একটি শিশু, একজন রিকশাওয়ালা ও নিষ্পাপ ভালোবাসার গল্প!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
আমরা এমন এক মানসিকতা তৈরি করেছি যেখানে, অযথা গম্ভীর ভাব করে থাকাটা ব্যক্তিত্ব হিসেবে ধরে নেয়া হয়। আর বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করলে সে মানুষটা হয়ে যায় বেহায়া। ব্যস্ত জীবনে, একটু থেমে বুক ভরে শ্বাস নেয়ার মতো ভালোলাগার মুহূর্ত তৈরি করে নেয়াটা আমাদের দরকার, নিজেদের প্রয়োজনেই।
‘আজকে জ্যামে বসে থাকতে থাকতে আমার চাচাতো বোনের ১১ মাসের ছেলে নাহয়ান বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলো। পরে আমি না পেরে জানালা অর্ধেক খুলে দেই। সে খুব খুশি হয়, একটু করে মাথা আগায় আর মজা করে। নাহয়ান অপরিচিত হলেও প্রায় সবার দিকেই তাকিয়ে এমন হাসি দেয় যে অন্যপক্ষ ওর সাথে না হেসে, কথা না বলে থাকতে পারবে না (মাশাআল্লাহ)। মূহুর্তেই সে পাশের রিকশাওয়ালা মামার সাথে হাসাহাসি, খেলা শুরু করলো।
মামাও যখন বুঝতে পেরেছে আমি মাইন্ড করছিনা তখন স্বত্বস্ফুর্ত ভাবে খুব আদর করে কথা বলছিলো এবং আঙ্গুল দিয়ে পয়েন্ট করে, হাই ফাইভ, হ্যান্ড শেক করে খেলছিলো। অনেকক্ষন যাবৎ তাদের ভাব আদান প্রদান চলে। সিগন্যাল যখন ছাড়বে রিকশাওয়ালা মামা নাহয়ানের হাতে নতুন ১০ টাকার একটা নোট দেয় এবং বলে মজা খাবে এইটা দিয়ে। আমরা সবাই অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছি কিন্তু তার চোখ মুখের আনন্দ দেখে আর না করতে পারিনি। শুধু দোয়া চেয়েছি তার কাছে। আর মন থেকে দোয়া করি তার পরিবার যেন এক বেলাও অনাহারে না থাকে কোনোদিন। অনেক বিত্তবানের মনও এতো বড় হতে দেখা যায় না। উনি অল্প সময়ে যে ভালবাসা দেখিয়েছেন তা যথার্থই প্রশংসনীয়’।
সম্প্রতি ফেসবুক ব্যবহারকারী সাবিকুন নাহার কিছু ছবিসহ এই ক্যাপশনে একটি পোস্ট দেন। যা পরবর্তীতে সামাজিক গণমাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়েছে। সবচেয়ে ভালো লেগেছে সম্পূর্ণ ঘটনার সরলতা, একজন অর্থাভাবে থাকা মানুষের অর্থবহ আচরণ এবং শিশুটির অভিবাবকদের উদারতা। বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা আসলেই বিরল।
আমরা এমন এক অর্থহীন সামাজিকতায় বসবাস করছি যেখানে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে খোঁড়াখুঁড়ি দেখার জন্য মানুষের কাছে অফুরন্ত সময় রয়েছে। আশেপাশের কারো সাথে ভালো ব্যবহার তো দূর; কেউ বিপদে পরলে, ধর্ষিত হলে, এমনকি মরে গেলেও এগিয়ে আসার মানসিকতা আমাদের নেই। আমরা এমন এক মানসিকতা তৈরি করেছি যেখানে, অযথা গম্ভীর ভাব করে থাকাটা ব্যক্তিত্ব হিসেবে ধরে নেয়া হয়। আর বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করলে সেটা হয়ে যায় বেহায়াপনা।
একটা সময়ে আমাদের দেশে অপরিচিত মানুষকে সালাম দেয়ার রীতি ছিলো। অপরিচিত মানুষদের হাসিমুখে কথা বলার মানসিকতাও আমরা হারাতে বসেছি এখন। আমাদের প্রতিবেশীদের খোঁজ এখন আমরা রাখি না। কারো প্রতি একটু সহমর্মিতা দেখানোর সময় এই যান্ত্রিক সমাজে নেই। অথবা, কেউ যদি এগিয়ে এসে সহমর্মিতা দেখাতে চায় তাকে আমরা ধান্ধাবাজ মনে করি। কেউ সেধে এসে কথা বললে ভদ্রভাবে তার জবাব দেয়াটা রকেট সায়েন্সের মতো কঠিন কোনো বিষয় না। শুধু দরকার একটু উদার মানসিকতা।
ফিরছি ঘটনা প্রসঙ্গে, একটি সাধারণ ঘটনাও হয়ে উঠতে পারে অসাধারণ কারণ আমাদের মাঝে সে সাধারণেরই আকাল। আমরা হয়তো খুব ট্রেন্ডি হচ্ছি, ক্লাসি হচ্ছি তবুও দিনকে দিন সংকোচিত হয়ে উঠছি। নিসংকোচ চিত্তে বেঁচে থাকার ইচ্ছে বা আকাঙ্ক্ষা নেই বলেই হয়তো এমন ঘটনা ঘটতে দেখলে আমরা খুব অবাক হই। ব্যস্ত জীবনে, একটু থেমে বুক ভরে শ্বাস নেয়ার মতো এমন ভালোলাগার মুহূর্ত তৈরি করে নেয়াটা আমাদের দরকার, নিজেদের প্রয়োজনেই।