পত্রিকার সাথে ফ্রি মাস্ক: সচেতনতা, নাকি স্টান্টবাজি?
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠলেন। চোখ কচলাতে কচলাতে বাইরে এলেন। ধোঁয়া ওঠা এক কাপ চা হাতে নিয়ে বারান্দার ইজিচেয়ারে বসলেন। এরইমধ্যে দেখলেন হকার এসে পেপার দিয়ে গেছে। পেপার তুলতে গিয়ে দেখলেন, পেপারের সাথে একটা মাস্কও আছে। কেমন লাগবে?
কেমন লাগবে, সে প্রসঙ্গে পরে আসি। আগে বলি, মাস্ক নিয়ে উপমহাদেশের মানুষজনের বিচিত্র কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যাচ্ছে মাস তিনেক ধরেই। কেউ পকেটে মাস্ক গুঁজে বেমালুম ঘুরে বেড়াচ্ছে, অথচ মুখ-নাক গড়ের মাঠের মতনই ফাঁকা। অনেকে কানের একপ্রান্তে মাস্ক ঝুলিয়ে রাখছেন। মানচিত্রের মতন বিপন্ন হয়ে ঝুলে থাকছে মাস্ক। কারো মুখের মাস্কের আবার বিচিত্র অবস্থান। নাক মুখ খোলা অথচ মাস্ক দিয়ে ঢেকে রেখেছেন থুতনি। মানুষজন এই "মাস্ক পরা"র বিষয়টিকে একবিন্দু গুরুত্বও দিচ্ছে না আর৷ বিষয়টি পরিণত হচ্ছে ঠাট্টায়, নিয়মিত।
কাশ্মীরের শ্রীনগরের মানুষজনেরও একই অবস্থা। হেলাফেলায় হারিয়ে যাচ্ছে তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস। পুরোনো অভ্যাসকে অর্থাৎ মাস্ক ব্যবহারের অভ্যাসকে ফিরিয়ে আনতে সেখানের স্থানীয় উর্দু পত্রিকা 'রোহিনী', যারা বহুদশক ধরে সংবাদ পরিবেশন করছে কাশ্মীরে, নিয়েছে অভিনব এক উদ্যোগ, আর তা হলো- তাদের পত্রিকার সাথে জুড়ে দিয়েছে সার্জিকাল মাস্ক। সাথে লিখে দিয়েছে- মাস্ক কা ইস্তেমাল জারুরি হ্যায়। অর্থাৎ, মাস্ক ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া আরো লেখা আছে পত্রিকায়- মাস্ক আপনাকে এবং আপনার আশেপাশের মানুষকে বাঁচাতে পারে করোনাভাইরাস থেকে।
চমকদার এবং বুদ্ধিদীপ্ত পন্থায় মানুষকে সচেতন করার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে স্থানীয় সকলেই। সামাজিক মাধ্যমেও খবরটি ছড়িয়ে পড়ছে দাবানলের মতন। মানুষ বেশ অবাক এবং সে সাথে বিস্মিত এই সচেতনতামূলক উদ্যোগ দেখে।
যদিও অনেক নিন্দুকের মতামত, এই কাজ শুধুমাত্র বিজনেস স্টান্টবাজি ছাড়া আর কিছুই না, কিন্তু সেখানেও একটা মন্তব্য থেকেই যায়। এই 'রোহিনী' পত্রিকার মূল্য ২ রূপি করে। সেখানে মাস্কের দামই পত্রিকার চেয়ে বেশি। যদি পত্রিকার মালিকমহল 'বিজনেস স্টান্টবাজি'র জন্যেও এ কাজটি করে থাকেন, তাহলে বাকিরাও কেন করছে না এই কাজটি? সবারই তো এভাবে জনসচেতনতায় এগিয়ে আসা উচিত। তাহলেই তো সবার মঙ্গল। হোক না সেটা শো অফ বা বিজনেস স্টান্ট। কী আসে যায়?
মহামারী করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকেই মানুষের জীবনে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গিয়েছে এই মাস্ক ও হ্যান্ড ওয়াশ৷ কিন্তু যতই দিন গড়াচ্ছে, মানুষ ততই উদাসীন হচ্ছে, দূরত্ব বাড়ছে সুরক্ষা সামগ্রী থেকে। মুমূর্ষু হয়ে যাওয়া সতর্কতা আবার ফিরিয়ে আনতে 'রোহিনী'র এই উদ্যোগকে প্রশংসা করাটা অবশ্যই উচিত। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে কাশ্মীরের অবস্থা খুব একটা ভালোও নেই। সেখানে এই উদ্যোগ যদি কিছু মানুষের মধ্যেও সচেতনতা বাড়ায়, তাও বা কম কি?
এবং চাইলে এই পদ্ধতিটি গ্রহণ করতে পারেন অনেকেই। এতে অকল্যান হবে না কারোরই, বরং সচেতনতাই আরেকটু বাড়বে।
-
* প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন
* সমাজের নানান অসঙ্গতি নিয়ে আওয়াজ তুলুন। অংশ নিন আমাদের মিছিলে। যোগ দিন 'এগিয়ে চলো বাংলাদেশ' ফেসবুক গ্রুপে