রোহিঙ্গা গণহত্যা: মায়ানমারের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে গাম্বিয়ার পাশে দাঁড়ালো মালদ্বীপ!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
রোহিঙ্গা গণহত্যা ইস্যুতে বড় রাষ্ট্রগুলো যেখানে চুপ করে বসে আছে, বর্বর মায়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়া-মালদ্বীপের মতো রাষ্ট্রগুলোর দুঃসাহসিক লড়াই আসলেই প্রশংসার দাবীদার।
মালদ্বীপ কর্তৃপক্ষ অফশিয়ালি জানিয়েছে তারা রোহিঙ্গা ইস্যুতে মায়ানমারের বিপক্ষে আইনি লড়াই চালাবে। মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগ করেছে তারা। ২০১৭ থেকে মায়ানমারের সামরিকবাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গা নিধন শুরু হয়। এতে করে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। ইতিমধ্যেই এই বর্বর আচরণের জন্য মায়ানমারকে হেগের আন্তর্জাতিক আদালতের কাঠগড়ায় নিয়ে দাঁড় করিয়েছিলো গাম্বিয়া। আদালতের রায় মিয়ানমারের বিপক্ষে গেছে, শেষ পর্যন্ত সেই রায়ের বাস্তবায়ন কতটুকু হবে আমরা জানি না।
তবে আইনি লড়াই কিন্তু শেষ হয়নি, এটা চলবে। আদালত মায়ানমারকে যে নির্দেশ দিয়েছে সেটা তারা ঠিকমত পালন করেছে কিনা সে ব্যাপারে গাম্বিয়ার মতামত নেয়া হবে। এবং এই আইনি লড়াইয়ে রোহিঙ্গাদের পক্ষে মালদ্বীপ কর্তৃপক্ষ মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ আইনজীবী আমাল ক্লুনিকে নিয়োগ করেছে। উল্লেখ্য, এই আমাল ক্লুনি ২০১৫ সালে মালদ্বীপের সাবেক রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ নাশিদের বিরুদ্ধে হওয়া ১৩ বছরের জেলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে লড়াই করে সফল হয়েছিলেন। আমাল ক্লুনির আরেকটি পরিচয় হচ্ছে তিনি হলিউডের বিখ্যাত অইনেতা জর্জ ক্লুনির স্ত্রী।
রোহিঙ্গারা যখন গুলি খেয়ে মরছিলো, তখন বাংলাদেশ নিজেদের সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও এই বিশাল জনসংখ্যাকে আশ্রয় দিয়েছে। আর সুদূর আফ্রিকার এক দেশ গাম্বিয়া, নামটা শুনে মানচিত্রে খুঁজে নিতে যাদের অবস্থান, সেই দেশটা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করেছে, সেই মামলার রায়ে আন্তর্জাতিক আদালত বলেছে, রোহিঙ্গা গনহত্যা ও নির্যাতন নিয়ে সব নথিপত্র আদালতের কাছে জমা দিতে হবে, রোহিঙ্গাদের অধিকার রক্ষা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে মিয়ানমারকে। অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে মানবতার এই জয়ে গাম্বিয়া সবচেয়ে বড় ধন্যবাদের দাবীদার।
সেই মামলা সামলাতে গিয়ে কালোঘাম ছুটে গেছে মিয়ানমারের। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চী তার সৈন্য-সামন্ত নিয়ে ছুটে গেছেন সেখানে, হত্যাকান্ডের কথা নত মস্তকে স্বীকার করে নিয়েই তিনি দাবী করছেন, এই বিচার করার এখতিয়ার আন্তর্জাতিক আদালতের নেই! সুচীর মুখের হাসি বিলীন হয়ে গেছে, সেই কাজটা করেছে গাম্বিয়া। শেষমেশ মিয়ানমারকে মামলায় হারিয়ে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচার পাবার একটা আশা জাগিয়ে তুলেছে তারা।
মামলার পুরো প্রক্রিয়াটা সাজিয়েছেন গাম্বিয়ার বিচারমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মামাদু তাঙ্গারা, এই দুটো মানুষের কাছে বিশ্ববাসী চিরঋণী হয়ে থাকবে। মামাদু তাঙ্গারার কথা একটু বিশেষভাবেই বলতে হবে এখানে। অতীতে দুই দফায় জাতিসংঘে নিজের দেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন ভদ্রলোক। খুব স্বাভাবিকভাবেই, রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি সম্পর্কে তিনি আগে থেকেই জানতেন। ফলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনিও রোহিঙ্গাদের জন্যে গাম্বিয়ার ভূমিকা রাখার বিষয়ে অবদান রেখেছেন।
কাজটা করার কথা ছিলো পরাশক্তিগুলোর, আমেরিকা, চীন বা রাশিয়ার। করার কথা ছিল মুসলিম বিশ্বের ধ্বজ্বাধারী দেশ সৌদি আরব, তুরস্ক বা পাকিস্তানের। প্রতিবাদটা আসা উচিত ছিলো শক্তভাবে। তারা কিছুই করেনি, কেউ নির্লিপ্ত থেকেছে, কেউবা এক-দুই জাহাজ ত্রাণ পাঠিয়ে লোকদেখানো হাততালি কুড়িয়ে নিয়েছে, কাজের কাজ না করে উল্টো হিরো সাজার চেষ্টা করেছে এরদোয়ানের মতো রাষ্ট্রপ্রধানও। এই যখন অবস্থা, তখন গাম্বিয়ার পাশপাশি মালদ্বীপ অন্তত এগিয়ে এসেছে এই আইনি লড়াইয়ে। রোহিঙ্গা গণহত্যা ইস্যুতে বড় রাষ্ট্রগুলো যেখানে চুপ করে বসে আছে, বর্বর মায়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়া-মালদ্বীপের মতো রাষ্ট্রগুলোর দুঃসাহসিক লড়াই আসলেই প্রশংসার দাবীদার।