ অথোরিটি, আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠি চালানো পুলিশ- কারো কোন দোষ নেই, সব দোষ সালামের...
দীর্ঘ ৫ বছর পর মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রকে ধরা হয়েছে। ব্রাভো চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের সাংবাদিক সুলেখক আব্দুল্লাহ আল ইমরান ভাই। ধন্যবাদ সিআইডি টিমকে এত পরিশ্রম করে আসামী ধরার জন্য।
যাদেরকে ধরা হয়েছে তারা প্রেসের মেশিনম্যান টাইপ খুবই নিম্নপদের কর্মচারী। এদের মাধ্যমে নাম যারা প্রশ্ন পেয়ে চান্স পেয়েছিল তাদের একাংশকে শনাক্তের কাজ চলছে। এরা টাকার বিনিময়ে অবৈধ সুবিধা নেয়া ছাত্র-ছাত্রী। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ সুযোগ পেলে অবৈধ সুবিধা নেয়, এরা প্রিভিলেজড প্রতিনিধি মাত্র।
যেহেতু মেশিনম্যান টাইপ প্রশ্ন ফাঁসকারীদের ধরা এবং সুবিধা নেয়া ছাত্রছাত্রীদের শনাক্তের বাইরে আমরা অন্য কোনো কথা শুনতে পাচ্ছি না সুতরাং ফ্লাশব্যাকে গিয়ে আমরা কিছু অনুসিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি।
প্রশ্ন ফাঁসের পরপর যখন ক্ষোভ ও আন্দোলন দানা বাঁধতে থাকে তখন আমাদের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয় বারবার নিশ্চিত করছিলেন কোনো প্রশ্ন ফাঁস হয়নি।
আমরা শক্তভাবে বিশ্বাস করি যে লোকটা এমন কথা বলেছেন উনি আসল স্বাস্থ্য মন্ত্রী ছিলেন না। মেশিনম্যান সালাম গং এর কেউ কোনোভাবে চেহারা ও কন্ঠ প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে উনার মতো করে মিডিয়ায় এসে বক্তব্য দিয়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী বন্ধুদেশ ভারতের প্রতিটা সিরিয়ালে আমরা একাধিকবার এমন ঘটনা ঘটতে দেখি। সালামরা সে সব ঘটনা থেকে ইন্সপায়ারড হয়ে প্লাস্টিক সার্জারি করায়নি এর কোনো প্রমাণ আছে?
এই সালামরাই মাননীয় মন্ত্রীর ছদ্মবেশে বিভিন্ন ক্যাবিনেট মিটিং এ গিয়ে রিএক্সাম এর বিরোধীতা করেছে। এরাই আবার পরীক্ষা নিতে দেয়নি।
আমরা দেখতে পেয়েছি আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশি হামলার চিত্র। ঢামেকের চত্ত্বরে শুয়ে থাকা ডিএমসি ছাত্রের উপর লাফ দিয়ে পড়ছে পুলিশ, এমন ছবি অনেকেই দেখেছেন।
আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি এই পুলিশ আসল পুলিশ না। আমাদের দেশের পুলিশ প্রশাসন ভীষণ মানবিক। ন্যায্য আন্দোলনে বরাবরই তারা শিক্ষার্থীদের পক্ষে ছিলেন। তারা এমন করতেই পারেন না। আমাদের পার্শ্ববর্তী বন্ধুদেশ ভারতের একটা তামিল ছবি দেখেছিলাম, নাম সম্ভবত রোবট। সেখানে দেখেছিলাম একটা মাত্র লোক নিজের ক্লোন করে লাখ লাখ রেপ্লিকা কপি বানিয়ে ফেলে।
এখানেও আসলে তাই হয়েছে। মেশিনম্যান সালামরা নিজেদের ক্লোনকে পুলিশ বানিয়ে ছড়িয়ে দিয়েছিল আন্দোলনকারীদের মাঝে। এই ক্লোনগুলো আপডেটেড বলে সেইম চেহারা না হয়ে ভিন্ন ভিন্ন চেহারা এসেছে।
সুজলা সুফলা সৎ দেশে মেশিনম্যান সালামরাই শুধু নষ্টের গোড়া।
আরেকটু ফ্ল্যাশব্যাকে যান।
অনেকগুলো মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা যখন ঘোষণা করলেন যে কোনো মূল্যে প্রশ্ন ফাঁসকারীদের ভর্তি প্রতিহত করা হবে তখন প্রশাসন সেই চোরাদেরকে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সমান নিরাপত্তা দিল। মেডিকেলের ইতিহাসে সেবারই আনলিমিটেড সময় দেয়া হলো ভর্তি প্রক্রিয়ায়। ফরমান জারি হলো যে ছাত্র যে কোনো দিন যে কোনো সময়ে আসলেই তার ভর্তি নিতে হবে। তাদেরকে পাহারা দেয়ার জন্য পুলিশ পাঠানো হলো ক্যাম্পাসে। যারা ভর্তি প্রতিহতের তোড় জোড় করছিল তাদের উপর নেমে আসল বহিঃষ্কারের হুমকি।
আমি বিশ্বাস করি আমাদের দেশের সৎ ঈমানদার প্রশাসনের পক্ষে এমন কাজ করা একেবারেই সম্ভব না। এখানে মেশিনম্যান সালামরা কোনো একটা গভীর চক্রান্ত করেছিল। আমরা পাশ্ববর্তী বন্ধুদেশ কিংবা হলিউডের থ্রিলার মুভিতে প্রায়ই দেখি হুট করে কোনো অগা মগা বিজ্ঞানী পৃথিবী ধ্বংস করে দেয়ার মতো কোনো প্রযুক্তি আবিষ্কার করে ফেলেছে। কোনো কোনো ফ্যানাটিক দুষ্টু লোক আবার আমেরিকা বা রাশিয়ার নিউক্লিয়ার কন্ট্রোল নিজের হাতে নিয়ে কোনো দেশ বা দুনিয়া ধ্বংস করার পরিকল্পনা করে ফেলে। সবশেষ বলিউডি "ওয়ার" মুভিতেও কিন্তু আমরা এমন একটা ব্যাপার দেখেছি।
আমার স্থির বিশ্বাস মেশিনম্যান সালামদের হাতে এমন কোনো প্রযুক্তি চলে এসেছিল নয়তো তারা হ্যাক করে ফেলেছিল সিস্টেম। মেডিকেলের সিট চোরদের ভর্তি না নিলে তারা হয়তো নিউক্লিয়ার মিসাইল ছুঁড়ে ধ্বংস করে দিত প্রিয় বাংলাদেশ কিংবা এই সুন্দর দুনিয়া। দেশ ও দুনিয়াকে রক্ষার করার জন্যই প্রশ্ন চোরদেরকে নিরাপত্তা দিতে বাধ্য ছিলেন আমাদের প্রশাসন। সেদিন ছাগলনাইয়ায় যে শিশুটা জন্ম নিয়েছিল, সেদিন সোমালিয়ার যে গৃহবধু মা হয়েছিল, সাইপ্রাসের যে ছেলে সে দিন প্রথম প্রেমিকাকে চুমু খেয়েছিল তাদের জীবন ও অনুভূতিকে বাঁচাতে গিয়ে প্রশাসন কত বড়ো স্যাক্রিফাইস করেছেন সেটা ভাবতেই আমার ভেউ ভেউ করে কাঁদতে ইচ্ছে করে।
সব হিসেবেই প্রমাণিত হয় এত অপকর্ম ও দেশ ধ্বংসের একমাত্র কালপ্রিট মেশিনম্যাল সালাম গং। একমাত্র তাদের দোষে তাদের ভুলে এই সুন্দর ও সৎ দেশে নেমে এসেছিল দুর্যোগ। শত শত শিক্ষার্থীর চোখের জল, শত শত অভিভাবকের বিহ্বল দৃষ্টির একমাত্র দায় সালামদের।
এই সালামদের সাত বছরের জেল ( সাত মাস পর জামিন) এবং প্রশ্ন পেয়ে সুবিধা নেয়া ছাত্র ছাত্র শনাক্তের মাধ্যমেই দেশ কলংকমুক্ত হয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
আমি প্রেসের মেশিনম্যান সালামদের সাত বছরের জেল (সর্বোচ্চ সাত মাস পর জামিন) এর মতো কঠোর শাস্তির দাবী জানাই।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন