ভাইরাস তো আর ধর্ম বোঝে না, দেশ বোঝে না, ধনী-গরিব বোঝে না। সে যেমন চীনে যায়, তেমনই সৌদি আরবেও যায়। সে খ্রিস্টানকে মারে, মুসলমানও রেহাই পায় না। করোনার থাবায় গীর্জা বন্ধ হয়, মসজিদও হয়।

করোনাভাইরাসের আতঙ্কে কাঁপছে পুরো বিশ্ব, স্পেন-ইতালীর মতো দেশগুলো অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে, গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে অনেক দেশেই। কুয়েতে তো মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়াই নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যাতে করোনাভাইরাসের আক্রান্ত কারপ সংস্পর্শে এসে বাকীদের মধ্যে এই ভাইরাস না ছড়ায়। অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোও বাড়িতেই নামাজ আদায়ের পরামর্শ দিয়েছে, সৌদি আরব তো ওমরাহ পালনের ওপরে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বেশ কিছুদিন আগেই। এবার বন্ধ করে দেয়া হলো মুসলমানদের আরেক পবিত্র স্থান আল আকসা মসজিদ, তবে মসজিদের বাইরে সব ধরণের প্রার্থনা চালু রাখা যাবে, এটাও জানিয়ে দেয়া হয়েছে। 

আজ থেকেই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে মসজিদের সকল ধরণের প্রার্থনা কার্যক্রম। সেই সাথে বন্ধ হয়েছে টেম্পল মাউন্টেনের উপর অবস্থিত বিখ্যাত গম্বুজ কুববাত আস-সাখরা। জেরুজালেম ইসলামিক ওয়াকফ বিভাগ বলছে, আগামী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখা হবে আল আকসার সব ধরণের কার্যক্রম। তবে মসজিদের বাইরে নামাজ আদায় করা যাবে বলে জানিয়েছেন আল- আকসার পরিচালক ওমর কিসোয়ানি। মূলত ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রানালয়ের নির্দেশেই আল -আকসা মসজিদ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

ইসলামের ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান এই আল আকসা মসজিদ। কাবা শরীফ স্থাপন হবার আগে এটিই ছিল মুসলমানদের কেবলা। মক্কা ও মদিনার পর মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্র স্থান। প্রতি বছর শুধু আল আকসা মসজিদ দেখার জন্যে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে প্রচুর মুসলমান ছুটে যান ইজরাইলের জেরুজালেমে। একসময় এই মসজিদ ফিলিস্তিনের অন্তর্গত থাকলেও, এখন সেটি জেরুজালেমের সীমানায় পড়েছে। 

আল আকসা মসজিদ

হজরত রাসূলে করিম (সা.) মক্কার মসজিদুল হারাম, মদিনার মসজিদ উন-নবী ও বায়তুল মোকাদ্দাস বা আল আকসা মসজিদের উদ্দেশে সফরকে বিশেষভাবে সওয়াবের কাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যা অন্য কোনো মসজিদ সম্পর্কে করেননি। বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদ এবং তার আশপাশের এলাকা বহু নবীর স্মৃতিবিজড়িত। এখানে রয়েছে অসংখ্য নবী-রাসূলের মাজার। ইসলামের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে এই মসজিদটি।

এবার সেই আল আকসা মসজিদও সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গেল প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের দাপটে। ইজরাইলে ইতিমধ্যেই করোনা ছড়িয়েছে, ২০০'র বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এই রোগে। অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনেও আক্রান্তের সংখ্যা চল্লিশ ছাড়িয়েছে। আর তাই বাধ্য হয়েই মসজিদ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। এমনিতেই এই মুহূর্তে ইজরাইলে সীমিতা আকারে অবরোধ চলছে, একসঙ্গে ১০০'র বেশি মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইতালী এবং স্পেনের মতো ভয়াবহ না হলেও, করোনার আতঙ্ক স্পর্শ করেছে পশ্চিম তীরের এই দুই দেশকেও। 

চীনে যখন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন এক শ্রেণীর মাথামোটা উজবুক ধর্মান্ধ ফেসবুকে ফতোয়া জারী করেছিল, চীনারা ইসলামের বিরুদ্ধে গেছে বলেই নাকি তাদের ওপর আল্লাহ'র গজব নেমে এসেছে করোনার রূপ ধরে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ধর্মের দেয়াল তুলে মানুষ ভেদাভেদ তৈরী করে, ভাইরাস তো আর ধর্ম বোঝে না, দেশ বোঝে না, ধনী-গরিব বোঝে না। সে যেমন চীনে যায়, তেমনই সৌদি আরবেও যায়। সে খ্রিস্টানকে মারে, মুসলমানও রেহাই পায় না। করোনার থাবায় গীর্জা বন্ধ হয়, মসজিদও হয়। আফসোস, ব্যাকটেরিয়ার সাইজের মগজ নিয়ে ঘোরা বাঙালি ধর্মান্ধরা সেটা বুঝতে পারে না...


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা