এরদোয়ানের তুরস্কে বিয়ে করলে ধর্ষণ মাফ!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
এমন শক্তিমান নেতা থাকবার পরেও কিভাবে সেই সংসদে ধর্ষণবান্ধব আইন উত্থাপিত হয়? শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন বৈধ করে দেয়ার দায়ভার নেবার মতো শক্ত কাঁধ কি মিস্টার এরদোয়ানের আদৌ আছে?
অপ্রাপ্তবয়স্ক কোন মেয়েকে ধর্ষণের পর যদি সেই মেয়েটিকে বিয়ে করে ধর্ষণকারী, তাহলে তার বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ প্রত্যাহার করা হবে। এমনই বিতর্কিত এবং অমানবিক বিল সেদেশের সংসদে পাশ করাতে চাইছে তুরস্কের ক্ষমতাসীন দল জাস্টিজ এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (এ.কে.পি)।
এই আইন এবারই প্রথম নয় তুরস্কে। ২০০৫ সালে বাতিল করার পর, ২০১৬ সালে ফের তুর্কি সংসদে বিলটি উত্থাপিত হয়েছিলো। যেটি জাতিসংঘের বিবেচনায় শিশু ধর্ষণের আইনি বৈধতা দেয়ার সমতুল্য ছিলো। এই খবর প্রকাশ্য আসার পর তুরস্কের মানবাধিকার এবং নারী অধিকার সংগঠনগুলো এই প্রস্তাবিত আইনের তীব্র সমালোচনা করেছে। বিক্ষোভে ফেটে পড়া তাদের মতে, এই আইন প্রণয়নের অর্থ দাঁড়ায় ধর্ষণকে আইনি বৈধতা দেওয়া। শিশুদের প্রতি যে কোনো ধরনের যৌন সহিংসতাই অপরাধ এবং সেই অপরাধের শাস্তি হওয়া উচিত। এই বিল কার্যত শিশুদের সাথে অমানবিক যৌন সম্পর্কের পর অভিযুক্তকে শাস্তি থেকে রেহাই পাওয়ার সুযোগ করে দেবে।
তুরস্কে বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর, তবে অপ্রাপ্তবয়স্ক বিবাহ বহুলভাবে প্রচলিত। তুরস্কের আইন বিভাগের হিসাব অনুযায়ী বিগত এক দশকে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। যা গত দুই দশকে অপ্রাপ্তবয়স্ক মা হবার সমানুপাতিক। এর মধ্যে সবাই যে অনূর্ধ্ব ১৮ বছর বয়সী মেয়ে তা নয়, তন্মোধ্যে প্রায় ২০ হাজার জনের বয়স ১৫ বছরের নিচে। তুরস্কের আইনানুযায়ী ১৫ বছরের কম বয়সী যে কারো সঙ্গে সবধরণের যৌন সংসর্গ অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। তবে সম্প্রতি শিশু যৌন নিপীড়নের মাত্রা তিনগুণ বেড়েছে। আর এমন সময়েই এই ধর্ষণবান্ধব আইনটি পাস করার পাঁয়তারা চলছে। উল্লেখ্য, তুরস্কের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুল নিজেই ১৫ বয়সী শিশুকে বিয়ে করেছিলেন যখন তার বয়স ছিলো ৩০।
যদি পার্লামেন্টে এই বিলটি পাশ হয় তাহলে প্রায় তিন হাজারের মতো পুরুষ ধর্ষণের অভিযোগ থেকে মুক্তি পাবে। সংবাদমাধ্যমের সমীক্ষা অনুযায়ী, তুরস্কে গত কয়েক বছরে যৌন হয়রানির সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে, তুরস্কে নারীদের ৪০ শতাংশই যে কোনোভাবে শারীরিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সমালোচকরা এজন্য ইসলামপন্থী এরদোয়ানের সরকারকে দায়ী করছেন। এমনটা হলে, ধর্ষণ-বিয়ে-তালাক-ফের ধর্ষণ চক্রে আবদ্ধ হয়ে যাবে সেখানকার নারীরা। যা আবারো নারীদের কয়েকশ বছর পিছিয়ে দেবে।
বর্তমানে তুরস্কের ক্ষমতাসীন দল রক্ষণশীল ইসলামী মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত। এবং প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এরদোয়ান সেখানে একচ্ছত্র আধিপত্য ভোগ করছেন। শরবত বিক্রেতা থেকে তুরস্কের সুলতান বনে যাওয়া এরদোয়ান যে প্রভাব ফেলেছেন, আধুনিক তুরস্কের জনক হিসেবে পরিচিত মুস্তাফা কামাল আতাতুর্কের পর তুরস্কের রাজনীতিতে এতোটা পরিবর্তন অন্য কোনো নেতা আনতে পারেননি। কিন্তু সমালোচকদের দৃষ্টিতে তিনি একজন স্বৈরশাসক যিনি ভিন্নমতাবলম্বীদের নির্দয়ভাবে দমন করেন।
এখন আলাপের বিষয়টা হচ্ছে, এমন শক্তিমান নেতা থাকবার পরেও কিভাবে সেই সংসদে ধর্ষণবান্ধব আইন উত্থাপিত হয়? শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন বৈধ করে দেয়ার দায়ভার নেবার মতো শক্ত কাঁধ কি মিস্টার এরদোয়ানের আদৌ আছে?