ডা. মাহিন্দার ওয়াতসা: যৌনশিক্ষাকে সাধারণ মানুষের দুয়ারে নিয়ে গিয়েছিলেন যে 'সেক্সপার্ট'!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
যখন থেকে তিনি ভারতের মানুষকে যৌন শিক্ষায় শিক্ষিত করাত জন্যে উদ্যোগ নেয়া শুরু করলেন, তখন থেকেই তাকে ডাকা হতো অশালীন, নোংরা, পর্ন ব্যবসায়ী... এসব নামে। তবে সবকিছুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তিনি মানুষকে সাহায্য করে গিয়েছেন নিজের সাধ্যমত। হয়েছেন ভারতের জনপ্রিয় সেক্স এক্সপার্ট!
উপমহাদেশে একটা জিনিস খেয়াল করলে খুব অদ্ভুত লাগে, এখানে 'যথাযথ যৌন শিক্ষা'কে ট্যাবু করে রাখা হয়েছে, কিন্তু 'যৌন সুড়সুড়ি'কে করা হচ্ছে প্রমোট। এ কারণে যেটা হচ্ছে, উপমহাদেশের একটা বিরাট সংখ্যার মানুষ 'সেক্সুয়ালি ফ্রাস্ট্রেটেড' হয়ে জীবনযাপন করছে। বিষয়টা হয়ে গিয়েছে এমন এক প্যান্ডোরার বক্স, আপনি যদি এখন কাউকে যৌন শিক্ষা নিয়ে সঠিক তথ্য দিতে চান, আপনাকে দুশ্চরিত্র, বেয়াদব, ধর্মবিরোধী... নানারকম ট্যাগে অলঙ্কৃত করা হবে। তবুও কিছু মানুষ তো থাকেননই, যারা এসব বিদ্রুপ, উপহাস, তথাকথিত 'ট্যাগ' এর ভয়ে ভীত না হয়ে কাজ করে যান। তেমনই একজন ছিলেন ভারতের যৌন বিশেষজ্ঞ ড. মাহিন্দার ওয়াতসা। যিনি প্রয়াত হয়েছেন সম্প্রতি।
ভারতের একজন জনপ্রিয় সেক্সপার্ট (সেক্সুয়াল এডুকেশনে এক্সপার্ট) ছিলেন তিনি। ভারতের বহুল প্রচারিত দৈনিক 'দ্য মিরর' পত্রিকায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে 'আক্স দ্য সেক্সপার্ট' কলামে তিনি লিখতেন এবং দর্শকদের বিচিত্র, বিভিন্ন, অজস্র প্রশ্নের উত্তর দিতেন৷ খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তার এই বিশেষ কলাম জনপ্রিয় হয়ে যায়। মানুষের প্রশ্নের সাপেক্ষে তিনি চেষ্টা করতেন যতটা সম্ভব পরিষ্কার উত্তর দেবার। এবং উত্তরগুলো দিতেনও হিউমার মিশিয়ে। তাই জনপ্রিয়তা পেতে খুব সময় লাগেনি তার।
তবে মানুষের প্রশংসার পাশাপাশি বিস্তর বদনামও পেতেন তিনি। ঐ যে একটু আগেই বললাম, এই উপমহাদেশে সেক্স এডুকেশন নিয়ে কথা বলবে আর গালি খাবে না, তাও কী হয়? অনেকেই তাকে অশালীন, নোংরা, বদমাশ... নানারকম কথা বলতো। ড. ওয়াতসা মুচকি হাসতেন আর নিজের মতই কাজ করে যেতেন।
মুম্বাইয়ের একটি মেডিকেল কলেজে পড়ার সময়েই ড. ওয়াতসা বুঝতে পারেন, এ দেশের মানুষজন যৌন শিক্ষা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা রাখেনা। স্পষ্ট ধারণা না রাখার ফলে যেটা হচ্ছে, সামাজিক অবক্ষয় তো বাড়ছেই, নানারকম যৌন রোগও বাড়ছে। তিনি ভাবলেন, চিকিৎসাবিজ্ঞানের এই জায়গা নিয়ে কাজ করা যায়। সেটা ভেবেই ধাত্রীবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন৷ পড়াশোনা শেষে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে ডাক্তারিও করেন অনেকদিন।
এরপর তিনি ভারতের মানুষকে যৌন শিক্ষায় সচেতন করার জন্যে এফপিআই (পরিবার পরিকল্পনা সমিতি)র সাথে বেশ কিছুকাল কাজ করেন। পরবর্তীতে তিনি নিজেই এ সংক্রান্ত এক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। নাম- কাউন্সিল অব সেক্স এডুকেশন এন্ড প্যারেন্টহুড ইন্টারন্যাশনাল। এই কাউন্সিলের অধীনে কর্মীরা মানুষজনকে যৌন রোগ ও সুস্থ যৌন আচরণ বিষয়ে ধারনা দিতেন৷ সেসময়েও ড. ওয়াতসা কে নিয়ে সমালোচনা হয়েছিলো। বলা হচ্ছিলো- তিনি নাকি পর্নোগ্রাফিকে প্রমোট করছেন। নিন্দার ঝড় উঠেছিলো তখনও।
তবে তিনি তার মতই কাজ করে গিয়েছেন। ভারতে প্রথমবারের মতন যৌন-শিক্ষা, উপদেশ ও চিকিৎসার জন্যে সেন্টার প্রতিষ্ঠা হয় ড. ওয়াতসার ঐকান্তিক শ্রমেই। এবং ছিয়ানব্বই বছরে তিনি যখন মারা গিয়েছেন, ভারতের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর এক বড়সড় অংশই তার প্রশংসায় মুখর। এতদিন ধরে নিরলস শ্রমের ফলে তিনি অনেক মানুষকেই বোঝাতে পেরেছেন সুস্থ যৌনশিক্ষার গুরুত্ব। তার সার্থকতা সেখানেই।
জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নয়ন ও তথ্যের অবাধ সম্প্রসারণের ফলে মানুষ আজকাল আগের চেয়ে অনেক বেশি জ্ঞান রাখে। তবুও অবাক বিস্ময়ে খেয়াল করি, 'যৌনশিক্ষা'কে মানুষ এখনও দেখে অচ্ছ্যুত, অস্পৃশ্য একটি বিষয় হিসেবে। এতে করে যেটা হয়, আকাশচুম্বী আগ্রহ আর কালিগোলা অস্পষ্টতা নিয়ে তাদের কাটাতে হয় সময়। যার ফলশ্রুতিতে হয় নানাবিধ অনাচারও। অন্ধকার দূর করতে ড. ওয়াতসার মত মানুষ আসেন, তাদেরকেও শুনতে হয় নানারকম অশ্রাব্য বচন। এভাবেই চলছে। হয়তো সামনেও এভাবেই চলবে। অস্পষ্টতা, কুসংস্কারাচ্ছন্নতা আর মূর্খতা নিয়ে এগোবে সমাজ।
ছবি ও তথ্যসূত্রঃ বিবিসি বাংলা
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন