বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এগুলো লক্কর-ঝক্কর হলেও, মাঝে মাঝে দুই একটা চকচকে নতুন বাস দেখা যায়। এরকমই এক লক্কর ঝক্কর বাসে আমি চড়ে বসলাম, গন্তব্য ধানমন্ডি থেকে ধোলাইখাল। জ্যাম ঠেলে এগুচ্ছি, আর বিচিত্র সব মানুষ দেখছি বাসে উঠছে আর নামছে!

সুমাইয়া জাহান: ঢাকার রাস্তায় নামলেই প্রথমে যেটা চোখে পড়বে, সেটা হলো রংবেরঙের পাবলিক বাস। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এগুলো লক্কর-ঝক্কর হলেও, মাঝে মাঝে দুই একটা চকচকে নতুন বাস দেখা যায়। এরকমই এক লক্কর ঝক্কর বাসে আমি চড়ে বসলাম, গন্তব্য ধানমন্ডি থেকে ধোলাইখাল। জ্যাম ঠেলে এগুচ্ছি, আর বিচিত্র সব মানুষ দেখছি বাসে উঠছে আর নামছে! মোটামুটিভাবে যাত্রীদের নিম্নোক্ত ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যেতে পারে-  

চিটিংবাজ

এই গোষ্ঠীর যাত্রীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সাধারণত পাবলিক বাসে সবাই নিজেদের 'ইস্টুডেন্ট' (ছাত্র) বলে চালিয়ে দেবার চেষ্টা করে। এর পেছনে কারণ- ছাত্রদের অর্ধেক ভাড়ায় যাতায়াত সুবিধা। আমার পিঠে ব্যাগপ্যাক থাকায় আমিও নিজেকে 'ইস্টুডেন্ট' পরিচয় দিলাম। বাসের হেলপার অবিশ্বাসের চোখে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে অর্ধেক ভাড়া নিয়ে চলে গেল। (ইয়ে মানে, আমি চিটিংবাজ না...)

ঘুমন্ত পথিক

এদের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। আপনি যখনি বাসে চড়ে বসবেন, তখনি দেখবেন কমপক্ষে ২/৩ জন ঘুমুচ্ছে। এদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশি হলেও, নারীর সংখ্যাও আজকাল বাড়ছে| তারা বাসে চড়েই ঘুমিয়ে পড়ে এবং মোটামোটি পুরো রাস্তা ঘুমিয়েই পার করে। শুধু তাই নই, কেউ কেউ ঘুমের মধ্যে পাশের যাত্রীর গায়ে হেলে পড়ছে, গড়িয়ে পড়ছে অথবা কুৎসিতভাবে নাক ডাকছে! এরা সাধারণত বাসে উঠে হেল্পারকে ডেকে আগেভাগেই ভাড়া মিটিয়ে দেয় এবং বলে 'অমুক জায়গায় গিয়ে ডেকে দিও'.. বলেই ঘুম!

লোকাল বাসে রঙ্গ 

ঝগড়াটে যুবসমাজ

'তুই আমাকে চিনিস?' বলেই তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরীহ বাসহেল্পারের উপর! বাস হেল্পারের দোষ খুব গুরুতর কিছু না - 'হাফ পাস্ নাই' বলাতেই এই ঘটনা ঘটে যায়। এই যুবসমাজ কখনই ন্যায্য ভাড়া দেয় না, এবং যাত্রাপথে আধিপত্য বিস্তারের সকল প্রচেষ্টায় তারা মগ্ন থাকে এবং এদের কিছু বললেই 'তুই আমাকে চিনিস.. ওই হেলপার ওই..' বলে তেড়ে আসে। এদের একদল আবার নির্লজ্জের মতো মহিলা সিট দখল করে বসে থাকে, এবং কোনো মেয়ে যদি তাদের সিট ছাড়তে বলে তাহলে তারা গাধার যুক্তি দেয় "মহিলারা যে পুরুষ সিটে বসে, সেটা কিছু না?"

স্মার্টফোন জনগণ

এই দলের মানুষের জীবন স্মার্টফোনে সীমাবদ্ধ। তারা বাসে বসে ফেসবুকে চেকইন দেয়। বাসে যেসব ফেরিওয়ালা তিলের খাজা, ভাজা বাদাম, শিশুদের বই, মানিব্যাগ কিংবা অন্যান্য (বুদ্ধিমান পাঠক বুঝে নিন) পণ্য বিক্রির চেষ্টা করে, সেগুলো খুব আগ্রহ নিয়ে দেখে, ছবি তুলে এবং ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে। এই দলের একজন আমিও! কারো ছেঁড়া জুতোর মধ্যে এতো আর্ট আছে সেটা বাসে না চড়লে হয়তো কখনই জানতাম না। এই গ্রুপের সঙ্গেই আছে আরেক উচ্চমর্গীয় জনগণ, যারা উচ্চস্বরে বার্তালাপ করে। এদের ক্রমাগত ফোন আসতেই থাকে এবং তারা এত উচ্চস্বরে কথা বলে যে আশেপাশের সবাই মহাবিরক্ত! ভাগ্য খারাপ হলে ফোনের অন্য প্রান্তে থাকা মানুষের কণ্ঠও শোনা হয়.. স্পিকারের কারণে!

প্রেমিক/টাঙ্কিবাজ যাত্রী

বাসে চেপেই দেখবেন কোনো এক কোনায় একটি প্রেমিক যুগল হাতে হাত ধরে বসে আছে অথবা দেখবেন বাসের দুই প্রান্তে থাকা দুইজন তরুণ তরুণী চোখে চোখে কথা বলছে। সেই কথার ভাষা না থাকলেও, ঘটনা আপনি ধরে ফেলবেন। এরা সময় পার করার চেষ্টা করছে.. জ্যামে বসে কিছু একটা করতে হবে তো! ... 

এছাড়াও খাদক যাত্রী, গন্ধ যাত্রী (যার গা দিয়ে ভয়ঙ্কর দুর্গন্ধ আসে), গায়ে পড়ে বন্ধুত্ব করতে আসা যাত্রী, প্রশ্ন যাত্রী (সমানে পাশের জনকে প্রশ্ন করছে) এবং নিরীহ যাত্রী আছে (এরা সাতেও নেই, পাঁচেও নেই)।

পাঠক, আপনি কোন ক্যাটাগরিতে পড়ছেন?


ট্যাগঃ

শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা