মালয়েশিয়ার একটা অংশ একসময় ছিল বাংলা মুলুকের অধীনে!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
বেড়াতে কিংবা কাজের খোঁজে প্রতিবছরই প্রচুর লোক বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় যাচ্ছে; কিন্তু মালয়েশিয়ার একটা অংশ যে এক সময় এই বাংলা মুলুকেরই অধীনে ছিল, তা কি কেউ জানেন? কি ভাবছেন গুল মারছি? একটুও না। বলছি সেই কথা।
প্রায় দেড়-শ বছরের আগের কথা। ভারতীয় উপমহাদেশ ইংরেজদের দখলে থাকলেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিস্তীর্ণ সমুদ্রাঞ্চল দাপিয়ে বেড়াতো ডাচ আর স্পেনীয় বাহিনী। ঐ অঞ্চলসহ বিশেষত: চীনের সাথে বানিজ্য চালাবার জন্য ইংরেজরা মরিয়া ছিল এদিকে তাদের একখানা ঘাঁটি গড়বার জন্য। তারই অংশ হিসেবে ১৭৮৬ সালে ইংরেজ ক্যাপ্টেন 'ফ্রান্সিস লাইট' সে সময়ের 'কেদাহ্' রাজ্যের সুলতানের কাছ থেকে প্রথমে 'পেনাং' দ্বীপটি কিনে নিয়ে সেখানে এক দূর্গ নির্মান শুরু করেন।
তবে দূর্গের নামটি কিন্তু ফ্রান্সিস নিজের নামে দেননি, বরং দিয়েছিলেন তাঁর বড়কর্তা 'লর্ড চার্লস কর্নওয়ালিস' এর নামে; সুতরাং দূর্গের নাম হলো 'ফোর্ট কর্ণওয়ালিস'। ফোর্টসহ পুরো পেনাং-ই ছিল লর্ড কর্ণওয়ালিসের অধিকারে। আর লর্ড কর্ণওয়ালিস তখন ছিলেন বেংগল প্রেসিডেন্সী বা বাংলার গভর্নর জেনারেল। সুতরাং, স্বাভাবিকভাবেই পেনাং-ও ছিল বাংলার অধীনে! মজার ব্যাপার না?
ছুটিতে এবার গিয়েছিলাম মালয়েশিয়ার পেনাং আর লাংকাউয়ীতে। লাংকাউয়ীতে এর আগে গেলেও পেনাং-এ এই প্রথম। কুয়ালালামপুর থেকে উড়াল পথে এক ঘন্টা মাত্র। পেনাং-এর আদি অংশ, যেখানে প্রথম ইংরেজরা বসতি স্থাপন করেছিল, তার নাম 'জর্জ টাউন', যেটি এখন ‘ইউনেস্কো হেরিটেজ এলাকা’ হিসেবে ঘোষিত। জর্জ টাউনের এক কোণাতেই সমুদ্রের ঠিক কিনারেই দাঁড়িয়ে আছে প্রায় দেড়শ’ বছরের পুরানো এই দূর্গখানা। তৈরীর পর যদিও কখনই দূর্গটিকে মারাত্মক কোন যুদ্ধে জড়াতে হয়নি, তবে ইংরেজদের স্ট্রাটেজিক পয়েন্ট হিসেবে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ন ছিল।
দূর্গে ফ্রান্সিস লাইটের একখানা পাথুরে মূর্তি আছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে মূর্তিটি কিন্তু আসলে ফ্রান্সিস লাইটের চেহারা অনুযায়ী তৈরী হয়নি; বরং এটি তৈরী হয়েছিল তাঁর ছেলে 'উইলিয়াম লাইট' এর আদলে, কারণ ১৭৯৪ সালে পেনাং-এ থাকতেই ম্যালেরিয়াতে মারা যাওয়া ফ্রান্সিস লাইটের কোনোও ছবি কারোও কাছে ছিল না। আরোও মজার ব্যাপার হলো ফ্রান্সিসের ছেলে এই 'উইলিয়াম' কিন্তু আবার সার্ভেয়ার জেনারেল হিসেবে অস্ট্রেলিয়া গিয়ে বাপের মতোই নতুন এক শহরের পত্তন করেন- সেই শহরের নাম 'এ্যাডিলেইড (Adelaide)' । বাপ-কা-বেটা যাকে বলে!
আধুনিক কালে চমৎকার পুন:সংস্কারের পর এখন ফোর্ট কর্ণওয়ালিসে দেখার জন্য আছে বেশ কতগুলো ছোট-বড় সারি সারি কামান, ব্যারাক, পরিখা, গোলাবারুদের রুম আর সমুদ্রের গভীর থেকে একা একাই উঠে আসা অলৌকিক শক্তিসম্পন্ন ৪০০ বছরের পুরানো এক বিশাল কামান। সে কামানের গল্প আরেক দিন করব।
আমার মতো যদি ঘুরে বেড়ানো আর ইতিহাসের পোকা মাথায় থাকে, তবে পেনাং গিয়ে এখানকার বিখ্যাত মজার মজার খাবার খেতে খেতে ফোর্ট কর্ণওয়ালিসে একবার ঢুঁ মেরে আসতে ভুলবেন না । আর ময়লা-আবর্জনা নিজ দায়িত্বে বুঝেশুনে ফেলবেন। উল্টাপাল্টা জায়গায় ফেললে নিজে গালি তো খাবেনই, সাথে নিজের দেশটাকেও গালি খাওয়াবেন, সন্দেহ নেই।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন