করোনাভাইরাস ইতিমধ্যে প্রায় অচল করে দিয়েছে লাখ লাখ বিজনেস, কোটি কোটি মানুষের লাইফ হুমকির সম্মুখীন, সাথে জব হারানোর আশংকা। খুব স্বাভাবিকভাবেই এর বিশাল প্রভাব আমরা অলরেডি দেখতে পাচ্ছি কনজিউমার বিহেভিয়ারে, বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে। এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস, মার্কেটিং এর দুনিয়াতে একটা 'paradigm shift' আসতে যাচ্ছে করোনা এবং করোনা পরবর্তী সময়ে।

ডিয়ার মার্কেটার্স, প্রশ্ন হচ্ছে, কিভাবে আমি আপনি সেই চেইঞ্জ এর জন্য নিজেকে তৈরি করতে পারি সময় থাকতেই?

ডেফিনিটলি এই গ্লোবাল ক্রাইসিস এর শর্ট টার্ম এবং লং টার্ম ইম্প্যাক্ট আছে এডভারটাইজিংয়ের উপর। অসংখ্য ইভেন্ট ক্যান্সেল হয়ে গিয়েছে অলরেডি, আমাদের দেশে মুজিব বর্ষ এর লঞ্চিং থেকে শুরু করে টোকিও অলিম্পিক, মেজর সব স্পোর্টিং ইভেন্ট, কনফারেন্স, এবং আরো অনেক অনেক সামনে ক্যান্সেল হতে যাচ্ছে। আর সেই সাথে কমে গিয়েছে প্রায় সকল ধরণের ট্রেডিশনাল এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এক্টিভিটিজ।

eMarketer প্রেডিক্ট করেছে দেখলাম ২০২০ সালে বিশ্বে বিজ্ঞাপনের পেছনে খরচ ৭১২.০২ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ৬৯১.৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে। ট্রাভেল, রিটেইল এবং বিনোদন সবচেয়ে বেশি ধাক্কা খাচ্ছে এই মুহূর্তে, যেগুলো ফেইসবুকের রেভিনিউ এর ৩০-৪০% কাভার করে। এক্সপার্টরা তাই বলছে ফেসবুকের এড রেভিনিউ কমে আসবে অনেক। কিন্তু এগুলো তো শর্ট টার্ম বা মিড টার্ম, আমার ধারণা লং টার্মেও অনেক অনেক চেইঞ্জ আসবে আমাদের বিজনেসগুলোতে, চেইঞ্জ আসবে ব্রান্ডিংয়ে, মার্কেটিংয়ে।

যেহেতু এখনই সব কিছু ধারণা করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়, আমি এই পোস্টে ৫টি এরিয়া পয়েন্ট আউট করলাম যেখানে আমার মতে বিশাল পরিবর্তন আসবে। আর ভবিষ্যতেও লেখার চেষ্টা করবো এই টপিকে।

১। ডিজিটাল মার্কেটিং ছাড়িয়ে যাবে ট্রেডিশনাল মার্কেটিংকে

করোনাভাইরাসকে গ্লোবাল পেনডেমিক হিসেবে ঘোষণা করা এবং বাংলাদেশে প্রথম কিছু রোগী সনাক্ত করার পর থেকে অনেক ব্র্যান্ড সোশ্যাল অ্যাওয়ারনেসের উপর জোর দিচ্ছে। আমরা ইতিমধ্যে দেখেছি সেপনিল হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়ে স্কয়ারের কন্টেন্ট ব্র্যান্ডিং থেকে শুরু করে জিপির 'স্টে হোম' ডিজিটাল ক্যাম্পেইন। যেহেতু আমরা দেশব্যাপী ছুটি বা লকডাউনের কারণে 'Work from Home' করছি, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার, ভিডিও দেখা এগুলোও অনেক অনেক বেড়ে গেছে। সামনের দিনগুলোতে এবং দূরের ভবিষ্যতেও কিন্তু আমরা আগের থেকে অনেক বেশি সতর্ক থাকবো জনসমাগম এড়াতে।

ফলাফল? ডিজিটাল কন্টেন্ট অনেক অনেক গুণ বেড়ে যাবে। কোম্পানীগুলো Out-Of-Home বা অন্যান্য বেশ কিছু ট্রেডিশনাল এডভার্টাইজিং এর বদলে ঝুঁকে পড়বে আরো বেশি ডিজিটাল এডভার্টাইজিংয়ের দিকে।

২। সেফটি, ট্রান্সপারেন্সি এবং একাউন্টেবিলিটি ইন মার্কের্টিং মেসেজ

গত কয়েক দিনে আমরা দেখেছি বেক্সিমকো - আকিজ গ্রুপের মতো কোম্পানীগুলো এগিয়ে এসেছে মানবতার সেবায়। Sheba.xyz, Daily Star, Samakal শুরু করেছে Mission Save Bangladesh, এরকম আরো অনেক উদাহরণ রয়েছে আমাদের চারপাশে। প্রতিটা এক্টিভিটি আমাদের মনে পজিটিভ ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি করছে, যা কিনা ব্র্যান্ড এসেট হিসেবে কাজে লাগবে সামনের দিনগুলোতে।

যেহেতু আমরা ছোঁয়াচে ভাইরাস নিয়ে আগের থেকে শত গুণ সচেতন, প্রতিটা ব্র্যান্ডকে প্রায়োরিটি দিতে হবে কাস্টোমার সেফটি মেজারমেন্টের উপর। শুধু স্টেপ নিলেই হবে না, সেগুলো আবার ঠিকমত জানাতে হবে কাস্টমারকে। সুতরাং এখন থেকে প্রতিটা ব্যান্ডকে কাস্টোমার এবং এমপ্লয়ী সেফটি নিশ্চিত করতে হবে এবং একটা কোর ভ্যালু হিসেবে সঠিকভাবে কনভেয়ও করতে হবে তাদের মার্কেটিং চ্যানেলগুলোতে।

৩। MarTech এবং AI-Assisted Advertising

করোনাউত্তর দুনিয়াতে বিজনেস ইনোভেশন অবশ্যম্ভাবী। Amazon এর হিউম্যান-কন্টাক্টলেস ড্রোন ডেলিভারি প্রজেক্ট এখন টপ প্রায়োরিটি পাবে, ফেইসবুক ঝাঁপিয়ে পড়বে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রজেক্টে, গৃহবন্দী মানুষদের বেটার অপশন দেবার আশায়। আর এসব কিছুর ফলাফল? মার্কেটিং টেকনোলোজি এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স এসিস্টেড এডভারটাইজিংয়ের প্রতি কোম্পানীগুলোর অনেক বেশি নির্ভরশীল হওয়া, যেন ডিজিটাল প্লাটফর্মে সঠিক কাস্টোমারকে সঠিক সময়ে সঠিক প্রডাক্ট / সার্ভিস অফার করা যায়।

সুতরাং আপনার কোম্পানীর এখনই সঠিক সময় MarTech, AI এবং Deep Learning কে আরো অনেক অনেক বেশি প্রায়োরিটি দেওয়া।

এখনই সময় ভেবেচিন্তে পদক্ষেপ নেওয়ার

৪. ইকমার্স এর প্রাধান্য

করোনাভাইরাস এবং পরবর্তীতে এই জাতীয় সংক্রামক রোগ থেকে সুরক্ষার জন্য মানুষের জেনারেল টেন্ডেন্সি হবে পাবলিক প্লেস এবং গ্যাদারিং এভয়েড করা। এর ফলে কিন্তু রিটেইল শপ, সার্ভিস সেন্টারে কাস্টোমারের আনাগোনা কমে যাবে ব্যাপক হারে। আমার জানামতে, অসংখ্য ইকমার্স এবং SME এখন বিপর্যয়ের সম্মুখীন, স্পেশালি সব ধরণের লাইফস্টাইল কিংবা impulse buy ইত্যাদি প্রোডাক্ট। তবে নিজেদের প্রোডাক্ট এবং offering গুলো pivot করে হয়তো অনেকে টিকে থাকবে এই ক্রাইসিস মোমেন্ট এবং পরবর্তী মাসগুলোতে।

গত কয়েক সপ্তাহে আমরা দেখেছে Chaldal এর অর্ডার প্রায় তিন গুণ হতে। Pathao এর মতো কোম্পানি রাইড শেয়ারিং এ প্রচন্ড ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে এখন হাইলি ফোকাস করছে Pathao Tong এর মাধ্যমে গ্রোসারি ডেলিভারিতে। ফুড রেস্টুরেন্টগুলো চাচ্ছে হোম ডেলিভারি করতে, ডিমান্ড বাড়বে Cloud Kitchen এর, সেইম ফর অনলাইন ফার্মেসিস।

সুতরাং গভর্মেন্ট এজেন্সি থেকে শুরু করে যেসব কোম্পানির পক্ষে সম্ভব, তারাই এখন থেকে চেষ্টা শুরু করবে প্রসেস ডেভেলপমেন্ট করে প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস বাসায় পৌছে দিতে। বাংলাদেশে প্রধান শহরগুলির বাইরে ইকমার্স এখনো ততটা জনপ্রিয় না, এবং লাস্ট মাইল ডেলিভারিতেও অনেক চ্যালেঞ্জ ফেইস করছে ইকুরিয়ার, পাঠাও, পেপারফ্লাই থেকে শুরু করে অন্যান্য ডেলিভারি কোম্পানিগুলো। কিন্তু A2i এর সহযোগিতায় তারাও এখন আরো বেশি রিসোর্স এলোকেট করবে লাস্ট-মাইল-ডেলিভারী এর জন্য।

৫। কাজের পদ্ধতিগত পরিবর্তন

Work-from-home কিন্তু আগামী এক দুই সপ্তাহে কিংবা মাসেই শেষ নয়, আমার বিশ্বাস আমাদের ওয়ার্কপ্লেস এর ম্যাসিভ একটা চেইঞ্জ আসবে এই ক্রাইসিস এর কারণে। অদূর ভবিষ্যতে ইনোভেশন আসবে ম্যানুফ্যাকচারিং প্রসেসে, প্রাধান্য পাবে Robotics এর মতো টেকনোলোজি। একইভাবে অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রিগুলোও আস্তে আস্তে এমন প্রসেস ডেভেলপ করতে চেষ্টা করবে যেন ভবিষ্যতে এরকম কোন contagious disease আসলেও কোন কিছু বন্ধ না থাকে। বদলে যাবে প্রতিদিনের বাসা-অফিস-বাসা যাতায়াতের পদ্ধতি। আর সেজন্য আপনার কোম্পানিকেও নতুন করে চিন্তা করতে হবে আপনাদের প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস নিয়ে। আপনার টার্গেট গ্রুপ যদি রিমোট ওয়ার্ক-এ শিফট করে, সেক্ষেত্রে আপনার অফারিং, ব্র্যান্ডিং এবং মার্কেটিং মেসেজও একইভাবে শিফট করতে হবে ন্যাচারালি।

Act Now, Don’t Wait till It’s Too Late!

করোনাভাইরাস আমাদের জেনারেশন এর জন্য একদম নতুন অভিজ্ঞতা এবং ক্রাইসিস, যে কারণে আমরা সময়োপযোগী অনেক পদক্ষেপই নিতে পারি নি শুরুতেই ভাইরাস এর সংক্রমণ ঠেকানোর। কিন্তু এখন আমরা শিখছি, এবং as human race, খুব দ্রুতই আমরা আবিষ্কার করে ফেলবো কিভাবে এরকম contagious ভাইরাস এর সাথে ফাইট করতে হয়। আর এজন্যই, এখনই উপযুক্ত সময় স্বাস্থ্য-সুরক্ষার পাশাপাশি আপনার কোম্পানির শর্ট টার্ম এবং লং টার্ম মার্কেটিং স্ট্রাটেজি নিয়ে কাজ করার। এই পেনডেমিক থেকে রাতারাতি মুক্তি পাবার কোন উপায় হয়তো আমাদের হাতে নেই, কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা আমাদেরকে সাহায্য করবে এই ক্রাইসিস এর ক্ষতির মাত্রা কমিয়ে আনতে।

Let’s stand strong together in the crisis moment. Let’s support each other in the fight against coronavirus. Let’s extend our helping hands and survive this global phenomenon.


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা