গাড়ি চালক-অফিস সহকারীদের যদি এতে টাকা থাকে, না জানি তাদের বড় দুর্নীতিবাজ স্যারদের কতো টাকা? স্বাস্থ্য দপ্তর-রাজউক-তিতাস-ওয়াসা সব জায়গায় ছোট ছোট কর্মচারীদের সম্পদ দেখে শুধু ভাবি, তাদের বড় স্যারেরা তাহলে কী পরিমান লুটপাট করে!

স্বাস্থ্যে কী এক আশ্চর্য প্রদীপ আছে! এখানকার কর্মচারী আবজালের হাজার কোটি টাকার সম্পদ, এখানকার গাড়ি চালকের ঢাকায় দুটি সাততলা ভবন, নির্মাণাধীন একটি দশ তলা ভবন, ২৪ টা ফ্ল্যাট, জমি, গরুর খামার। তারপরও নাকি সব সম্পদের খোঁজ শেষ হয়নি! 

মাঝে মাঝে ভাবি, গাড়ি চালক বা কর্মচারীদের যদি এতো সম্পদ হয় সেখানকার বড় স্যারেরা না জানি কত শত কোটি টাকার মালিক! এই যে দেখেন আমরা এতো পরিশ্রম করে, অনেকেই দেড়-দুই লাখ টাকা বেতন পেয়েও আমরা এই শহরে মাথা গোঁজার একটা ঠাই পাই না, এক মাসের বেতন না পেলে পরের মাসে হয়তো বাসা ভাড়া দিতে পারবো না, আর একজন অষ্টম শ্রেণী পাশ গাড়িচালকের কোটি কোটি টাকার সম্পদ। কী আশ্চর্য প্রদীপ তাই না?

আচ্ছা একজন মহাপরিচালকের কতোগুলো গাড়ি লাগে? এই যে দেখেন একটাতে মহাপরিচালক নিজে চড়েন, আর  মহাপরিচালকের জন্য বরাদ্দ হওয়া একটি পাজেরো জিপে নিজে চড়েন তার গাড়িচালক! অধিদপ্তরের একটি পিকআপ তাঁর খামারের দুধ বিক্রি করে এবং মেয়ে জামাইয়ের ক্যানটিনে মালামাল পরিবহনের কাজে ব্যবহার হয়। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ব্যবহারের জন্য আছে আরেকটা একটি মাইক্রোবাস! 

পদে অফিস সহকারী আবজাল কিংবা গাড়িচালক মালেকদের যদি শত কোটি টাকা থাকে, তাহলে সেখানে যারা ঘুষ খায় সেই আমলা বা ডিজিদের কতো হাজার কোটি টাকা?  সারাজীবন দেখলাম চুনোপুটি অফিস সহকারী বা আবজালরা ধরা পড়ে কিন্তু তাদের বড় স্যারেদের কিছুই হয় না। কিন্তু কেন? কেন আজ পর্যন্ত কোন ডিজি-সচিবদের কিছু হলো না?

জানি কিছু হবে না কারণ তারাই আজ নীতি-নির্ধারক। আর আজকাল ঘুষখোরদের তো কোন অনুশোচনা দেখি না। বরং ঘুষখোর-দুর্নীতিবাজ ছোট কর্মচারীরা আত্মতৃপ্তিতে ভুগেন যে বড় স্যারদের তুলনায় তারা ফেরশতা। এক দপ্তরে থাকা ঘুষখোররা দাবি করেন, তারা ভালো কারণ তাদের তুলনায় আরেক দপ্তর বা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বেশি ঘুষ খায়-বেশি দুর্নীতি করে। এসব শুনে অবাক হতেও ভুলে যাই। 

ড্রাইভার মালেকের সম্পদের পরিমাণ কয়েকশো কোটি টাকা!

এই যে গাড়ি চালক-অফিস সহকারীদের এতো টাকা না জানি আসলেই তাদের বড় দুর্নীতিবাজ স্যারদের কতো টাকা? স্বাস্থ্য দপ্তর-রাজউক-তিতাস-ওয়াসা সব জায়গায় ছোট ছোট কর্মচারীদের সম্পদ দেখে শুধু ভাবি তাদের বড় স্যারেরা কী পরিমান লুটপাট করে। আচ্ছা এই যে হাজার হাজার লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয় কী শাস্তি হয় তাদের? 

আচ্ছা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি বন্ধ করা কী খুব কঠিন কাজ? কেন চাকুরি শুরুর আগে প্রত্যেকের সম্পদের হিসাব নেয়া হয় না? কেন বছর বছর তাদের সম্পদের হিসাব নেয়া হবে না? এ তো রীতিমতো রাজার হাল!  আফসোস, কর্মচারীরাই যদি এতো রাজ্য আর সম্পদের মালিক হন তাদের স্যারেরা না জানি কতো শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক!

এই দেশে সরকারি সম্পদ ইচ্ছমতো লুটপাট হবে, দুই টাকার জিনিষ দুই হাজার টাকা দিয়ে কেনা হবে, বিদেশভ্রমণের নামে লুটপাট হবে, তাও কারও শাস্তি হবে না? এগুলো কবে শেষ হবে? এইসব দুর্নীতিবাজদের রুখতে না পারলে তো সৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্রমেই কোনঠাসা হয়ে পড়বে। 

আমি জানি না এই দুর্নীতি-লুটপাটের শেষ কোথায়। লিখতে লিখতে ক্লান্ত লাগে। কোন আশার আলো দেখি না। তবুও লিখি যদি কোনদিন ঘুম ভাঙে নীতি নির্ধারকদের! যদি কোনদিন উন্নয়নের বুলির বদলে তাদের মনে হয়, দেশটাকে এবার বাঁচাতে হবে!

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা